• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

হ্যালুসিনেশন হওয়ার কারণ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩, ০৩:৫৮ পিএম
হ্যালুসিনেশন হওয়ার কারণ
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ছবি : সংগৃহীত

হ্যালুসিনেশন কোনও রোগ নয়, এটি অন্য রোগের উপসর্গ। হ্যালুসিনেশন শরীরের এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যক্তি এমন কিছু দেখতে বা শুনতে পান, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ পান বা অনুভব করেন যেটি আসলে ওই মুহূর্তে তার সামনে নেই। এক কথায় বিশেষজ্ঞরা এটিকে বলছেন, এটি এক ধরণের মনের বিভ্রান্তি। 

হ্যালুসিনেশনের অনেকগুলো কারণ হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে মানসিক রোগ, যেমন-সিজোফ্রেনিয়া, স্কিজোটাইপল ব্যাধি, বাইপোলার ব্যাধি, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, স্মৃতিভ্রম, ঘুমের অসুখ, গুরুতর অসুস্থতা, ক্লান্তি, ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থেকেও হ্যালুসিনেশন হতে পারে। আরও যেসব কারণে হতে পারে সেগুলো হলো-

  • সিজোফ্রেনিয়া, মুড ডিসঅর্ডার, ডিল্যুশনাল ডিসঅর্ডার
  • মাত্রাতিরিক্ত ড্রাগস বা অ্যালকোহল সেবনের কারণে
  • মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র এবং ইন্দ্রিয়ের সমস্যা থাকলে
  • শরীরে লবণের তারতম্যের জন্যও স্বল্পমেয়াদের হ্যালুসিনেশন দেখা দিতে পারে।
  • প্রচন্ড জ্বর হলে। মৃগীরোগ, বিষন্নতা, হিস্টিরিয়া এমনকি ব্রেইন টিউমারেও হ্যালুসিনেশন ঘটতে পারে।

হ্যালুসিনেশনকে দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। একটি হচ্ছে হিপনেজোগিক হ্যালুসিনেশন যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তার দশ সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যে যা ঘটে থাকে, আর অন্যটি হচ্ছে হিপনোপমপিক হ্যালুসিনেশন যখন মানুষ জেগে উঠে তারপর যা ঘটে থাকে। 

তবে আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকার কারণে ইন্দ্রিয়ের ওপর ভিত্তি করে হ্যালুসিনেশনের বেশ কিছু ধরনকে বিশেষজ্ঞরা শণাক্ত করতে পেরেছেন। যেমন-

দৃষ্টিতে হ্যালুসিনেশন
এক্ষেত্রে এমন কিছু দেখা, যার কোনও বাস্তবিক ভিত্তি নেই। যেমন মনে হতে পারে পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। অথচ তখন পেছনে বা আড়ালে বস্তুত কেউই নেই।

শ্রুতিগত হ্যালুসিনেশন
এমন কোনো শব্দ, মিউজিক হইচই কিংবা কণ্ঠস্বর শোনা, যা নিতান্তই অলীক। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যেটা হয়ে থাকে, তা হলো ক্ষতিকর গায়েবি কথা, আদেশমূলক কিংবা নিষেধমূলক কথা শোনা। এসব কথা মস্তিষ্কের ভেতর বা বাইরে থেকে হতে পারে। সিজোফ্রেনিয়া রোগীর ক্ষেত্রে এই অডিটরি হ্যালুসিনেশন বেশি হয়ে থাকে।

ঘ্রাণজনিত হ্যালুসিনেশন
এক্ষেত্রে হ্যালুসিনেশনে আক্রান্ত ব্যক্তি এমন কিছু জিনিসের ঘ্রাণ পাবে, যার কোনও সত্যতাই নেই। যেমন, হঠাৎ করে পচা মাছের গন্ধ, বমি, সিগারেট এমনকি পচা লালার গন্ধও অথবা যেকোনও কিছুর সুঘ্রাণও পেতে পারেন।

স্বাদজনিত হ্যালুসিনেশন
কোনও কিছুর স্বাদকে মুখে বিস্বাদ লবণাক্ত বা মেটালিক মনে হয়, সম্পূর্ণটাই ভুল ধারণা। সাধারণত এপিলেপসি রোগে এ ধরনের হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকে। টমেটো, আলু, বেগুন, মরিচ জাতীয় খাবারে ‍‍`সোলানিন‍‍` নামক উপাদান থাকে যেটি হ্যালুসিনেশনে প্রভাব রাখতে পারে। তাছাড়া কফি অতিরিক্ত পান করলেও হ্যালুসিনেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

স্পর্শগত হ্যালুসিনেশন
এক্ষেত্রে কোনও কিছুর স্পর্শ অনুভূত হওয়া, যা বাস্তবিকভাবে ঘটেনি। যেমন হঠাৎ করে শরীরের ভেতর বা ওপরে কিছু উঠে আসছে মনে হওয়া। অন্ধকার ঘরে মনে হবে কেউ স্পর্শ করছে অথচ ঘরে তখন কেউ নেই। এটি মূলত একটি মেডিকেল ডিসঅর্ডার।

কারও প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেলে কিংবা প্রিয় কোনও মানুষকে হারিয়ে ফেললে সেই মানুষটিকে নিয়ে হ্যালুসিনেশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে বলে গবেষকরা জানাচ্ছেন। 

হ্যালুসিনেশনের রোগীদের সঙ্গে এমনও হতে পারে, কাছের কোনও নাম ধরে গায়েবি কথাবার্তায় সে শুনতে পায়। ক্রমাগত হ্যালুসিনেশন হওয়ায় ঘটে যাওয়া কিংবা শোনা সবকিছুকেই মানুষটি সত্যি মনে করতে থাকে। যার জন্য অনেক বিপদও ঘটে থাকে।

সুতরাং এসব বিষয়গুলোকে অবহেলা না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা উচিত। এরজন্য কোনও মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারেন।

Link copied!