• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
পেনসরি কিয়েন সিরি রচিত

শ্যামদেশের গল্প: ভাগ্য বদল


সাদাত উল্লাহ খান
প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৪, ০৩:২২ পিএম
শ্যামদেশের গল্প: ভাগ্য বদল

বৃষ্টি থেমে যাবে। এখনো ব্যাংককের আকাশ বিষণ্ণ ও জলপূর্ণ। আকাশের শরীরে কালো ও নীল দাগ এবং পচনশীল ফলের মতো জলকণায় পরিপূর্ণ। তখনো জলসিক্ত দিনের অবসান হয়নি।


ঘুমের চাদরে ধূসরতা শহরকে ঢেকে দিয়েছে। সিনাম নদীর তীরে, চক্রভাট অঞ্চলে, জাহাজসমূহ জেটিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত; জাহাজে রত্তনলতা ও টিনভর্তি শূকরের চর্বিবোঝাই থামানোর কিছুই নেই। সামনে-পেছনে, ট্রাক থেকে জাহাজে মজুরেরা অবসন্নভাবে হাঁটাহাঁটি করছে। বৃষ্টির পানি তখনো শুষ্ক পদার্থের স্বাভাবিক শক্তিতে চুয়ানো হয়নি। বৃষ্টি যেন ফ্যালফ্যাল করে দাঁত বের করে হাসি দিচ্ছে।
 

অধিকাংশ শ্যামদেশির মতো চালং ছিল ভাবনামুক্ত আর একজন মানুষ। সকাল ১১টা নাগাদ সিদ্ধান্ত নেয় সে এক দিনের সমপরিমাণ পর্যাপ্ত কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত করেছে। এর অতিরিক্ত পরিশ্রম সে করেনি। তার জেবে চল্লিশ টাকা জমা আছে, এটা নিয়ে ভাবে সে বিশ্রাম নিতে পারবে এবং দুনিয়ার এদিক-সেদিক খানিক তাকিয়ে দেখে। সে এক হাত জেবে ঢুকিয়ে দেয়, ২০ টাকার দুটা নোট একটার সঙ্গে আর একটা ঘষা দেয়। চক্রভাট সড়কের একদিকে সর্বশেষ জনপ্রিয় সুরের বাঁশি বাজিয়ে পায়চারি করে। চল্লিশ টাকা...২টা মার্কিন ডলার...তার সামনে সীমাহীন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।
 

সে একটা কফিখানায় গিয়ে এক কাপ কফি ও কয়েকটি ছোট ছোট বানরুটি খেয়ে খুশির জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দেবে। সে ভেবেছিল গরম কফি তাকে উষ্ণ করবে। এমনকি সে খেয়ালও করেনি যে তার হাফপ্যান্ট ছিল ভেজা এবং তার কাঁধের ওপর তার ছেদরভেদর জামা ছিল এলোমেলো। যাহোক, তার বিশাল পেশিবহুল শরীর ছোটবেলা থেকে আটাশ মৌসুম যাবৎ এর চেয়ে মুষলধারার বৃষ্টি দেখেছে। এটা তাকে কখনো কম জ্বালাতন করেনি। এখনই তেমন কিছু করার কোনো কারণ নেই।
 

কফিখানা দেখে সে দেখতে তরমুজের মতো তার বাদামি মুখ ফালি ফালি দাঁত বের করে হাসে। সে কফিখানার দিকে আড়াআড়ি যেতে শুরু করে। 
গাড়ির ব্রেকের তীব্র শব্দে সে লাফ দিয়ে ওঠে। 
‘তোমাকে কি প্ল্যাগরোগে খেয়েছে? তুমি কি বধির না অন্ধ?’
রাগে কণ্ঠস্বর ছিল উত্তপ্ত, আর অবজ্ঞায় শীতল। চালংয়ের চোখমুখ রাগে রক্তের মতো লাল হয়ে ওঠে। বিলাসবহুল উজ্জ্বল-সবুজ গাড়িতে বসা পরিপাটি ভদ্রলোকটার দিকে ক্রুদ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে। উচ্চশ্রেণির শ্যামদেশিরা তাদের ভদ্রতা ও মার্জিত কথাবার্তায় গর্ববোধ করে। চালং নামক মজুরটা তার দ্রুত উত্তেজনা ও তীক্ষ্ণ জবাবে আনন্দিত। সে অনর্গলভাবে গালিগালাজ করে।
‘আপনার ওপর ঠাঁডাল পড়ুক! আপনি কি মনে করেন একটা গাড়ির মালিক হয়ে পুরো রাস্তাই কিনে নিয়েছেন। আপনি কি মনে করছেন প্রবল বৃষ্টির সময় একজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজবে আর আপনি আরামে বসে আগেই চলে যাবেন? আপনি কি মনে করেন এভাবে চলে যাবেন?’
 

