নারীপুরুষ সবারই রোগবালাই হয়ে থাকে। অনেক সময় এমন কিছু শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি আমরা হয়ে থাকি যেগুলোকে আমরা আমলে নিতে চাই না। কিন্তু এসব সমস্যা কোনো এক সময় গিয়ে অনেক বড় এবং মারাত্মক রোগের আকার ধারণ করতে পারে। মারাত্মক রোগগুলো যখন ধরা পড়ে তখন আর করার কিছু থাকে না। তাই তেমনই কিছু শারীরিক সমস্যার লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নিই চলুন-
শ্বাসপ্রশ্বাসে দুর্বলতা
ভারী কোনো কাজ করতে গিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাসের দুর্বলতা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সাধারণ কাজ করতে গিয়েও যদি শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হয়, তবে তা চিন্তার বিষয়। শ্বাসপ্রশ্বাসে দুর্বলতা কার্ডিওভাসকুলার কিংবা ফুসফুসের রোগের ইঙ্গিত দেয়। এ ছাড়া আপনি যদি ধূমপায়ী হন, শ্বাসপ্রশ্বাসে দুর্বলতা আপনার জন্য অশনিসংকেত।
ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া
সময়ের সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। ডায়েটে পরিবর্তনের ফলে শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিতেই পারে। কিন্তু হুট করেই ওজন কমে যাওয়া কিংবা বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক নয়। হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া অনেক সমস্যারই ইঙ্গিত দেয়। তার মধ্যে ক্যানসারও আছে। এ ছাড়া হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে ওজন অতিরিক্ত বাড়তে পারে।
ঘন ঘন প্রস্রাব
ঘন ঘন প্রস্রাবের উপসর্গ কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়। কারণ, ঘন ঘন প্রস্রাব মূত্রনালির বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। মূত্রনালির সংক্রমণ, কিডনিতে পাথর, এমনকি প্রোস্টেট ক্যানসারের মতো রোগের উপসর্গ হতে পারে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাব হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
বুকে অস্বস্তি বা ব্যথা
বুকে ব্যথা হলেই অনেকে ধরে নেন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। দ্রুত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেন অনেকেই। কিন্তু নিয়মিত বুকের ব্যথা থেকে সৃষ্টি হতে পারে ভয়ংকর কোনো রোগ। বুকে ব্যথা অনেক ক্ষেত্রে হৃদ্রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা অবহেলা করলে মৃত্যুঝুঁকি পর্যন্ত থাকতে পারে।
অবিরাম পিঠে ব্যথা
দীর্ঘ সময় অফিসে বসে থাকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকের পিঠে ব্যথা হয়। নিয়মিত বিশ্রাম নিলে সেই ব্যথা স্বাভাবিকভাবে চলেও যায়। কিন্তু নিয়মিতই যদি পিঠের ব্যথা আপনার শরীরে উঁকি মারে, তবে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়। নিয়মিত পিঠে ব্যথা মেরুদণ্ডের ও কিডনি সমস্যার ইঙ্গিত বহন করে।
অতিরিক্ত পিপাসা পাওয়া
একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ২-৩ লিটার বা ৮-১০ গ্লাস পানি খাওয়া জরুরি। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পিপাসা পেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়ার লক্ষণ, যা ডায়াবেটিসের ইঙ্গিত দেয়। পরিবারের অন্য কারও ডায়াবেটিস থাকলে আগে থেকে সতর্ক হওয়া জরুরি।
ক্লান্তি
সারাদিনের কাজ শেষে ক্লান্ত হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু সারাদিন ধরেই যদি শরীর ক্লান্ত থাকে তাহলে তা কখনোই ভালো লক্ষণ নয়। অনেকেই এই ক্লান্তিকে ঘুমের বা বিশ্রামের অভাব বলে চালিয়ে দেন, ব্যাপারটি তেমন নয়। শরীরে এই ক্লান্তিভাবের পেছনে রক্তস্বল্পতা, থাইরয়েডের সমস্যা দায়ী হতে পারে।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি কমে আসা স্বাভাবিক বিষয়। তবে অল্প বয়সেই যদি ছোট ছোট ঘটনা ভুলে যেতে থাকেন, তবে তা চিন্তার বিষয়। ছোটখাটো জিনিস ভুলে যাওয়া, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা আলঝেইমারস ডিজিজ, স্ট্রোক, ব্রেনের কোনো সমস্যা অথবা ভিটামিন বি–১২-এর অভাবজনিত সমস্যার লক্ষণ। তাই ছোটখাটো এই বিষয়গুলো ভুলে যাওয়াকে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো।