• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫
করা হবে শোকজ

অভিযুক্ত মন্ত্রী-এমপিদের তালিকা তৈরি


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ০৯:৫৭ পিএম
অভিযুক্ত মন্ত্রী-এমপিদের তালিকা তৈরি
আওয়ামী লীগের লোগো। ছবি : সংবাদ প্রকাশ গ্রাফিক্স

উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে স্বজনদের প্রার্থী করানো মন্ত্রী ও দলীয় সংসদ সদস্যদের (এমপি) তালিকা তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। অভিযুক্ত মন্ত্রী এবং দলীয় এমপিকে শোকজ করা হতে পারে। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হবে। সেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তির পাশাপাশি দলীয় পদ-পদবি কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক নেতা।

গুরুত্বপূর্ণ সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছেন সারা দেশের নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে দলীয়প্রধান পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করা হবে না। সেই সঙ্গে মন্ত্রী ও দলীয় এমপিদের স্বজনরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। শেষ অবধি অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপিই নির্দেশনা না মেনে আত্মীয় স্বজনদের প্রার্থী করেছেন। কেউ কেউ নিজস্ব প্রার্থী দিয়েছেন আধিপত্য রক্ষার জন্য। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাধিকবার সতর্ক করলেও আমলে নেননি মন্ত্রী-এমপিরা। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

দায়িত্বশীল সূত্রমতে, উপজেলা নির্বাচনে দলের কঠোর অবস্থান থাকবে। যেসব মন্ত্রী এমপি দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বজনদের প্রার্থী করেছেন তাদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বহিষ্কার বা চূড়ান্ত শাস্তির বদলে প্রথম দফায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হতে পারে। সেই সঙ্গে যেসব স্বজন প্রার্থী হয়েছেন তাদের কমিটি পুনর্গঠন করা হতে পারে। অভিযুক্তদের কপালে আগামীর জন্য দুঃসংবাদ আসতে পারে।

দলীয় সূত্রমতে, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ অমান্যকারীদের তালিকা ইতোমধ্যে করে ফেলেছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা। যে তালিকা দলীয় প্রধানের কাছে জমা দেওয়া হবে। অভিযুক্ত মন্ত্রী, এমপি ও প্রার্থীদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও তুলে ধরা হবে। যা সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।

অভিযুক্ত মন্ত্রী, এমপি ও তাদের স্বজন প্রার্থীদের নাম ইতোমধ্যে নানাভাবে আলোচনায় এসেছে। এদের মধ্যে শুধু ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক ও সিংড়ার চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। অন্যরা এখনো প্রার্থিতা নিয়ে অনড় রয়েছেন।

সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনে এখনো চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী, সফিকুল ইসলাম ও ভাতিজা আলী আফসার রানা, নীলফামারীর ডিমলায় আফতাব উদ্দিন সরকার এমপির চাচাতো ভাই আনোয়ারুল হক সরকার ও ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজ, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল, সোনাতলায় এমপির ভাই মিনহাদুজ্জামান লিটন।

এছাড়া পাবনার বেড়ায় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ভাই আবদুল বাতেন ও ভাতিজা আবুল কালাম সবুজ, কুষ্টিয়া সদরে মাহবুবউল-আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় আলী আজগর টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর বাবু, পিরোজপুরের নাজিরপুরে শ ম রেজাউল করিম এমপির ভাই এস এম নুর ই আলম সিদ্দিকী, মাদারীপুর সদরে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান ও চাচাতো ভাই পাভেলুর রহমান শফিক খান।

আরও আছেন নরসিংদীর পলাশে ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপির ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী ও কক্সবাজারের মহেশখালীতে আশেক উল্লাহ রফিক এমপির চাচাতো ভাইয়ের ছেলে হাবিব উল্লাহ।

অন্যদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ভাতিজা আমিরুল ইসলাম, লাকসামে মন্ত্রীর শ্যালক মহব্বত আলী এবং বরিশালের বাকেরগঞ্জে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক এমপির ভাই সালাম মল্লিক।

এসব তথ্য বিবেচনায় রেখেই অভিযুক্ত মন্ত্রী ও দলীয় এমপিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা নির্বাচনে যেসব মন্ত্রী ও এমপির স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের তালিকাও চূড়ান্ত করেছেন দলের আট সাংগঠনিক সম্পাদক।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, “দলীয় সভাপতির নির্দেশ যারা মানছেন না, তাদের বিষয়ে দলের কার্যনির্বাহী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন।”

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম জানান, মন্ত্রী ও দলের এমপির স্বজনের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “অভিযুক্ত মন্ত্রী এবং দলীয় এমপিকে শোকজ করা হতে পারে। এ ছাড়া মন্ত্রী-এমপিরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকেও নানাভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।”

একই কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজ্জাম্মেল হক ও এস এম কামাল হোসেনও।

এবার চার ধাপে দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫টিতে ভোট হবে। পরে মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সেগুলোতে ভোটের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৮ মে থেকে শুরু হবে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন।

Link copied!