সজোরে গাড়ির দরজা বন্ধ করে। গাড়িচালক রাস্তায় চালংয়ের মুখের দিকে ক্রুদ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার বয়স ত্রিশের কোটায়। পরনে চমৎকার পোশাক, খাটো তবে একজন শক্তিশালী ধনিক ব্যক্তি যার একজন শ্রমিকের মতো পেশিশক্তির প্রয়োজন নেই। দুই ব্যক্তি শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ হাতে মুখোমুখি দাঁড়ায়। একঝাঁক টোকাই জলভর্তি ছোট ছোট গর্তে লাফালাফি করছে এবং আরও অধিকতর উত্তেজনাকর মারামারির সম্ভাবনায় বৃষ্টিস্নাত রাস্তায় পানি ছিটায়। তারা একটা বৃত্তাকারে দাঁড়ায়। তারা আশা করছে মজুরটি ধনাঢ্য গাড়িওয়ালাকে একটা উচিত শিক্ষা দেবে।
 

সীমিত উত্তেজনায় গাড়িওয়ালা বলেন, ‘বলতে থাকেন, কী যেন বলতে চেয়েছেন?’ নাইকম সুরাসাক-এর মতো একটা নাম নিয়ে অবজ্ঞা প্রকাশের তার সামর্থ্য রয়েছে, এই নামেই আশপাশে সম্পদ ও সম্মানের কথা উড়ে বেড়ায়; এতেই তিনি ক্রোধে থর থর করে কাঁপছেন যে তার সমৃদ্ধির এলাকায় এমন কোনো প্রাণী আছে যে তার গুরুত্ব স্বীকার করে না। জাহাজঘাটার এই কাকাতুয়ার মতো এই বস্তুর কথা বোঝাতে কোনো উল্লেখ করেনি।
 

লোকজন উত্তেজিত করার একধরনের প্রতিভা চালংয়ের ছিল। সবদিক বিবেচনায় এই মুহূর্তে সে তা কাজে লাগিয়েছে।
সে বলে, ‘আমি এসব পাত্তা দিই না।’
নাইকম চিৎকার করে বলে, ‘শয়তান তুমি কী বলতে চাও, তুমি কোনো পাত্তা দেবে না?’ সে হতভম্ব হয় এবং তার মুখের রং পাল্টে একেবারে বাদামি থেকে টকটকে লাল হয়ে যায়।
জবাবে চালং বলে, ‘তোমার মতো সামান্য বামুনকে পেটাতে আমি কোনো পরোয়া করি না।’
 

নাইকমের মুখ টকটকে লাল থেকে রক্তবর্ণে রূপান্তরিত হয়। উন্মত্ততায় সে তার চারপাশের সবকিছু বিস্মৃত হয়। সে ট্রাফিক আগলে দাঁড়ায়, মোটর গাড়ির পোঁ পোঁ শব্দ করা ট্রাফিক আলোর সামনে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িচালকরা অন্যমনস্ক হয়ে কী ঘটেছে দেখতে শুরু করে। জনপথে দাঁড়িয়ে একজন মজুরকে তিরস্কারপূর্ণ লম্বা-চওড়া কথা বলার প্রতি মুহূর্তে নাইকমের মানসম্মানের বলয় থেকে সোনা টুকরো টুকরো ঝরে পড়ে। ধুলোয় মিশে যায়। ইতোমধ্যে টোকাইরা উল্লসিত করতালি দিতে শুরু করেছে তার কর্মকাণ্ড দেখার আশায়। নাইকম মাথা নোয়ালেন। সে চালংয়ের চিবুক লক্ষ করে দ্রুত শরীর বাঁকিয়ে সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মজুরটি একটা উল্লুকের মতো ক্ষিপ্রগতিতে আঘাত এড়াতে মাথা নিচু করে এবং বনবিড়ালের মতো নাইকমের ওপর লাফিয়ে পড়ে। রাস্তার ছেলেমেয়েরা শোরগোল শুরু করে দেয়। ছেলেমেয়েদের একজন দৌড়ে নিকটতম একটি দোকানে যায় এবং কেরোসিনের একটা খালি টিন ছিনিয়ে আনে। সে তা নিয়ে কর্ণবিদারী ঢোল পেটাইতে থাকে। এর দেখাদেখি অন্যরাও তীব্র হইহল্লোড় করে। আর বলে চালাও। চালাও।
 

