গর্ভাবস্থায় উচ্চরক্তচাপ একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা মা ও শিশুর উভয়ের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এটি প্রাক্-এক্ল্যাম্পসিয়া, গর্ভকালীন হৃৎপিণ্ডের জটিলতা এবং অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই গর্ভাবস্থায় উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় উচ্চরক্তচাপের ধরন
গর্ভাবস্থায় উচ্চরক্তচাপ সাধারণত চার ধরনের হতে পারে_
জেস্টেশনাল হাইপারটেনশন
গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহ পর দেখা দেয় এবং প্রসবের পর সেরে যায়।
ক্রনিক হাইপারটেনশন
গর্ভধারণের আগে থেকেই থাকা উচ্চরক্তচাপ বা প্রথম ২০ সপ্তাহে ধরা পড়ে।
প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া
উচ্চরক্তচাপের সঙ্গে কিডনির সমস্যা, প্রোটিন ইউরিয়া, লিভার এনজাইম বাড়া ইত্যাদি।
ক্রনিক হাইপারটেনশন উইথ সুপারইম্পোজড প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া
পূর্ব থেকেই থাকা উচ্চরক্তচাপে পরবর্তীতে প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়ার লক্ষণ যোগ হয়।
উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করণীয়
নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
গর্ভাবস্থায় উচ্চরক্তচাপ থাকলে নিয়মিত চেকআপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসক রক্তচাপের মাত্রা অনুসারে ওষুধ, পরীক্ষা ও খাদ্যাভ্যাস নির্ধারণ করে থাকেন। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করা
বাসায় ডিজিটাল রক্তচাপ মেশিন ব্যবহার করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় রক্তচাপ পরিমাপ করুন এবং একটি নোটবুকে লিখে রাখুন। এটি চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে সহায়ক হবে।
সুষম ও লবণ নিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ
লবণ গ্রহণ সীমিত করুন (দিনে ৫-৬ গ্রাম বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)। উচ্চসোডিয়াম যুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার আচার, চিপস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন। শাকসবজি, ফলমূল, পূর্ণ শস্য, দুধ ও দই নিয়মিত খান। প্রচুর পানি পান করুন, তবে শরীরে পানি ধরে রাখার লক্ষণ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ওজন বৃদ্ধি হওয়াই স্বাভাবিক, তবে অতিরিক্ত ওজন এড়াতে সুষম আহার ও হালকা ব্যায়াম দরকার।
হালকা ব্যায়াম ও চলাফেরা
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, প্রেগন্যান্সি ইয়োগা বা মৃদু স্ট্রেচিং করতে পারেন। এটি রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
মানসিক চাপ কমানো
উচ্চ মানসিক চাপ রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম, ধ্যান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সময় কাটানো, প্রিয় বই পড়া কিংবা প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমায়।
ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা
গর্ভাবস্থায় ধূমপান ও অ্যালকোহল মা ও শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো রক্তচাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি গর্ভফুল আলাদা হওয়া, শিশুর জন্মজনিত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ
সব ধরনের উচ্চরক্তচাপের ওষুধ গর্ভাবস্থায় নিরাপদ নয়। ওষুধ নিজে থেকে শুরু বা বন্ধ করা বিপজ্জনক। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন। তীব্র মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, পেটের ডান পাশে ব্যথা, হঠাৎ ওজনে বৃদ্ধি, মুখ, হাত বা পা ফুলে যাওয়া এবং শিশুর নড়াচড়া কমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের কাছে যান।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
রাতের ঘুমের পাশাপাশি দিনে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া দরকার। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে না থাকা এবং বাম পাশ হয়ে শোয়া রক্ত সঞ্চালনে সহায়ক।
মনে রাখবেন, মা ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে গর্ভাবস্থার প্রতিটি ধাপে সচেতনতা ও যত্ন অপরিহার্য।