• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

মসনদ : যে গল্পের শেষ নেই


আরাফাত শান্ত
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩, ০১:১৯ পিএম
মসনদ : যে গল্পের শেষ নেই

কাল্পনিক ‘গেম অফ থ্রোন্স’ বলেন কিংবা বাস্তবের ‘ভাইকিংস’দের আলাপ তোলেন, সব গল্পই মূলত ক্ষমতায় আসা ও বিশ্বাসঘাতকতার। প্রাচীনকাল থেকে এসব চলছেই। কেউ হেরে যান, কেউ জিতে যান, কেউ লড়াইয়ে থেকে যান; কেউবা মত্ত থাকেন ভোগ বিলাসে। ইতিহাসকে গল্পের ছলে বলা ও দেখা নতুন কিছু নয়, সেই ধারাতেই মোস্তাক শরীফ এবারের বই মেলায় নিয়ে এসেছেন সম্রাট শাহজাহান ও তার চার পুত্রের জীবন নিয়ে উপন্যাস ‘মসনদ’।

সম্রাট শাহজাহান আমাদের মনে গেঁথে আছেন তাজমহলের কারণে। বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট থাকার সময় এক সফরে এসে বলেছিলেন, দুনিয়ায় মানুষকে দুইভাগে ভাগ করা যায়—যারা তাজমহল দেখেছে, আর যারা দেখেনি। এর বাইরে সম্রাট শাহজাহান একটা আগ্রহ উদ্দীপক চরিত্র। নিজের বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। ক্ষমতায় বসতে পারে এমন ভাই ও ভাইয়ের সন্তানদের হত্যা করেছেন অবলীলায়। রাজধানী আগ্রা থেকে দিল্লীতে এনেছিলেন। স্থাপত্য শৈলীতে ভরা ভবন ও দুর্গ নির্মাণও ছিল যার একটা নেশা। তার ছেলেমেয়েরাও ছিলেন অদ্ভুত। কারো নেশা ছিল পড়াশোনা ও সুফিবাদে, কেউ ছিলেন আরাম আয়েশের জীবনে, আবার কেউ ছিলেন কট্টর সুন্নি মুসলিম। এই উপন্যাসটি শাহজাহানের রাজত্বকাল ও তার সন্তানদের জীবন ও সিংহাসনের জন্য লড়াই নিয়েই বিধৃত হয়েছে।

মোস্তাক শরীফ এর আগে সম্রাট জাহাঙ্গীরের জীবনী নিয়ে গত বছর বের করেছিলেন, ‘আলমপানাহ’। অত্যন্ত সুপাঠ্য ও বিস্তৃত একটা গ্রন্থ। এ বছরে এলো ‘মসনদ’। মোস্তাক শরীফের এসব ডকুফিকশন টাইপের উপন্যাসের বিশেষত্ব হলো, মনে হবে সহজ করে লেখা ইতিহাস নির্ভর গ্রন্থ, কিন্তু এর পেছনে যে অমানসিক শ্রম আছে তা ভাবাবে না। তিনি অসংখ্য বই পড়ে এ প্রামাণ্য গ্রন্থটি নির্মাণ করেছেন। স্যার যদুনাথ সরকার থেকে এবা কক—কত রকমের বই তিনি পড়েছেন। তবে লেখায় তিনি তথ্যের মুন্সীয়ানা দেখাতে চাননি। ধীরে ধীরে সামাজিক উপন্যাসের মতো করে বুনেছেন কাহিনীর ঘনঘটা। মনসুর আলী থেকে জাহানারা হয়ে আওরঙ্গজেব সবার চরিত্রকেই দিয়েছেন একটা ‘ধুসর’ ছাপ। যে খারাপ সে হয়তো কখনো ভালো, আবার যে ভালো সেও হয়তো কখনো স্বার্থপর।

মানুষের ভালো লাগে রাজা বাদশাহর গল্প। ইতিহাসে থাকে শুধু সাফল্য ব্যর্থতার বয়ান। কিন্তু এসব বইতে থাকে তাদের জীবন যাপন ও চিন্তা পদ্ধতি। থাকে জন্মস্থান থেকে অনেক দূরে কোনো রাজ্যজয়ের যে মোটিভেশন ও বিদ্রোহীদের দমন করার নির্মমতাও। মোঘল সাম্রাজ্যে নানান ধরণের কূটনীতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয় ছিল, স্তাবকে ঠাঁসা একেকজন বাদশাহ নিজেকেই সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও ক্ষমতাশালী ভাবতেন। এসব মোহ ভেঙে যেত বিশ্বাসঘাতকতা ও ক্ষমতায় হেরে যাওয়ার পর।

আমি শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের রচিত ও পশ্চিমবঙ্গ আকাদেমি সাহিত্য পুরষ্কার পাওয়া উপন্যাস, ‘শাহাজাদা দারাশুকো’ পড়ে যতটা আনন্দ পেয়েছি, মোস্তাক শরীফের ‘মসনদ’ পড়ে তার চেয়ে পড়ে কম আনন্দ পাইনি। দুটো দুধরণের লেখা। মোস্তাক শরীফের বইটা পড়ে মজা পাবে সর্বজন পাঠকেরাই। কারণ তিনি উপন্যাসটি লিখেছেন সাবলীল গদ্যে ও অকপট ভাবে। পুরোনো দিনের আলাপ করতে গিয়ে ব্যাপারটাকে দুর্বোধ্য করেননি মোটেও।

বইয়ের নাম : মসনদ
প্রকাশক : অন্বেষা
লেখক : মোস্তাক শরীফ
মূল্য : ৬০০ টাকা

Link copied!