একজন পুলিশ এগিয়ে এসে তাদের তামাশা থামায় আর দেখতে পায় চালংয়ের মুখে রক্ত এবং নাইকমের চোখে কালো দাগ। তবে পুলিশটা মাথা নিচু করে নাইকমকে অভিবাদন জানায়, সে নাইকমকে আগে থেকেই জানত। নাইকম গাড়ি চালিয়ে চলে যায়, তার মুখের আঘাত ও মর্যাদা কিছুটা লাঘব হয়েছে। পুলিশটা তার শোাভনতা, শালীনতার সুন্দর চেতনার সঙ্গে নাইকমকে বারণ করেন বোকাটে বানরটার বিরুদ্ধে যেন বাড়তি কোনো পদক্ষেপ না নেয়।
 

চালংও পুলিশটাকে চিনত। তারা প্রায়ই পরস্পর হাসি বিনিময় করত তবে আগে কখনো কথা বলার প্রয়োজন পড়েনি। চালং, যখন সে কথা বলছিল, বিরক্ত ছিল।
চালং অসন্তোষের সঙ্গে বলে, ‘কী কারণে আপনি আমাকে বোকাটে বানর বলেছেন? তার অন্যায় আর আমার অন্যায় একই ধরনের। আমাদের নাম ধরে ডাকা এবং আদালতের সমন প্রদান করা উচিত, কাজটা কিছুটা সঠিকভাবে করুন।’
 

পুলিশটা উল্লসিতভাবে বলেন, ‘থামাও তোমার বকবকানি, নাইকমের প্রভাব-প্রতিপত্তির কোনো ধারণা আছে? তার এক ছোট ভাই চক্রভাট আদালতের ক্যাপটিন। তা ছাড়া আমার ছুটি হয়েছে এবং আমি ক্ষুধার্ত।’ এই বলে পুলিশটা চালংয়ের কাঁধে আস্তে একটা চাপ দেয় এবং দাঁত বের করে হাসি দিয়ে দেখায় তাতে কোনো খারাপ অনুভূতি ছিল না।
 

চালং বলে, ‘তাতে কি এটা বোঝায় না যে সে সঠিক ছিল? আপনার তাকেও গালি দেওয়া উচিত।’
পুলিশটা উল্লসিতভাবে দুই হাত আকাশে ছুড়ে দেয়। আর বলে, ‘তাকে কী বলে গালি দেব?’
শিশুদের একজন, যে খুব কাছ থেকে একখণ্ড প্রস্তরের ওপর বসে মজা করে মারামারিটা দেখতে চেয়েছিল, সে চিৎকার করে বলে, ‘তাকে বোকা হনুমান বলে গালি দেন!’
 

পুলিশটা অমায়িকভাবে বলেন, ‘ঠিক আছে, সে একজন বোকা হনুমান। খুশি?’
চালং তার কফির কাপ থেকে বাষ্প ওঠার দিকে বিষণ্ণভাবে তাকিয়ে থাকে। ঝুঁকি নিয়ে একটু একটু করে চুমুক দিয়ে পান করার আগে ফাটা ঠোঁটের যন্ত্রণা মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে। ধোঁয়া ও মাখন মাখানো রুটি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে তার চোখগুলো দোকানের এদিক-সেদিকে ঘুরে ঘুরে বিনোদন সন্ধান করছিল। পাশের দিকে চোখগুলো থমকে দাঁড়ায় এবং যখন একজন তরুণী দেখতে পায় চোখগুলো কাত হয়ে ওপরে-নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তরুণীর হাতে একটা ছোট মেয়ে। সে শিশুটির পিঠের চারদিকে হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে একটা দুধের খালি টিন তুলে ধরেছে দয়াদাক্ষিণ্যের আশায়।


বেশ, সে একজন ভিখারিনী তবে এই প্রবল বৃষ্টিতে কি ছোট শিশু টেনে আনার আদৌ কোনো দরকার ছিল? দেখে মনে হয় শিশুটির বয়স সবে এক বছর, দরিদ্র, ক্ষুদ্র, ভাঙাচোরা, দেখে মনে হয় ছেঁড়া কাপড়ের পুতুল। 
‘এখান থেকে বেরিয়ে যাও! এসব ভিক্ষুকের মৃত্যুতে আমি অসুস্থ’ কর্কশ গলায় দোকানদার চেঁচিয়ে বলে। চালং বিস্ময়ভরে বুকে যন্ত্রণার টান অনুভব করে যদ্যপি তার কলিজা নড়াচড়া করে।


সে কোনোমতে ভিখারিনী বালিকার কষ্ঠ শুনতে পায়। থরো থরো কম্পিত কণ্ঠে বালিকাটি বলে, ‘দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন। আমার বাচ্চাটি অসুস্থ। বাচ্চাটি দুই দিন যাবৎ কোনো দুধ বা ভাত খায় নাই।’ এই কথা শুনে দোকানের ক্রেতাদের একজন নোংরা হাসি দিয়ে বলে ‘দেখে তো মনে হয় তোমার বøাউসের নিচে তোমার বুকে বাচ্চাটার জন্য অনেক দুধ মজুত আছে।’ এমন কথা শুনে অন্য ক্রেতারাও বিদ্রুপের হাসি দেয়।


