• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাবিতে মধ্যরাতে জঙ্গলে ডেকে শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিং


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৩, ০২:৫৩ পিএম
জাবিতে মধ্যরাতে জঙ্গলে ডেকে শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিং

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের জঙ্গলে ডেকে র‌্যাগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।

রোববার (২৮ মে) রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনি ফিল্ডের পেছনের জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে। র‍্যাগ চলাকালে সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের একাধিক সদস্য।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জানা যায়, রাত সাড়ে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনি ফিল্ডসংলগ্ন এলাকায় উপস্থিত হতে বলা হয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। একই বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জরুরিভাবে এ নির্দেশ দেন বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তবে রাত সাড়ে আটটায় উপস্থিত হতে বলা হলেও সিনিয়ররা আসেন রাত সাড়ে এগারোটায়। পরে সেখানে এসেই আগে থেকে উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে নানা ধরনের নির্দেশ দেন তারা। এর মধ্যে মুরগি হও, চেয়ারে বসা ও ক্ষিপ্ত হয়ে জুতা ছুড়ে মারার ঘটনাও ঘটে।

ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তব্যরত সাংবাদিকরা। তবে তাদের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় আব্দুল্লাহ আল কাফি নামের এক শিক্ষার্থীকে পাকড়াও করেন প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে র‍্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত অন্য শিক্ষার্থীদের কথা জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫১তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, “রাত আটটায় বড় ভাইয়েরা (৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা) সিডনি ফিল্ডসংলগ্ন জঙ্গলে আমাদের ডাকে। কিন্তু ভাইয়েরা আসেন রাত ১১টায়। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো আমাদের র‌্যাগ দেওয়া হয়। এ সময় আমাদের মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়।”

এদিকে ঘটনার পরেই র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১২ জন শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত এ বি এম আব্দুল্লাহ আল কাফি বলেন, “আজকে আমাদের ডিপার্টমেন্টের জুনিয়রদের ডাকা হয়েছিল। আমরা ৫০তম ব্যাচের ১০-১২ জন ছিলাম। এর মধ্যে ছিল নূর ইসলাম, তানভীর ইসলাম, মো. আবদুস ছবুর, প্রিন্স কুমার রায়, আহমেদ ইজাজুল হাসান আরিফ, চিরঞ্জীত মণ্ডল, মো. রাসেল হোসাইন, সিজান, খন্দকার মোয়াজ ইসলাম, মিঠুন রায়। এ সময় ওদের র‍্যাগ দেওয়া হয় তবে আমি দিইনি। আমি কীভাবে যেন আজকে এসে পড়ছি। আমি ভুল স্বীকার করছি আর এমনটা হবে না।”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহকারী অধ্যাপক এস এম এ মওদুদ আহমেদ বলেন, “আমরা রাতে জানতে পারি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনি ফিল্ডসংলগ্ন জঙ্গলে নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং করা হচ্ছে। এমন খবরের ভিত্তিতে প্রক্টর স্যারের নির্দেশে আমরা দুজন সহকারী প্রক্টর ঘটনাস্থলে যাই। যাওয়া মাত্রই কয়েকজন সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তবে আমরা আব্দুল্লাহ আল কাফী নামে একজনকে ধরতে পারি। কারা সেখানে উপস্থিত ছিলো সে তাদের নাম জানিয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, “রাতেই আমরা একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আজকেই অভিযুক্তদের শোকজ করা হয়েছে। র‌্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, “র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। অভিযুক্তদের আমরা ইতিমধ্যে শোকজ করেছি। তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। এর আগেও যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো র‌্যাগিং চলবে না।”

Link copied!