• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ঈশ্বরের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্বও মেসির!


অঘোর মন্ডল
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২২, ০৭:০৭ পিএম
ঈশ্বরের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্বও মেসির!

লিও,
পৃথিবীর দুই গোলার্ধের কোটি কোটি মানুষ কেন আপনার দিকে আছে, সেটা আপনি জানেন। আপনার পায়ের জাদু দেখতে। আর হাতে বিশ্বকাপ। আপনার আর্জেন্টিনার যারা ঘোর বিরোধী ফুটবলযুদ্ধে,তাদেরও অনেকে অখুশি হবেন না যদি ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বকাপটা আপনার হাতে দেখেন। ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে আপনার চোখে জল দেখে অনেক ব্রাজিলিয়ানেরও চোখের পাতা ভিজে ছিল! কারণ তারাও চেয়েছিলেন বিশ্বকাপটা আপনার হাতে দেখতে।

লিও,
যারা আপনার আর্জেন্টিনার সমর্থক নন, তারাও মাঝে মধ্যে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন আপনার বাঁ পায়ের জাদু দেখার জন্য।  কারণ আপনার বাঁ পায়ের ওই কারুকাজে অন্যরকম এক শিল্পের ছোঁয়া খুঁজে পান, যা চোখকে তৃপ্তি দেয়। মনকে প্রশান্তি দেয়।

লিও,
যারা অন্ধের মতো কোনো দলকে সমর্থন করেন, কিন্তু ফুটবল ভালোবাসেন, ফুটবল আবেগে বুদ হয়ে  যান, তারা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করেন এখন। তাদের সময় তারা আপনার কিংবা আপনার শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বি রোনালদো আর নেইমারকে এই পৃথিবীতে একই সময়ে ফুটবল খেলতে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। একই সাথে বিশ্বকাপে এবারও দেখছেন। কিন্তু তাদের দুঃখ আছে। আপনি কিংবা রোনালদো বা নেইমার কেন বিশ্বকাপ হাতে নিতে পারছেন না!
ফুটবল নিয়ে যারা কাঠখোট্টা বিশ্লেষণ করেন তারা বলেন, ফুটবল এগারো জনের খেলা। টিম গেম। মেসি একা কী করবেন? রোনালদো যে দলে খেলেন সেই পর্তুগালের বিশ্বকাপ জয়ের কোনো ইতিহাস নেই!  এই জায়গায় নেইমারের দল এগিয়ে। কিন্তু পাল্টা যুক্তিও আছে। লিওনেল মেসি তো আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলেছিলেন। কোপা আমেরিকা জিতেয়েছেন। ওই পক্ষ থেকে উত্তর চলে আসে, ‘মেসি তুলেছিলেন। কিন্তু তার দলের বাকিরা কাপটা জেতাতে পারেননি। তাদের কথায় ট্র্যাজেডির ইতিহাস ফিরে আসে। হিগুয়েইন জার্মান গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। সেবার চোখের জলে শেষ হয়েছিল আপনার বিশ্বকাপ! এবার আপনার সেই শাপমোচনের পালা। কিন্তু সৌদির বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হারের পর আপনাকে এবং আপনার দল নিয়ে ফুটবল বিশ্বে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। নক আউটের আগেই কি মেসির বিশ্বকাপ শেষ!  সেই প্রশ্ন খানিকটা বাঁক খেয়েছে। সেটা আপনার ওই বিখ্যাত বাঁ পায়ের শট মেক্সিকোর জালে জড়াতেই।

লিও,
আপনি না জিনিয়াস? জিনিয়াসের শ্রেষ্ঠত্ব যখন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়, তখন তার করণীয় কি সেটা আপনি জানেন। তবুও অন্যদের জানতে লিখতে হচ্ছে, আপনার করণীয় একটাই। আর্জেন্টিনাকে নক আউট পর্বে যাবে কী না সেই সংশয়, সন্দেহের দোলাচল দূর করা। নীল-সাদা জার্সির ওপর ফুটবলপ্রেমীদের সংশয়, অবিশ্বাসকে আপনার বাঁ পায়ের জাদুতে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দেওয়া। বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের এটাই হয়তো শেষ সুযোগ। প্রথম ম্যাচে সৌদির কাছে হেরে প্রায় কোমায় চলে যাওয়া দলে যদি অক্সিজেন দিয়ে ফিরিয়ে আনতে পারেন, তাহলে কাপ জয়ের স্বপ্নটা কেন দেখবে না আর্জেন্টিনা সমর্থকরা!

লিও,
খেলার দুনিয়ায় জিনিয়াসদের প্রবলতম প্রতিপক্ষের নাম প্রতাশার চাপ। তাদের বড় চ্যালেঞ্জ সেই প্রত্যাশার চাপ সামলে জ্বলে ওঠা। মেসি-মেনিয়ায় আক্রান্ত কোটি ভক্ত রাত জেগে অপেক্ষা করবে আপনি চাপ সামলে তাদের আনন্দ উল্লাসে ভাসাবেন বলে। তারা মানেন ফুটবল এগারো জনের খেলা। কিন্তু এগারো জন তো আর লিওনেল মেসি নন। ভাগ্যের চাকা যদি কেউ ঘোরাতে পারেন, দলের আত্মবিশ্বাস যদি কেউ ফেরাতে পারেন তার নাম লিওনেল মেসি।

লিও,
আপনার এক পূর্বসূরি উপরে ঈশ্বরের পাশে বসে আছেন। একসময় আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ভরসাস্থল ছিলেন তিনি।  তার জার্সিটা আপনার গায়ে।  তাই সমর্থকদের অন্তহীন চাপ সামলানোর জন্য আপনার অনুপ্রেরণার উৎসমুখের নাম হয়তো দিয়েগো ম্যারাদোনা। তিনি পেরেছিলেন। আপনি কেন পারবেন না! আপনি পারলে সেটা দেখে ঈশ্বরের পাশে বসে ফুটবল-ঈশ্বর মুখে এক চিলতে হাসি ছড়িয়ে হয়তো বলবেন, “হ্যাঁ, লিও তুমি পেরেছো। এখানে আমি শান্তিতেই আছি ঈশ্বরের হাতে। এখন আরও বেশি শান্তিতে থাকবো।”

লিও,
কাতারে আপনার দল বিপন্নতার মধ্যে। কিন্তু খেলার দুনিয়ায় সফলরা চরম বিপন্নতাতেও নিজের ওপর নির্ভর করেন। কারণ তারা জানেন সমাধান কার কাছে।  আপনিও জানেন, বিপন্নতা কাটিয়ে আর্জেন্টিনাকে কাপ এনে দেওয়ার স্বপ্নটা আপনাকে ঘিরে!

 

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Link copied!