বালিকাটি হাত দিয়ে নিজের চিবুক মুছে এবং হেঁটে চলে যায়। বাচ্চাটি কাতর স্বরে কাঁদতে শুরু করে। চালং নিজে ওঠে দাঁড়ায় এবং ওদের দিকে হাঁটা দেয়।
সে বালিকাটিকে বলে, ‘আস এবং কিছু খেয়ে যাও।’
মেয়েটি তার দিকে মুখ তুলে তাকায়। মেয়েটির দুচোখ থেকে অশ্রু ঝরে। যদি না তাকে এমন বিধ্বস্ত, তাড়া খাওয়া কুকুরছানার মতো না দেখাত, অবশ্যই সে একজন সুন্দরী হতো। চালং নিজেই নিজের প্রচণ্ড বিস্ময় দেখে। সে শক্ত করে ঢোক গিলে।
তারপর সে বলে, ‘আস।’
বালিকাটি জবাবে বলে, ‘আমি সেখানে ফিরে যাব না।’
চালং বলে, ‘এখন তারা কিছুই বলবে না, আস, তোমার বাচ্চাটি ঠান্ডা ও ক্ষুধায় অজ্ঞান হওয়ার আগেই আস।’
মেয়েটি আবার বলে, ‘যদি বাচ্চাটি মারা যায়, তার সঙ্গে আমিও মরব। হয়তো তাই উত্তম হতো যদি তা করতে পারতাম। যদি আমরা দুজনেই মরতাম।’ মায়ের চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু বাচ্চাটার হাতে ঝরে পড়ে।
চালং বিশ মিনিট পর্যন্ত বালিকাটির হাতে শিশুটির নরম নুডলস খাওয়ানো দেখতে থাকে। প্রতিবারই শিশুটিকে খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি গব গব করে নিজেও এক চামশ গলাধঃকরণ করে। নিজেরও যখন খাওয়ার ইচ্ছা হলো চালং নিজের জন্য খাবার দিতে আদেশ করে। বালিকাটির যখন খাওয়া শেষ, তখন সে নিজের ভাজ করা দুই হাত নাক বরাবর উঁচু করে তুলে ধরে মাথা নিচু করে চালংকে অভিবাদন জানিয়ে বলে, ‘আমি আপনাকে কীভাবে ধন্যবাদ জানাব? এটা সত্য নয় যে গরিবের চেয়ে ধনীরা অধিকতর দয়ালু।’
চালংয়ের চিন্তাভাবনা বাস্তবমুখী হয়। সে বালিকাটিকে জিজ্ঞাসা করে, ‘তোমার স্বামী কোথায়?’
মেয়েটি জবাবে বলে, ‘ওহ্, তার কথা! আমি তার সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না।’
‘তুমি কোথায় থাক?’
‘কোথাও না এবং সবখানে। আমি মন্দিরে আশ্রয় চেয়েছিলাম। পুরোহিত সাহেবরা আমার সঙ্গে অত্যন্ত সদয় ব্যবহার করেছেন।’
 

চালং মেয়েটির দিকে সরু চোখে তাকিয়ে দেখে। আর বলে, ‘তুমি তো ব্যাংককের মেয়ে নও।’ এই কথা শুনে মেয়েটির চোখ বিস্ময়ে বিস্ফারিত হয়। পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলে, ‘আপনি জানলেন কীভাবে?’
হঠাৎ মেয়েটিকে তার খুব বেশি পছন্দ হয়। মেয়েটি এখন অহংকার ও বদান্যতার কর্মের চেয়ে অধিকতর হয়েছে, কারণ একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি তাকে পরাস্ত করেছে। তার অর্থ ব্যয় তাকে মর্যাদা ফিরে দিয়েছে। বর্তমানে তার অনুগ্রহভাজন একটা প্রতীকের পরিবর্তে একজন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে। 
মেয়েটি বলে, ‘উত্তরের মেয়েরাই সর্বদা ব্যাংকক পুরুষ দ্বারা প্রতারিত হয়।’ তার কণ্ঠস্বর ছোট হয়ে আসে।
চালং বলে, ‘তুমি অবশ্যই চিয়েংগমাই থেকে এসেছ, সেখান থেকে সুন্দরীতমা সকল মেয়ে এসে থাকে।’ সে মেয়েটার স্বামী সম্পর্কে অধিক কিছু জানতে চায়নি। সে মেয়েটার সেই বিষণ্ণ চাহনি আর দেখতে চায়নি।
মেয়েটি জবাবে বলে, ‘হ্যাঁ, আমি চেয়েংগমাই থেকেই এসেছি।’ সে দাঁড়িয়ে যায়। আর বলে, ‘আমাদের অবশ্যই যেতে হবে। আপনি অনেক দয়ালু।’ চালং মেয়েটির চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না তবে তাকে কীভাবে থামাবে সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই। যাহোক, সে অপটুভাবে নিজের জেবের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে চল্লিশ টাকা তুলে আনে এবং সেই টাকাগুলো মেয়েটির মুঠোর মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়।


