প্রচণ্ড গরম বা তাপদাহে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। প্রচণ্ড ঘাম হয়ে পানি ও লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। হিট স্ট্রোক ও ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকিও বাড়ে। এমন অবস্থায় খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতন না হলে শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই এই গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে চাই এমন খাবার যা প্রাকৃতিকভাবে শরীর ঠান্ডা রাখে, পানিশূন্যতা পূরণ করে এবং হজমে সহায়ক হয়। চলুন জেনে নিই গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে যেসব খাবার নিয়মিত খাওয়া উচিত।
তরমুজ – গরমের রাজা ফল
তরমুজে প্রায় ৯২% পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে দারুণ কার্যকর। এটি খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং ক্লান্তি কমে। লাইকোপিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে এটি হৃদরোগ ও সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকেও সুরক্ষা দেয়। দুপুরের খাবারের পর বা বিকেলে স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া ভালো।
শসা – প্রাকৃতিক কুলার
শসাও প্রায় পুরোপুরি পানি দিয়ে গঠিত। এটি শরীর ঠান্ডা রাখতে, পেট ঠান্ডা রাখতে এবং হজমে সহায়ক। সালাদে কাঁচা শসা খান। শসার জুস বানিয়েও খাওয়া যায়।
ডাবের পানি – প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট
ডাবের পানি শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে। ঘামের মাধ্যমে যে লবণ-পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, তা দ্রুত পূরণ করতে ডাবের পানির বিকল্প নেই। সকালে বা বিকেলে ১ গ্লাস ডাবের পানি খাওয়া খুব উপকারী।
লেবু পানি বা স্যালাইন
লেবুতে ভিটামিন C থাকে, যা ক্লান্তি দূর করে এবং শরীর সতেজ রাখে। ঘরে তৈরি লেবু পানি বা স্যালাইন শরীরের পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণে দারুণ কার্যকর। প্রতিদিন অন্তত একবার লবণ ও চিনি মিশিয়ে এক গ্লাস লেবু পানি পান করুন।
টকদই ও লাচ্ছি
টকদই শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়ক এবং হজমেও ভালো কাজ করে। এক কাপ টকদই খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং পেটের সমস্যা কমে। লাচ্ছি (দই, পানি, সামান্য চিনি বা লবণ দিয়ে তৈরি) পান করলে গরমে শরীর চনমনে থাকে।
ঠান্ডা দুধ ও চিড়া
গরমে এক বাটি দুধ-চিড়া খাওয়া যেমন পুষ্টিকর, তেমনই শরীর ঠান্ডা রাখে। দুধে আছে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন, আর চিড়ায় আছে সহজে হজমযোগ্য কার্বোহাইড্রেট। চাইলে দুধে কলা বা খেজুরও মিশিয়ে নিতে পারেন।
ফলের রস
গরমে ঘরে তৈরি ফলের রস যেমন- আম, বাঙ্গি, কমলা, জামরুল ইত্যাদি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে ও ক্লান্তি দূর করে। দোকানের কেমিক্যাল মেশানো বা অতিরিক্ত চিনি দেওয়া জুস নয়, বরং বাড়িতে বানানো জুস খাওয়াই ভালো। বরফ না মিশিয়ে হালকা ঠান্ডা জুস খাওয়া নিরাপদ।
বাঙ্গি – আরেকটি পানিসমৃদ্ধ ফল
বাঙ্গিও তরমুজের মতোই পানিতে ভরপুর। এটি ঠান্ডা রাখে শরীর ও পেট দুটোই। বিকেলে হালকা স্ন্যাকস হিসেবে বাঙ্গি খাওয়া যেতে পারে। চাইলে লবণ বা লেবু ছিটিয়ে স্বাদ বাড়িয়ে নিতে পারেন।
পুদিনাপাতা – প্রাকৃতিক শীতলতা
পুদিনা শরীরে ঠান্ডা অনুভূতি দেয়। লেবু পানিতে পুদিনা পাতা দিয়ে পান করলে তা আরও রিফ্রেশিং হয়। সালাদ, চাটনি বা শরবতে পুদিনা ব্যবহার করতে পারেন।
পান্তা ভাত
গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী "পান্তা ভাত" গরমের সময় দারুণ জনপ্রিয়। রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখা ভাতে সকালে একটু লবণ ও কাঁচা মরিচ দিয়ে খেলে তা শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এতে কিছু প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিকও তৈরি হয় যা হজমে সহায়ক।