তীব্র তাপদাহ থেকে যেভাবে সুরক্ষিত থাকবেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৫, ০৬:০৬ পিএম
তীব্র তাপদাহ থেকে যেভাবে সুরক্ষিত থাকবেন
ছবি: সংগৃহীত

গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি উঠে যায়। এই গরমকেই বলা হয় তাপদাহ বা হিটওয়েভ। সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপদাহের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব আরও বেড়েছে। তীব্র তাপদাহ মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক কর্মক্ষমতাকে ব্যাহত করে। হিট স্ট্রোক, পানিশূন্যতা, ত্বকের সমস্যা, মাথাব্যথা ও বিভিন্ন অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। 
বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী নারী ও যাদের আগে থেকেই অসুস্থতা আছে—তাদের জন্য এই সময়টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তাপদাহ থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।

বাইরে যাওয়া কমিয়ে আনুন
তাপদাহের সময় বিশেষ করে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সূর্যের আলো সবচেয়ে তীব্র থাকে। এই সময়টায় সম্ভব হলে ঘরের বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। খুব প্রয়োজন না হলে ঘরের ভেতরে থাকুন। বাইরে যেতে হলে ছাতা, সানগ্লাস, হ্যাট এবং হালকা পোশাক পরে বের হোন। সারা শরীর ঢেকে রাখুন, যেন সূর্যের রশ্মি সরাসরি গায়ে না পড়ে।

প্রচুর পানি পান করুন
তাপদাহের সময় ঘাম হয়ে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। এতে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই দিনে অন্তত ২.৫–৩ লিটার পানি পান করুন। ডাবের পানি, লেবু পানি, স্যালাইন, ফলের রস বেশি করে খান। ঠান্ডা কোমল পানীয় বা অতিরিক্ত মিষ্টি পানীয় না খাওয়াই ভালো।

হালকা ও পাতলা পোশাক পরুন
এই সময় পাতলা, সুতি কাপড় এবং হালকা রঙের কাপড় পরা উচিত। এগুলো ঘাম শুষে নেয় এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে। টাইট বা সিনথেটিক কাপড় শরীরের তাপ বাড়িয়ে তোলে। তাই তা এড়িয়ে চলুন।শিশুদেরও ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক পোশাক পরান।

খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতা
তাপদাহের সময় হজম সমস্যাও বাড়ে। তাই অতিরিক্ত মসলাদার, ভাজা-পোড়া ও ফাস্টফুড খাওয়া এড়িয়ে চলুন। হালকা, পানিসমৃদ্ধ ও সিজনাল ফল খান যেমন তরমুজ, বাঙ্গি, শসা, আম ইত্যাদি। দই, ঠান্ডা দুধ, চিড়া ও কলার মতো খাবার শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

বাসা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন
ঘরের ভেতর অতিরিক্ত গরম হলে ক্লান্তি ও অস্বস্তি বেড়ে যায়। তাই জানালায় পর্দা ব্যবহার করুন যাতে সরাসরি রোদ না ঢোকে। দিনের গরমের সময় জানালা-দরজা বন্ধ রাখুন। বিকেল বা রাতে খুলে দিন। সম্ভব হলে ফ্যান, কুলার বা এসি ব্যবহার করুন।

হিট স্ট্রোক সম্পর্কে সচেতন থাকুন
হিট স্ট্রোক তাপদাহজনিত সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা। এটি হলে শরীর হঠাৎ গরম হয়ে যায়, ঘাম বন্ধ হয়ে যেতে পারে, মাথা ঘোরা, বমি, খিঁচুনি ও অজ্ঞান হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। হিট স্ট্রোকে হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছায়ায় বা ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যান। ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিন। মাথায় বরফ দিন ও পানি পান করান। অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

কর্মস্থলে সতর্কতা অবলম্বন করুন
যেসব পেশায় বাইরে কাজ করতে হয় যেমন নির্মাণশ্রমিক, ট্রাফিক পুলিশ, রিকশাচালকদের জন্য তাপদাহ খুবই কষ্টকর। এই সময় কর্মীদের বিশ্রাম, বিশুদ্ধ পানি ও ছায়ার ব্যবস্থা করা উচিত। যথাসম্ভব সকাল-বিকেলের ঠান্ডা সময়ে কাজ করার ব্যবস্থা নেওয়া ভালো।

শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নিন
তাপদাহে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশু ও বয়স্করা। তাদের বেশি করে পানি খাওয়ান। দিনে একাধিকবার গোসল করান বা শরীর ভিজিয়ে রাখুন। ঘরে যেন পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল থাকে নিশ্চিত করুন। মনে রাখবেন, তাপদাহ শুধু কষ্টই নয়, প্রাণঘাতীরও কারণ হতে পারে।

Link copied!