মেয়েটা বলে, ‘আমি এই টাকা নেব না। আপনি ধনী মানুষ না। আমাকে টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আপনার নেই।’
জবাবে চালং বলে, ‘যদি বাচ্চাটি অসুস্থ না হতো তাহলে আমি দুধের টিনের জন্য শুধু দুই টাকাই দিতাম, তবে তুমি যদি আমাকে বলো বাচ্চাটিকে ডাক্তার দেখাতে হবে।’
মেয়েটি টাকাগুলো গ্রহণ করল। তার অশ্রুর মাঝেও তার উত্তরাঞ্চলীয় কৃষ্ণ নয়নে মৃদু হাসি দেখা দেয় যখন সে ঘুরে চলে যায়।
চালং তার কফির কাপের দিকে আবার দৃষ্টি দেয়। অনেকক্ষণ আগেই কফি থেকে বাষ্প ওঠা বন্ধ হয়েছে তবে কফি পানের জন্য তার কোনো নড়াচড়া নেই। সে হা করে তাকিয়ে ছিল। তার নয়ন দুটা বড় বড় করে দোকানের প্রাচীরের দিকে অলক্ষে তাকিয়ে থাকে। এমনকি সে খেয়ালও করেনি যে কখন দোকানের প্রাচীর ও তার মধ্যখানে কর্কশকণ্ঠী দোকানদার এসে দাঁড়িয়েছে।
দোকানদার বলে, ‘সব মিলে মোট আট টাকা।’ চালং জবাবে বলে, ‘এটার জন্য আমি দস্তখত করব।’
দোকানদার জোরে চিৎকার করে বলে, ‘এটার জন্য দস্তখত? বেশ ভালো! তুমি?’
মজুরটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে, ‘হ্যাঁ, আমি।’
দোকানদার বলে, ‘তুমি বাজি ধরতে পার তুমি কোনো কিছুর জন্য দস্তখত করোনি, তোমার জীবনে কখনো না।’ দোকানদার জনতার কাছে আবেদন করে। ‘এখানে আসুন—জানেন না এই বানরমুখো খেয়েদেয়ে দস্তখত করতে চায়। এখনই নগদ দাও এবং কোনো সময় নষ্ট না করেই।’
চালং মর্যাদার সঙ্গে বলে, ‘তুমি যদি আমাকে এটার জন্য দস্তখত করতে দাও, আমি তোমার মূল্যবান প্রতিষ্ঠানের একজন স্থায়ী খদ্দের হব।’
দোকানদার বলে, ‘ভিখারিনী মহিলার দিকে তার সব অর্থ ছুড়ে দিয়েছে এবং এখন আমার কাছে ঋণী থাকতে চায়। আমার কাছে প্রত্যাশা তাকে আমি আট বাথের জন্য বিশ্বাস করব!’
‘অতঃপর আমি এটার জন্য কোনো দস্তখত দেব না। তবে তারপরও আমাকে তোমার বিশ্বাস করতে হবে। আমি মাল খালাসের জেটিঘাটে ফিরে যাব এবং কিছুটা পরিমাণে বেশি উপার্জন করব। আমি আবার ফিরে আসব এবং পরবর্তীকালে তোমার টাকা পরিশোধ করব।’
‘তুমি এখনই টাকা দেবে, অবশ্যই দিবে এবং আমার হাতে টাকা দেওয়ার আগে তুমি কোনোমতেই জেটিঘাটে ফিরে যেতে পারবে না।’
চালং দীর্ঘশ্বাস নেয়। তার বুক পাথুরে মাছের মতো হঠাৎ ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে। সে মারপিট করার জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে।
সে আকস্মিকভাবে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, ‘তাহলে এদিকে আস এবং টাকা নাও।’
ক্ষুদ্র দোকানদার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তার টাক মাথা নিস্তেজভাবে চিক চিক করে।
সে আস্তেধীরে একটা ড্রয়ারের দিকে হেঁটে যায় এবং একটা কাগজের কোনা ও ছিদ্রযুক্ত একটা বলপয়েন্ট নিয়ে ফিরে আসে। তারপর সে কর্কশ কণ্ঠে বলে, ‘তাহলে যাও, দস্তখত কর।’
চালং পদাঙ্গুলি দিয়ে মাটিতে আঁচড় কাটে। আর আস্তে করে বলে, ‘আমাকে কলম দিয়ে কোনো লাভ নেই।’
দোকানদার উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘তাহলে তুমি কী চাও?’
‘একটা স্টাম্প পেড দাও। আমি তোমাকে টিপসই দেব।’
ক্ষুদে লোকটা হাঁপাতে থাকে। আর বলে, ‘বেশ, তুমি কি তাতে আস্থাশীল?’
‘দুষ্টলোকটা এমনকি নিজের নামটা কীভাবে লিখতে হয়, তা-ও জানে না!’
চালং নামক মজুরটি নিজ জবানে আস্থাশীল।
 

