• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ মুহররম ১৪৪৬

থানায় আত্মহত্যার আগে স্বামীর জননাঙ্গ কেটে দেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম
থানায় আত্মহত্যার আগে স্বামীর জননাঙ্গ কেটে দেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকা
ফিরোজা আশরাবী

রাজধানীর ভাটারা থানায় পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় বিষপান করে মারা গেছেন ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্ন্যান্স বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ফিরোজা আশরাবী (২৮)। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পুলিশ দাবি করছে, আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে তিনি অনলাইনে বিষ সংগ্রহ করে পরিকল্পিতভাবে থানায় বসেই পান করেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে একজন আটককৃত নারীর কাছে পুলিশ হেফাজতে কীভাবে পৌঁছাল বিষ?

এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে এক উপপরিদর্শক ও দুই নারী কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) এক ফিল্ড অফিসারসহ তৃতীয় লিঙ্গের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আশরাবীর স্বামী ইলিয়াস কামাল রিসাদ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত মার্চে তাদের বিয়ে হলেও পারিবারিক কারণে সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল। পুলিশ বলছে, ৭ জুলাই অনলাইনের মাধ্যমে রাসায়নিক বিষ সংগ্রহ করেন আশরাবী। ৯ জুলাই রাতে পল্লবীতে স্বামীর বাসায় গিয়ে তাকে অজ্ঞান করে গোপনাঙ্গ কেটে দেন আশরাবী। পরে তিনিই রিসাদকে নিয়ে যান রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে।

পরদিন ১০ জুলাই সকালে রিসাদের স্বজনরা হাসপাতালে আশরাবীকে ঘিরে রাখলে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চান। একই দিন বিকেলে পল্লবী থানার অনুরোধে ভাটারা থানা পুলিশ তাকে আটক করে নারী ও শিশু সহায়তা কক্ষে রাখে। তখন রিকুইজিশন তথা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকায় তাকে হেফাজতে রাখা হয় ভাটারাতেই। সে সময় আশরাবীর হাতে ফোন যেমন ছিল, তেমনি হ্যান্ডকাফও পরিহিত ছিল না। স্বভাবতই তার বাইরের জিনিসপত্র গ্রহণের অনুমতি ছিল।

পুলিশ জানায়, আটক হওয়ার পর আশরাবী ব্লাস্টের প্রধান প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট মাহাপাড়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি তাদের ইনহেলার আনার অনুরোধ জানান। পরে ব্লাস্টের ফিল্ড অফিসার সোভা এবং তার সহকারী কণা আশরাবীর বাসা থেকে একটি ব্যাগ নিয়ে থানায় পৌঁছান। সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে সেই ব্যাগ আশরাবীর হাতে পৌঁছে দিলে তিনি ওষুধ খাওয়ার কথা বলে ব্যাগ থেকে বিষ পান করেন। থানার ভাষ্য, ইনহেলার হলেও এর মধ্য দিয়েই বিষ পৌঁছানো হয়েছিল ফিরোজা আশরাবীর কাছে।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, বিষের গন্ধ টের পেয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারী কনস্টেবল নাসিমা ও শারমিন বোতলটি ছিনিয়ে ফেললেও আশরাবী ইতিমধ্যে বিষ পান করে ফেলেন। তাকে দ্রুত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পর ১১ জুলাই সন্ধ্যায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ভাটারা থানার ওসি রাকিবুল হাসান বলেন, ‘ফিরোজা আশরাবী অনলাইনে বিষ অর্ডার করেছিলেন, তার কুরিয়ারের তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। তিনি পরিকল্পিতভাবে আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘একজন পিএইচডি গবেষক এবং শিক্ষক হিসেবে আশরাবী কৌশলী ছিলেন। তার পরিকল্পনা বুঝতে আমাদের বিলম্ব হয়েছে। হয়তো শিক্ষক হিসেবে তাকে অতিরিক্ত সম্মান দেখানোয় আমাদের নারী কনস্টেবলরা কঠোর হননি।’

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিষয়টি আরও তদন্তাধীন রয়েছে।’


পুলিশ ও মামলার তথ্য অনুযায়ী, রিসাদের আগেও একটি বিয়ে হয়েছিল; তার আগের স্ত্রী কানাডা প্রবাসী। আশরাবীরও আগে এক বিয়ে হয়েছে। দুজনের পরিবারের কেউ এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। এ ছাড়া রিসাদের একাধিক সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে দাম্পত্য কলহে বারবার ঝগড়া বিবেদ দেখা যায়।

৯ জুলাই রাতে রিসার্চ সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখানোর অজুহাতে আশরাবী স্বামীর বাসায় যান এবং চায়ে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাকে অচেতন করেন। এরপর অজ্ঞান রিসাদের গোপনাঙ্গ কেটে দেন তিনি। রাত সাড়ে তিনটার দিকে জ্ঞান ফিরে রিসাদ দেখতে পান তিনি আহত এবং তখনই আশরাবী তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

পুলিশ জানিয়েছে, আশরাবী দীর্ঘদিন ধরে ব্লাস্টের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিলেন, মূলত আইনি পরামর্শের জন্যই। সেই সূত্রে তিনি ব্লাস্ট কর্মীদের মাধ্যমে থানায় বসেই নিজের কাছে বিষ আনান। এই বিষয়ে ব্লাস্ট থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তাদের প্রধান কার্যালয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাংবাদিক পরিচয় জানার পর ফোন কেটে দেয়।

Link copied!