জলপাই আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় ফল। টক স্বাদের এই ফলটি প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুণে ভরা। জলপাই ফল খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে শরৎ-হেমন্তে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফল খনিজ, ভিটামিন, ফাইবার এবং মূল্যবান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। একটি জলপাই ফলের ওজন হয়ে থাকে ১৫.৭৮ থেকে ২২.৪৬ গ্রাম। প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাই ফলে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালরি, শর্করা ও ক্যালসিয়াম। আমাদের দেশে জলপাইয়ের আচার বেশ জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু। শুধু আচারই নয় এটি কাচা বা রান্না করেও খাওয়া হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক জলপাইয়ের আরও কিছু পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার কথা-
পুষ্টিগুণ
- জলপাইয়ের তেলে কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল নেই। তাই রক্তে চর্বি বা লিপিড জমে যাওয়ারও কোনো ভয় নেই। অন্যদিকে রক্তের চর্বি বা ফ্যাটের পরিমাণও কমায় এই জলপাই।
- অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট জলপাইতে রয়েছে উচ্চহারে। এই উপাদানের জন্য দেহের রোগ-জীবাণুগুলো মারা যায় এবং অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও ত্বক রক্ষা পায়।
- জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ডায়াটরি ফাইবার, যা পাকস্থলীর বিভিন্ন অংশ যেমন ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, কোলনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং এই আঁশ খাবার সঠিকভাবে হজমে সহায়তা করে।
- দেহের রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে অবদান রাখে। ফলে দেহের জন্য ক্ষতিকর লাইপোপ্রোটিনের পরিমাণ কমে যায়। হৃৎপিন্ড কাজ করে সঠিকভাবে।
- এই ফলে থাকা উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘সি’ ও ‘এ’চোখের বিভিন্ন রোগকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। ত্বক, চুল, দাঁত, হাড়কে রাখে মজবুত।
- নিয়মিত জলপাই খেলে গলব্লাডার বা পিত্তথলিতে পাথর, বাতের ব্যথা কিংবা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের পরিমাণ কমে যায়।
- জলপাইয়ে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে, যা দেহের ক্যানসারের জীবাণুকে ধ্বংস করে এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে বাড়ায় দ্বিগুণ পরিমাণে।
- রাতকানা, চোখ ওঠা, চোখের পাতায় ইনফেকশন জনিত সমস্যাগুলো দূর করে এই জলপাই।
উপকারিতা
হৃদযন্ত্রের যত্নে জলপাই
যখন কোনো মানুষের রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় তখন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে। জলপাইয়ের তেল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। জলপাইয়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে কমে যায় হৃদ্রোগের ঝুঁকি।
ক্যানসার প্রতিরোধে জলপাই
কালো জলপাই ভিটামিন-ইয়ের বড় উৎস। যা ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে। ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। জলপাইয়ের ভিটামিন-ই কোষের অস্বাভাবিক গঠনে বাধা দেয়। ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
ওজন কমাতে জলপাই
যখন জলপাইয়ের মোনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট অন্য খাবারে বিদ্যমান স্যাচুরেটেড ফ্যাটের বদলে গ্রহণ করা হয় তখন তা শরীরে ভেতরের ফ্যাট সেলকে ভাঙতে সাহায্য করে। জলপাইয়ের তেলেও রয়েছে লো কোলেস্টেরল যা ওজন এবং ব্লাডপ্রেশার কমাতে সহায়ক।
পরিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে
নিয়মিত জলপাই খেলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার কম হয়। বিপাকক্রিয়া ঠিকভাবে হয়।
চোখের যত্নে
জলপাইতে ভিটামিন-এ পাওয়া যায়। ভিটামিন-এ চোখের জন্য ভালো। যাদের চোখ আলো ও অন্ধকারে সংবেদনশীল তাদের জন্য ওষুধের কাজ করে জলপাই।
পিত্তথলিতে পাথর
নিয়মিত জলপাই খেলে পিত্তথলির পিত্তরস ঠিকভাবে কাজ করে। পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
জলপাইতে যে খাদ্যআঁশ আছে তা মানুষের দেহের পরিপাক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং হজমে সহায়তা করে।
ত্বক ও চুলের যত্নে
জলপাইয়ের তেলে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বক ও চুলের যত্নে কাজ করে। জলপাইয়ের তেল চুলের গোড়ায় লাগালে চুলের গোড়া মজবুত হয়। এতে চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা দূর হয়।