সে কফি দোকানের মালিক জনাব সাং-এর মূল্যবান প্রতিষ্ঠানের একজন স্থায়ী খদ্দের হয়েছে। দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই সে দোকানদার একজন বন্ধু হয়েছে। জনাব সাং বোকা ছিল না। তাদের বন্ধুত্বের শুরুতে সে চালংয়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে যে সে আবার কখনো এক জোড়া সুন্দর নয়নের খাতিরে তার নিজের সঞ্চয় অকাতরে বিলিয়ে দেবে না—তাদের দ্যোতিময় অনুভূতিতে যত দুর্ভাগ্যের কাহিনিই লুকায়িত থাকুক না কেন। চালং, যার হৃদয় ছিল সুপরিসর তার অর্থকড়ি যতই সীমিত হোক, অতিকঠোর সানের কাছ থেকে জোর করে ভাবগম্ভীর একটা শপথ আদায় করেছে যে আর কখনো সে কোনো ভিখারিকে অপমানিত করবে না অথবা তার মূল্যবান প্রতিষ্ঠানের দরজা থেকে বিতাড়িত করবে না। এই শপথ পালনে ব্যর্থ হলে, চালং প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে সে তার বন্ধু জনাব সাংকে জঘন্যতম গালি দেবে সেই সময়ে তার উর্বর ও উদ্ভাবনী বুদ্ধি যা-ই বলে।
 

তবে এমনকি দুই সপ্তাহ পরেও, চালং তখন পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের সেই কৃষ্ণ নয়না বালিকা ও শিশুর কথা ভেবে ভেবে অলস সময় যাপন করে। অবশ্য সে জানত যে, উত্তরাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক সাধারণ মেয়ে রাজধানীর স্থূল বণিকদের লালসার সহজ শিকারে পরিণত হয়। এসব হতভাগিনি এবং প্রায়শই গর্ভবতী নিষ্পাপ মেয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে তাদের পুরুষের সন্ধানে ব্যর্থ আশা নিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে।
‘যদি আমি আদৌ কখনো তার সাক্ষাৎ পাই এবং সে যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে, যা-ই হোক আমি যদি অন্যত্র চলে না যাই এবং আমি তাকে বিয়ে করব’ কালো কফিতে চুমুক দিতে দিতে চালং বলে।
রাগে হিস্ হিস্ করে সাং বলে, ‘তুমি একটা বোকা বেকুব!’ চালং সোজা হয়ে বসে এবং চোখ মুছে। ঠিক যেন তার ভাবনার জবাব, ভিখারিনী মেয়েটি হেঁটে ভেতরে আসে। তবে সে এখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, রুচিসমৃদ্ধ, এমনকি তার লম্বা সবুজ থামিতে ছেনালি ভাব এবং পরনে তার সাদা ঝালর ব্লাউজ। তার পায়ে সাদা সেন্ডেল এবং তার চুল চমৎকার ধৌত করা হয়েছে এবং কুণ্ডলী পাকিয়ে উৎকৃষ্ট খোপা বেঁধেছে। তার কানের দুল টুনটুন শব্দ করছে। তার এসব সূক্ষ্ম কারুকার্য দেখে চালং তীক্ষ্ণ শিস দিয়ে নিশ্বাস ছাড়ে।
মেয়েটি বলে, ‘কুন চালং!’
 

