উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের আকস্মিক বৃষ্টিতে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বৃষ্টির পানিতে নেতাই নদীর বাঁধ ভাঙার উপক্রম হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা।
গত কয়েকদিন যাবত দিন ও রাতের বিভিন্ন সময় কখনো থেমে থেমে, কখনো মাঝারি, আবার কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতেই বেড়েছে নদ-নদীর পানি। ময়মনসিংহ শহরের বুক চিরে বয়ে চলা পুরোনো ব্রক্ষপুত্র নদে সারাবছর যৎসামান্য পানি থাকলেও এখন চিত্র বিপরীত। জেলাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অন্য নদ-নদীসহ খালগুলোর পানিও ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে সবচেয়ে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে সীমান্ত এলাকা ধোবাউড়ার নেতাই নদী। এই নদীর পানি হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিনের বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে নেতাই নদী পানিতে টইটম্বুর। বন্যার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কৃষকরা। তারা বোরো ধান কেটে গোলায় তোলাসহ বাজারে বিক্রিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নিচু এলাকার জমিগুলোতে উৎপাদিত আধাপাকা ধানগুলো অনেকে কেটেও ফেলছেন। জমিতে অন্যান্য ফসলও রয়েছে। এগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় অনেক কৃষক।
কলসিন্দুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আজিজ বলেন, “কয়েকদিনের ব্যবধানে নেতাই নদীর পানি বেড়েছে। নদীর পাশে বসবাস করা লোকজন ঘরবাড়ি ভাঙার আতঙ্কে রয়েছেন। ব্লক দিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে উপজেলার লোকজন দীর্ঘদিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু তা না করায় বাঁধ ভেঙে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।”
একই গ্রামের কৃষক আবদুল কাদির বলেন, “নির্মাণকাজ শেষ না হতেই আবারও ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে নেতাই নদীর এই বেড়িবাঁধটি। গত বছরের বন্যায় ফসল হারিয়ে কৃষকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য বন্যা থেকে ফসল রক্ষা করতে দ্রুত ধান কেটে বাড়িতে নেওয়া হচ্ছে।”
পার্শ্ববর্তী হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোরা গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া বলেন, “কংস নদীর পানি অনেক বেড়েছে। বৃষ্টির কারণে এরইমধ্যে কয়েকটি নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এভাবে পানি বাড়লে বন্যার সম্ভবনা রয়েছে।”
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গত বছরের ৪ অক্টোবর প্লাবিত হয় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলা। এতে দুর্ভোগে পড়েন দুই লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়া রাস্তাঘাট, বাড়ি ঘর, ধান ও সবজির ক্ষেত, সড়ক ও বাঁধ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখনকার বন্যায় এই চার উপজেলায় প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ও শাক-সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেসে যায় প্রায় ১৫ হাজার পুকুর, দীঘি ও বাণিজ্যিক মাছের খামার। কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি হয় প্রায় ৪০০ কোটিরও বেশি।
বন্যায় জেলায় ১৬৭ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেটাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০৯ কোটি টাকা। আর প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এবারও আকস্মিক বন্যা হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু বলেন, নদ-নদীর পানি বাড়ছে। নিচু এলাকায় আকস্মিক বন্যা হলে বিপাকে পড়বে কৃষকরা। বোরো ধান কাটা শেষ পর্যায়ে। তবে বন্যা হলে কৃষকদের অন্যান্য ফসল পচে নষ্ট হয়ে যাবে। বন্যায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের পাশে সহায়তার হাত বাড়ানো হবে।
এদিকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রেজাউল করিম।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল বলেন, সীমান্তবর্তী উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানি নামছে। বৃষ্টিতে নদ-নদী ও খাল-বিলের পানিও বাড়ছে। তবে বিপৎসীমার ওপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, বিপৎসীমার ওপরে পানি প্রবাহিত হবে না। কয়েকদিন বৃষ্টিপাত না হলে ধীরে ধীরে পানি কমে যাবে।