ডাউন সিনেড্রোম জন্মগত একটি অসুখ। যেসব শিশু এই ধরণের সমস্যা নিয়ে পৃথিবীতে আসে তাদের স্বাস্থ্যের ওপর এটা কুপ্রভাব বিস্তার করে চলে। যা পরবর্তী জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশকে পরামর্শ দিয়েছেন স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা.মাবরুবা সরকার শিফা।
ডাউন সিনড্রোম কেন হয়?
শরীরে যখন ডিএনএ কিংবা ক্রোমোজমে যদি কোন অসামঞ্জ্যতা দেখা দেয় তাহলে জন্মগতভাবে শারীরিক ত্রুটি দেখা দেয়। এর পাশাপাশি মানসিক ত্রুটিও দেখা দেয়। এটা হওয়ার পেছনের অন্যতম কারণ হলো ৩৫ বছরের পর সন্তান জন্মদান করা। অনেক সময় মায়ের এমন রোগের বৈশিষ্ট্য থাকলে সন্তানও সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়। এছাড়া পরিবেশ, জলবায়ু তেজস্ক্রিয়া এসব কারণেও ডাউন সিনড্রোম হতে পরে।যার ফলে সাধারণ শিশুদের তুলনায় এসব শিশুরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে দেরিতে বেড়ে ওঠে।
কীভাবে বুঝবেন শিশুর ডাউন সিনড্রোম?
যেসব শিশুরা নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে হাঁটা, বসা, কথা বলতে শেখে তারা মূলত ডাউন শিশু হয়। এসব সন্তান লালন-পালন করা অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়। কারণ এসব শিশুর জন্মগত হার্টের সমস্যা,শ্রবণশক্তি কিংবা দৃষ্টিশক্তির সমস্যাও দেখা দেয়। এ ছাড়াও ডাউন সিনেড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের আরো লক্ষণ রয়েছে। অনেকের জিব বের হয়ে থাকে। ছোট কান হয়। উচ্চতাও তূলনামুলক কম হয়।
চিকিৎসা
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের ভালোভাবে অভিভাবকদের দেখাশোনা করতে হবে। ২৪ মাস বয়সে শিশুদের খাওয়া-দাওয়ায় বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। ক্যালোরি, শারীরিক গতিবিধি, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন পরিমানমতো হতে হবে।
ভ্যাকসিনেশান
এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল হয়। তাই তাদের সুরক্ষার জন্য প্রতি বছর ফ্লু ভ্যাকসিন দিতে হবে।
হৃদযন্ত্র
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত প্রায় ৫০ শতাংশ শিশুর হার্টে সমস্যা থাকে। তাই তাদের হৃদযন্ত্র ঠিকমতো স্বাভাবিক ভাবে কাজ করছে কিনা পরীক্ষা করাতে হবে। কিছু কিছু হৃদরোগের চিকিৎসা সম্ভব।
হরমোন
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের থায়রয়েড হরমোনের অভাব দেখা যায়। তাই জন্মের পর ৬ ও ১২ মাস এবং তার পর প্রতি বছর টিএসএইচ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। অনেক শিশুর টাইপ ১ ডায়াবেটিস হতে পারে। ইনসুলিন থেরাপি নিতে হবে।
শ্রবণ
টানা ৬ মাস ও তার পর প্রতি বছর কানের পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ শিশুদের শ্রবণ সমস্যা থাকে। তাদের হিয়ারিং এডের সাহায্য নিতে হবে।
দৃষ্টি শক্তি
অনেক শিশুর কাছের বা দূরের কোনও কিছু দেখতে সমস্যা বা এস্টিগমেটিসম হতে পারে। এ কারণে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করে দেখে চিকিৎসা নিতে হবে।
অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে, ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা প্রক্রিয়া জটিল। তাই তাদের সঠিক সময়ে মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসা করাতে হবে। শুরু থেকে অভিভাবদের হতে হবে সচেতন।
আপনার মতামত লিখুন :