ডাক শুনে সে ভাবে, মেয়েটি আমার নাম মনে রেখেছে। তার কলিজা কথায় সংকুচিত হয়ে আসে।
মেয়েটির নতুন অবস্থা এতই উদ্দীপ্ত করেছে যে তাকে চিরতরে চালংয়ের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছে। মেয়েটি ‘কুন চালং’ নাম ধরে পুনরায় ডাক দেয়। এই সম্মানজনক উপাধি হলো শ্রদ্ধার চিহ্ন।
মেয়েটি বলে, ‘আমার স্বামী ও আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা আপনার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। আমি অনুভব করি নিশ্চয় আপনার দয়াতেই আমার শিশুটির প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। আপনি যদি আমাদের সাহায্য না করতেন আমার বাচ্চাটি তখনই মারা যেত। আমি এখন আমার স্বামীর সঙ্গেই আছি। সে আমাদের উভয়ের প্রতি স্নেহময়। আপনার কারণেই আমাদের এই আনন্দ।’
‘বেশ ভালো, তা জেনে প্রীত হলাম’, সরু ও থরো থরো কম্পিত কণ্ঠে চালং জবাব দেয়। সে তা স্বীকারই করে না। যন্ত্রণায় মিশে যায়।
‘আমার স্বামী অনেকবার আমাদের কাছে আসতে চেয়েছিলেন তবে তার ব্যবসায় অনেক বেশি চাপ ছিল। আর সেই সময়ে তার মা-ও মারা যান।’
চালং বলে, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুমি অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দাও—সে নিশ্চয়ই একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার নাম কী?’
মেয়েটি গালভরা হাসি দেয়। চালং আগে কখনো তার হাসি দেখেনি, তবে লজ্জায় তার লাল হওয়া দেখেছে—যেভাবে সে তখন লজ্জায় লাল হচ্ছিল। দেখতে যেন পাকা চুমপু ফল। মেয়েটি বলে, ‘আপনি এক সেকেন্ডের মধ্যে তাকে দেখতে পাবেন, সে আপনাকে দেখার জন্য আসছে। সে সশরীরে আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চায়।’
‘সে এখন কোথায়?’
‘গাড়ি পার্ক করার জায়গা খুঁজছে। পার্কিং জায়গা পাওয়া খুব কঠিন এমনকি প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেও।’
চালং বলে, ‘কীভাবে জানলে আমি এখানে থাকতে পারি?’ সে মেয়েটির মায়াবী মুখের দিকে কঠোরভাবে না তাকানোর চেষ্টা করছিল। সে হা করে মেয়েটির গলার দিকে তাকিয়ে দেখে। বলতে গেলে তা ছিল বিষণ্ন। জোর করে সে মেয়েটির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয় এবং দরজার দিকে তাকায়।
মেয়েটি বলে, ‘আমি জানি না। আমি শুধু আশা করেছি। এইবার হলো পঞ্চমবার আমার স্বামী এবং আমি এখানে আপনার সন্ধানে এসেছি।’
‘সাং আমাকে কখনো বলেনি।’
‘আমরা তাকেও জিজ্ঞাসা করিনি।’
‘কেন?’
‘শারণ, আমাদের আশংকা হয়েছিল যে আপনি আমাদের সঙ্গে দেখা নাও করতে পারেন।’
চালং অবশ্য প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছিলেন। তবে সে জানে মেয়েটির কথাই যথার্থ। সে উঠে দাঁড়ায়।
‘বেশ, আমি ভাবছি আমি চলে যাব। আমি কামনা করি তুমি এবং তোমাদের সবার মঙ্গল হোক।’
মেয়েটি তাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়। আর বলে, ‘দয়া করে এখন যাবেন না, দেখুন এই চেকটা আমার স্বামীর কাছ থেকে আনা। দয়া করে রাগ করবেন না, আমরা আপনার কাছে কত যে কৃতজ্ঞ, তা দেখানোর অন্য কোনো উপায় জানি না।’
মেয়েটি হাতে তুলে ধরা কাগজটি নিয়ে চালং নিজের নয়ন দুটি মুছে। সে কাগজটি মেয়েটির হাতে ঠেলে ফিরিয়ে দেওয়র আগে তার কলিজা অবিশ্বাস্যভাবে লাফিয়ে ওঠে, যখন অর্থের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা দেখতে পায়।
সে চিৎকার দিয়ে বলে, ‘না’ নেব না। আমি এখনই এখান থেকে চলে যাব।’
মেয়েটির দুই নয়ন থেকে আবার অঝোরে অশ্রু ঝরে আর বলে, ‘ওহে, দয়া করুন, দয়া করে এটা গ্রহণ করুন।’
 

মেয়েটি বলতে থাকে, ‘দয়া করে রাগ করবেন না, আপনি আপনার সর্বশেষ টাকা আমাদের দিয়ে দিয়েছেন আপনি, শুধু একজন দিনমজুর! ভেবে দেখুন আমার স্বামী কতই না লজ্জিত হবে যদি সে শুনে যে আপনি টাকা নিচ্ছেন না! প্রতিদানটা কি খুবই সামান্য?’
চালং উচ্চকণ্ঠে বলে, ‘আমি কোনো প্রতিদান চাই না।’ হঠাৎ সে রাগে চিৎকার করে। কাউন্টারের পেছন দিক থেকে দোকানদার সাং অননুমোদনীয়ভাবে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে শব্দ করে।
মেয়েটি বলে, ‘ওহ্, আমি আবার ভুল শব্দ ব্যবহার করেছি।’ আবার অশ্রুপাতের শুরু এবং চালংয়ের হৃদয়েও অশ্রুপাত, ভেতরে অশ্রুপাত এবং তাদের সামনেও। সে মেয়েটার গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। দরজায় সে একজন মানুষের সঙ্গে দুম করে ধাক্কা খায় এবং একপাশে সরে দাঁড়ায় শ্যামদেশের প্রজন্মান্তরের প্রথা অনুসারে অন্যদের পথ করে দেয়।
 

