ঋতু পরিবর্তন হয়েছে। শীত শেষে বসন্তের হাওয়া বইছে। এই আবহাওয়ায় রোগ বালাইয়ে কমতি নেই। তবে এই সময় ঘরে ঘরে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় চিকেন পক্স। বছরের এই একটি সময়ই চিকেন পক্স হয়। ছোট-বড় সব বয়সীদেরই এই রোগ হতে পারে। কথায় আছে, একবার চিকেন পক্স হলে সারাজীবনে আর এই রোগ হওয়ার ভয় থাকে না। তবে যখন হবে তখন সারা গায়ে নিজের ছাপ ছেড়ে যায় রোগটি।
চিকেন পক্স সাধারণ একটি রোগ। একে গুটি বসন্তও বলা হয়। পুরো শরীরেই ছোট ছোট গুটি আকারে হয় এটি। যা খুবই যন্ত্রণা দায়ক। চিকিৎসক মিচিয়াকি তাকাহাশি প্রথম চিকেন পক্সের টিকা আবিষ্কার করেন।
চিকেন পক্স ভাইরাসজনিত রোগ। মায়ো ক্লিনিকের মতে, চিকেন পক্স একটি ইনফেকশন। এটি ‘ভেরিসেলা জোস্টার ভাইরাস’-এর কারণে হয়। চিকেন পক্সের রোগী হাঁচি বা কাশি দিলে জীবানু বাতাসে ছড়িয়ে পরে। সেখান থেকে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারে।
কারা চিকেন পক্সে আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছে?
বিশেষজ্ঞরা জানান, যারা পূর্বে এই রোগে আক্রান্ত হননি এবং এই রোগের টিকা নেননি তাদেরই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
চিকেন পক্সের উপসর্গ কেমন?
- চিকেন পক্স হলে সারা শরীরে লাল ফুসকুড়ির মতো দেখা যায়। সেই স্থানে চুলকানি অনুভূত হয়। এটিকে প্লেও মর্ফিক ফুসকুড়ি বলা হয়। মুখের ভেতর জিভ, দাঁতের মাড়ি এমনকি মাথার ত্বকেও চিকেন পক্স হতে পারে।
- রোগীর শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকবে।
- রোগীর দুর্বল অনুভূত হবে।
- রোগীর খাওয়ার রুচি কমে যাবে।
- ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি শরীরে স্থায়ী হয় অন্তত ১১ থেকে ২১ দিন।
চিকেন পক্সে হলে যা করতে হবে
- চিকেন পক্স হলে রোগীকে নিয়মের মধ্যে চলতে হবে। মশলাজাতীয় খাবার খেলে এগুলোতে জ্বালাভাব বাড়ে। তাই খাবারেও সতর্ক থাকবে হবে। মশলা ছাড়া খাবার খেতে হবে।
- শিশুদের ছোটবেলায় চিকেন পক্সের টিকা দিয়ে নিন। এতে শিশু চিকেন পক্সে আক্রান্ত হলেও খুব বেশি সংক্রমিত হবে না।
- চুলকানি কমাতে ওলিভ অয়েল বা ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করুন। উপকার পাবেন।
- চিকেন পক্স হলে শরীরে আদ্রতা ভাব থাকতে হবে। চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
- রোগীকে অবশ্যই একটি ঘরের মধ্যেই অবস্থান করতে হবে। এতে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার ভয় কম থাকে।
চিকেন পক্সে আক্রান্ত হলে যা করা যাবে না_
- চর্বিযুক্ত মাংস ও ফুল-ফ্যাট দুধ খা্ওয়া যাবে না।
- চকোলেট, বাদাম বা বীজ জাতীয় যেকোনও খাবার খাওয়া যাবে না। এসব খাবারে ‘আরজিনিন’ নামের একটি এমাইনো অ্যাসিড রয়েছে। যা চিকেন পক্সের ভ্যারিসেলা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়।
- শরীরের সংক্রমিত স্থানে চুলকানি হয়। কিন্তু হাত বা নখ দিয়ে তা চুলকানো যাবে না।
- ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা যাবে না। নিমপাতা সেদ্ধ হালকা গরম পানিতে গোসল করুন।
- শরীরের কোনো অংশে সাবান ব্যবহার করা যাবে না।
- গোসলে সময় গা ঘষবেন না।
- এক বালতি হালকা গরম পানিতে ১ কাপ ওটমিল পাউডার ভিজিয়ে রাখুন। তা দিয়ে গোসল করুন। চুলকানি কমবে।
- গোসল শেষে চেপে চেপে গা মুছবেন না। স্বাভাবিকভাবেই শরীর শুকিয়ে নিন।
চিকেন পক্সের প্রতিরোধক কী?
চিকিৎসকরা জানান, এই রোগের একমাত্র প্রতিরোধক হচ্ছে ভেরিসেলা এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে এই রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব। আর সংক্রমিত হলেও ভয়াবহতা কম থাকে। শরীরে খুব বেশি ফুসকুড়ি হয় না। জ্বালাভাব কম হয় এবং দ্রুত সেরে যায়।