• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২১ জ্বিলকদ ১৪৪৬

চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া সেই ব্যক্তির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে যা জানা গেল


নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৫, ১০:৪৪ এএম
চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া সেই ব্যক্তির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে যা জানা গেল
ছবি : সংগৃহীত

ট্রেনের দরজার বাইরে ঝুলে রয়েছেন এক ব্যক্তি। কিন্তু ট্রেনের ভেতর থেকে কেউ তার হাত ধরে রেখেছেন। প্রাণে বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছিলেন লোকটি। একপর্যায়ে ভেতর থেকে হাত ছেড়ে দিলে লোকটিকে রেললাইনে পড়ে যেতে দেখা যায়। এ ঘটনার ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে রোববার বেলা একটার দিকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নসরতপুর রেলস্টেশন এলাকায়। ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান (৫২)। তিনি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পাড়ইল গ্রামের বাসিন্দা। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরৎপুর রেলস্টেশনে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া মতিউর রহমান চিকিৎসা নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে আহসান হাবিব।

মতিউর নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পারইল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একসময় অটোরিকশার চালক থাকলেও গত দুই বছর ধরে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করছেন। বিদেশে পাঠানো এক যুবকের কাগজপত্র নিয়ে ঝামেলার জেরে রোববার দুপুরে তাকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও ওই দিন বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে স্থানীয় লোকজন ধারণা করেন, তিনি মোবাইল চোর বা ছিনতাইকারী। সেই ধারণা করে ট্রেন থেকে পড়ার পর তাঁকে উল্টো গণপিটুনি দেওয়া হয়।

মতিউরের মাধ্যমে দুই বছর আগে সজীব নামের এক যুবক সৌদি আরবে যান। কিন্তু সৌদি আরবে যাওয়ার পর কাগজপত্রে সমস্যা থাকায় ইকামা (কাজের সুপারিশ সনদ) না পাওয়ায় সজীবের পরিবারের সঙ্গে মতিউর রহমানের বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের জেরে সজীবের নির্দেশে কয়েকজন যুবক রোববার মতিউর রহমানকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। সজীবের বাড়ি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার তালসন গ্রামে।

মতিউর রহমানের ছেলে আহসান হাবিব বলেন, ‘বাবা গতকাল (রোববার) দুপুরে বগুড়া থেকে দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেনে সান্তাহারে আসতেছিলেন। আসার পথে নসরতপুর রেলস্টেশনে আসার আগে বাবার কামরায় থাকা ১০ থেকে ১২ যুবক বাবাকে মারধর করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে চলন্ত ট্রেনের দরজা দিয়ে তারা বাবাকে নিচে ফেলে দেন। ট্রেন থেকে রেললাইনে পড়ে গেলেও ভাগ্য বলে ট্রেনের চাকা তার শরীরের ওপর দিয়ে যায়নি। তবে আঘাত লেগে একটা পা ভেঙে গেছে।’

আহসান হাবিব জানান, তার বাবাকে উদ্ধার করে প্রথমে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর মতিউর রহমান এখন বগুড়ায় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় কেউ মামলা নিচ্ছে না বলে দাবি করেন আহসান হাবিব। তিনি বলেন, আদমদীঘি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ সান্তাহার জিআরপি পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগ করতে বলে। রোববার রাতে সান্তাহার জিআরপি পুলিশ স্টেশনে গেলে সেখানেও কোনো মামলা নেওয়া হয়নি।

পূর্বশত্রুতার জেরে ট্রেন থেকে মতিউরকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সৌদি প্রবাসী সজীবের চাচা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার ভাতিজা সজীব মতিউরের মাধ্যমে সৌদিতে গেছে। কিন্তু মতিউর আমার ভাতিজার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সৌদিতে যে কোম্পানিতে কাজ করার জন্য পাঠাইছে তারা এখনো ইকামা দেয়নি। কিন্তু মতিউর আমার ভাতিজাকে ইকামা পাইয়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখনো ইকামা দেওয়ার কথা বলে নানা টালবাহানা করতেছে। এটা নিয়ে মতিউরের সঙ্গে আমাদের বিরোধ চলতেছে। তবে তাকে ট্রেনে মারধর ও ফেলে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই।’

বিষয়টি নজরে আনা হলে সান্তাহার রেলওয়ে জংশনের জিআরপি পুলিশ স্টেশনের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে আমরাও দেখেছি। তবে এ ঘটনায় জিআরপি পুলিশ স্টেশনে কেউ কোনো অভিযোগ দিতে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Link copied!