মানুষটা হা করে চালংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই তো আমার স্বামী এসেছে! তার সঙ্গে কথা না বলে যাবেন না! মেয়েটি তার অতিমাত্রায় শোভাবর্ধক রুমাল দিয়ে আলতোভাবে তবে অপারগ ভঙ্গিতে দ্ইু নয়নের অশ্রু মুছে। চালং অপলক দৃষ্টিতে মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, বর্তমানে সেই দুষ্ট বানরের মুখ টকটকে লাল নতুবা রক্তবর্ণ কোনোটাই নয় তবে অধিকতর সোনালি তামাটে বর্ণ মার্জিত রং ধারণ করেছে। চালং প্রায় চিক্কুর দিয়ে বলে, ‘ও তুমি!’
 

নাইকম বিনম্র। সে খুবই বিনম্র। সে অতিমাত্রায় মাথা নোয়ায়। সে জানে, অবশ্য তারা সবাই জানে। এমন কিছু সুনির্দিষ্ট ঋণ আছে যা এমনকি বন্ধুবান্ধবের মধ্যেও প্রতিদান দেওয়া যায় না। আর তা যদি হয় শত্রুদের মাঝে...। নাইকম শ্যামদেশি কায়দায় দুই হাতের তালু একস্থানে করে সম্মান জ্ঞাপন করে। নাইকম অত্যন্ত বিনয়ীভাবে মাথা নিচু করে দিনমজুরটিকে অভিবাদন জানায়।
 

বজ্রাহত দুজন মানুষের মধ্যখানে সুন্দরী, সরলচিত্তে কথা বলা মেয়েটি এগিয়ে আসে। পাখি সদৃশ, সন্ধানী সহৃদয় বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে শুধু একটি মার্জিত টানে মেয়েটি দশ হাজার টাকার চেকটি চালংয়ের জামার জেবের মধ্যে দ্রুত ঢুকিয়ে দেয়। নাইকমের চেক। চালংয়ের মনে আনন্দের একটা ঢেউ প্রবাহিত হয়। সে চেকটি জেব থেকে তুলে আনা, নাড়াচাড়া করা, ত্যাগ করা অথবা ফেরত দেওয়ার জন্যে কোনো ধরনের উদ্যোগ দেখায়নি। সে সহৃদয়তার সঙ্গে মেয়েটির মুখমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করে, অভিব্যক্তির মিষ্টতাসহকারে সে নাইকমের দিয়ে তার দুই নয়ন ঘুরায়। গোল্লায় যাক! সেই মানুষটি আবার রক্তিম বর্ণ ধারণ করতে শুরু করে! সব নিষ্কর্মা ধনীর মতো তার মধ্যেও অবশ্যই দোষিত কর্মপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে!
চালং উল্লাসে ফেটে পড়ে আর বলে, ‘হেইও আমাকে এক বছর আর কাজ করতে হবে না।’

 

 

লেখক পরিচয় : পেনসরি কিয়েন সিরি (১৯৩১) শ্যামদেশের একজন বিশিষ্ট লেখক। তিনি ‘নারাওয়াদি’ ছদ্ম নামেও লেখেন। তিনি শ্যামদেশের নারাতিওয়াট প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন এবং অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল মেলবোর্ন হাসপাতাল ও মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিওথেরাপি বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন। তিনি শুধু একজন লেখক, গল্পকার, ঔপন্যাসিকই নয়, একজন কবিও। তাঁর প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা ত্রিশের অধিক, গল্পের বইও অনেক। পৃথিবীর অনেক ভাষায় তাঁর গল্প, উপন্যাস ও কবিতা অনুবাদ হয়েছে। তিনি নিজেও একজন অনুবাদক। তাঁর কবিতার বই ‘পোয়েমস ফ্রম থাইল্যান্ড’, উপন্যাস ‘দ্য সি ইস ওয়াইড, দ্য স্কাই ইস নিয়ার’। এই উপন্যাসটি শ্যামদেশে ১৯৯৫ সালে ‘জাতীয় বই পুরস্কার’ অর্জন করেছে।  তিনি শ্যামদেশের লেখক সমিতির সভাপতি ছিলেন। বর্তমান গল্পটি জেনিফার ড্রাসকাউ সম্পাদিত ‘তাউ এন্ড আদার স্টোরিস’ (১৯৭৯) শীর্ষক গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।  

 

অনুবাদ: সাদাত উল্লাহ খান

Link copied!