মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম হলো সেই স্বাভাবিক শক্তি, যা আমাদের শরীরকে বাইরের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হলেই শরীর সুস্থ থাকে। তবে দুর্বল ইমিউন সিস্টেম হলে সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর থেকেও বড় রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সুস্থ থাকতে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে হলে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। কিছু খাবার নিয়মিত খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
লেবুজাতীয় ফল
লেবু, কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা, কাগজি লেবু ইত্যাদি ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C থাকে। এই ভিটামিন শরীরে সাদা রক্তকণিকার (WBC) উৎপাদন বাড়ায়, যা রোগজীবাণু ধ্বংসে কাজ করে। এছাড়া এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ও কোষকে রক্ষা করে। প্রতিদিন এক গ্লাস লেবুর শরবত বা ১টি কমলা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
রসুন
রসুনে থাকে অ্যালিসিন নামক এক শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর। এটি শরীরের প্রতিরোধব্যবস্থাকে সক্রিয় করে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়াই সবচেয়ে উপকারী, তবে রান্নায়ও ব্যবহার করা যেতে পারে।
আদা
আদা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ঠান্ডা-কাশি হলে আদা চা বা আদা-গোলমরিচ দিয়ে তৈরি পানীয় উপকারী। চায়ের সঙ্গে বা উষ্ণ পানিতে আদা মিশিয়ে প্রতিদিন পান করতে পারেন।
মধু
মধুতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা শরীরকে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এটি গলা ব্যথা, সর্দি ও কাশি কমাতেও কার্যকর। সকালে খালি পেটে ১ চামচ কাঁচা মধু খাওয়া ভালো। চাইলে গরম পানির সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন।
দই ও ফারমেন্টেড খাবার
দই, ঘোল ইত্যাদি ফারমেন্টেড খাবারে থাকে প্রোবায়োটিক, যা হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। অন্ত্র সুস্থ থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন এক বাটি টক দই খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সবুজ শাকসবজি
পালং, লাল শাক, মুলা শাক, মেথি শাকসহ সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর আয়রন, ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন থাকে, যা শরীরকে জীবাণুর বিরুদ্ধে শক্তি জোগায়। প্রতিদিন খাবারের মেনুতে অন্তত এক বেলা শাক বা সবজি রাখুন।
৭. বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার
বাদাম, কাঠবাদাম, চিয়া সিড, তিল ও সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ভিটামিন E, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি কোষের ক্ষয় রোধ করে ও ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। প্রতিদিন এক মুঠো মিক্সড বাদাম ও বীজ খেতে পারেন।
মাছ ও ডিম
মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ ও ডিমে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক, আয়রন ও প্রোটিন। এগুলো শরীরের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন মাছ ও ডিম খান।
পানি
যথেষ্ট পানি না পান করলে শরীরের বিষাক্ত উপাদান বের হতে পারে না এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন।
শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেমের জন্য দরকার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখা, পর্যাপ্ত ঘুম, শারীরিক পরিশ্রম এবং মানসিক চাপ কমানো। নিয়মিত সুষম খাবার খাওয়ার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। শরীর হবে রোগমুক্ত।