গরমকালে দাউদ বা চর্মরোগ একটি অতি সাধারণ এবং অস্বস্তিকর সমস্যা। দাউদ হলো এক ধরনের ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। যা মূলত ঘাম, আর্দ্রতা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে বাড়ে। এটি সংক্রামক, এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানির মাধ্যমে কষ্ট দেয়। গরম ও বর্ষার সময় দাউদের প্রকোপ বেড়ে যায়। তবে সময়মতো প্রতিকার নিলে এ সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
দাউদ কেন হয়
দাউদ মূলত "ডার্মাটোফাইট" নামক এক ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণে হয়ে থাকে। গরম, আর্দ্র আবহাওয়া এবং ঘামের কারণে এ জীবাণু সহজেই ত্বকে বসবাস করতে পারে। দাউদ হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো_ অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ও ঘাম শুকিয়ে না রাখা, অপরিচ্ছন্ন বা ভেজা পোশাক ব্যবহার, অপরের তোয়ালে, কাপড় বা বিছানা ব্যবহার করা, দীর্ঘ সময় জুতা বা মোজা পরে থাকা, গরমকালে চামড়ার ভাঁজে ঘাম জমে থাকা (যেমন: কুঁচকি, বগল, গলা, পেটের নিচে)।
দাউদ হলে যে লক্ষণ দেখা দেয়
দাউদ হলে সাধারণত ত্বকে গোলাকার লালচে বা বাদামি দাগ দেখা যাওয়া, প্রচণ্ড চুলকানি হওয়া, ক্ষতস্থানের চারপাশে খসখসে আবরণ, দাগটি ধীরে ধীরে বড় হওয়া, একাধিক স্থানে ছড়িয়ে পড়া, ক্ষতস্থানে জ্বালাপোড়া অনুভব হয়।
দাউদ হলে কী করবেন
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
দাউদ দীর্ঘস্থায়ী বা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অনেক সময় ঘরোয়া চিকিৎসা যথেষ্ট না হয়ে ওষুধ ও মলম দরকার হয়।
অ্যান্টিফাংগাল মলম ব্যবহার করুন
প্রাথমিক অবস্থায় ফার্মেসিতে পাওয়া যায় এমন কিছু অ্যান্টিফাংগাল ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
ক্লোট্রিমাজল (Clotrimazole), কেটোকোনাজল (Ketoconazole) এবং টেরবিনাফিন (Terbinafine) মলম প্রতিদিন ২ বার ক্ষতস্থানে লাগালে উপকার পাওয়া যেতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ঘাম ও ভেজা পোশাক এড়িয়ে চলুন
পরিষ্কার ও শুকনো কাপড় পরুন। ভেজা পোশাক বেশি সময় গায়ে রাখবেন না। রোজ পোশাক পরিবর্তন করুন। অন্তর্বাস ও মোজা নিয়মিত ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করুন।
সাবান ও পরিষ্কার উপকরণ ব্যবহার করুন
জীবাণুনাশক সাবান ব্যবহার করুন। নিজের তোয়ালে, বিছানার চাদর, জামাকাপড় অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন না। ক্ষতস্থান সাবধানে পরিষ্কার রাখুন।
ঘরোয়া প্রতিকার
হালকা সংক্রমণের ক্ষেত্রে নিমপাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগানো যেতে পারে। এলোভেরা বা কাঁচা হলুদও প্রাথমিকভাবে উপকারে আসতে পারে।
তবে সতর্ক থাকুন। ঘরোয়া প্রতিকারের চেয়ে ডাক্তারি চিকিৎসা অধিক কার্যকর এবং নিরাপদ।
দাউদ প্রতিরোধে যা করবেন
প্রতিদিন অন্তত একবার গোসল করুন। শরীরের ভাঁজ ও ঘামের জায়গা শুকনো রাখুন। ধুলো-ময়লা থেকে দূরে থাকুন। স্যান্ডেল বা খোলা জুতা পরুন যাতে বাতাস চলাচল করে। অন্য কারও তোয়ালে, জামা বা চিরুনি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। পশু বা পোষা প্রাণীর দেহে সংক্রমণ থাকলে সাবধান হতে হবে।