• ঢাকা
  • সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ৪ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পুরস্কারের জন্য কখনোই বই জমা দেওয়া উচিত নয়


সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম
পুরস্কারের জন্য কখনোই বই জমা দেওয়া উচিত নয়
প্রতীকী ছবি

একটি প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালে সাহিত্য পুরস্কার দেওয়ার জন্য ‘কবিতা’ শাখায় নাকি মানসম্মত বই পায়নি। এমনটিই তাদের ভাষ্য। শুনে আমার একটু অবাক লাগলো। কেননা ২০২৩ সালের বইমেলায় এমন কিছু কবিকে দেখেছি, যাদের কবিতার বই ব্যাপক বিক্রি হয়েছে। পত্রিকায় সাহিত্য সম্পাদনা করতে গিয়ে ২০২৩ সালের অনেক কাব্যগ্রন্থের রিভিউ ছেপেছি। সবগুলোই তো প্রশংসায় ভরপুর ছিল। বেস্ট সেলার হয়েছে কোনো কোনোটি। তাহলে মানসম্মত বই পাওয়া গেল না কেন?

এর জন্য তাহলে বেশকিছু কারণ থাকতে পারে। হয়তো মানসম্মত কোনো কবি তার বইটি সাহিত্য পুরস্কারের জন্য জমা দেননি। কবির হয়তো নিজের বইকে সাহিত্য পুরস্কারের ঊর্ধ্বে ভেবেছেন। আবার এমনও হতে পারে, যারা জমা দিয়েছেন, তাদের কবিতার ভার পুরস্কার কমিটির বিচারকগণ নিতে পারেননি। আমার জানামতে, ২০২৩  সালে এমনও অনেকে জমা দিয়েছিলেন, তারা পুরস্কার পাওয়ার মতো বটে।

এমনটা আগেও হয়েছে। আয়োজকরা মানসম্মত বই পান না। আবার কাউকে পুরস্কার দিয়ে ফেরতও নেন। তাহলে এখন বলবো, পুরস্কারটি বন্ধ করে দেওয়ার সময় এসে গেছে। জোর করে আর দেওয়ার দরকার নেই। তারা তরুণদের পুরস্কার দেয়। যাদের বয়স চল্লিশের নিচে। সেই হিসেবে আমিও বই জমা দিতে পারি। কিন্তু জোরালোভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি পুরস্কার নেওয়ার জন্য কোথাও বই জমা দেব না। কেউ যোগ্য মনে করে পুরস্কার দিতে চাইলে গ্রহণ করবো। কেননা আয়োজকরা যাকে পুরস্কার দেবেন, তা নাকি আগেই ঠিক করে রাখেন। শুধু কিছু বই জমা নিয়ে প্রতিযোগী বাড়ান।

আবার এমনও শুনেছি, অনেকেই বলেন কোনো বিচারক বই পড়ে বলে মনে হয় না। তাদের এত বই পড়ার সময় কোথায়? তাই বইয়ের কভারে পরিচিত কারো নাম দেখলেই নম্বর দিয়ে দেন। যে কারণে বিভিন্ন সময়ে দেখেছি, শিশুসাহিত্যিক পুরস্কার পান গল্পে, জীবনীকার পুরস্কার পান উপন্যাসে, কবি পুরস্কার পান প্রবন্ধে, নাট্যকার পুরস্কার পান কবিতায়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে পুরস্কার প্রদান কমিটির সুযোগ-সুবিধাই এখন নাকি বিবেচ্য। তারা নিজেদের সন্তান, আত্মীয়, বন্ধু, সহপাঠীদের সন্তানদের মনোনীত করেন। সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে নিজের স্বার্থ হাসিল করেন।

এছাড়া কখনো কখনো অমুক শাখায় মানসম্মত বই পাওয়া যায়নি বলে প্রচার করেন। কিংবা নির্ধারিত সময়ে বই না পেয়ে সময় বর্ধিত করে কাছের লোকজন থেকে বই নিয়ে কৃতিত্ব জাহির করেন। কখনো আবার বিচারকদের দেওয়া নম্বর তোয়াক্কা না করে নিজেদের পছন্দে পুরস্কার দেওয়া হয়। কেউ কেউ অর্থমূল্য ঘোষণা করে অর্থ আর দেন না। শুধু প্রতীকী চেক হাতে তুলে দেন।

যদি এমনটিই চলতে থাকে, তাহলে একসময় বাংলাদেশের পুরস্কারগুলো গুণগত মান হারাবে। বই জমা দিতে সবাই আগ্রহ হারাবে। যদি কবি-লেখকরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন, তারা আর কখনোই পুরস্কারের জন্য বই জমা দেবেন না। তাহলে আয়োজকরা বিপাকে পড়বেন। ডেকে এনেও পুরস্কার দেওয়ার লোক পাবেন না। কিন্তু এমনটি কখনো হবে বলে মনে হয়? এই বঙ্গদেশে হয়তো সম্ভব নয়। তারপরও আয়োজকদের উচিত হবে, বই জমা না নিয়ে সাহিত্যাঙ্গনে খোঁজ-খবর নিয়ে পুরস্কার দেওয়া। নিয়মিত কারা চর্চা করছেন, তাদের খুঁজে বের করা।

সবশেষে জানি, আমার কথা কেউ আমলে নেবেন না। তবুও মনে পড়লো তাই বলে রাখলাম। গরিবের কথা আবার বাসি হলে ফলে কি না। পুরস্কার হোক নিষ্কলুস। পুরস্কার হোক উদ্দীপনার হাতিয়ার। স্বচ্ছতা ও স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে প্রদান করা হোক। নিজের সম্মান নিজেই বজায় রাখুক।

Link copied!