যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে থাকাকেই বলে ফ্যাটি লিভার। এই রোগ প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণহীন হলেও পরবর্তী সময়ে এটি লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার কিংবা লিভার ফেইলিউরের মতো জটিল রোগে রূপ নিতে পারে। তাই প্রাথমিক পর্যায়েই খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফ্যাটি লিভার মূলত দুই ধরণের হয়। অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার, যা অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারণে হয়। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার, যা অ্যালকোহল সেবন না করেও অতিরিক্ত চর্বি জমলে হয়। যা বর্তমানে বেশি দেখা যায়।
এ রোগে আক্রান্তদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এই খাবারগুলো যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি জমার ঝুঁকি বাড়ায় এবং লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস করে।
অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার
চিনি বিশেষ করে ফ্রুক্টোজ জাতীয় চিনি (যেমন: কর্ন সিরাপ, সফট ড্রিঙ্কস, মিষ্টি) লিভারে ফ্যাট জমার অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত চিনি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে এবং লিভারে ট্রাইগ্লিসারাইড জমা বাড়িয়ে তোলে। মিষ্টি, মিষ্টির রসগোল্লা, সন্দেশ, কেক, বিস্কুট, ডোনাট, কোমল পানীয়, ফ্লেভারড জুস, আইসক্রিম, চকলেট, প্যাকেটজাত খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না।
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট
পরিশোধিত বা রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট দ্রুত হজম হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে লিভারে চর্বি জমাতে সহায়তা করে।
তাই সাদা চালের ভাত, সাদা পাউরুটি, নুডলস, পাস্তা (পরিশোধিত ময়দা দিয়ে তৈরি), বেকারি পণ্য (ক্রোয়াসাঁ, কুকিজ, পিজা) এড়িয়ে চলতে হবে।
ফাস্ট ফুড ও ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার
ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে এবং ফ্যাটি লিভার রোগের অগ্রগতি দ্রুত করে। তাই ফ্রাইড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার, হটডগ, বাজারের তৈরি পুরি, সমোসা, হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা বনস্পতি দিয়ে তৈরি খাবার এড়িয়ে চলবেন।
অতিরিক্ত লাল মাংস (Red Meat)
গরু বা খাসির মাংসে অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা লিভারে চর্বি জমার জন্য দায়ী। তাই গরুর মাংস, খাসির মাংস, মাংসজাত প্রক্রিয়াজাত খাবার (সসেজ, সালামি, বেকন) খাবেন না।
অ্যালকোহল
এটি ফ্যাটি লিভারের সবচেয়ে বড় শত্রু। অ্যালকোহল লিভারের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং চর্বি জমা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে।বিয়ার, ওয়াইন, স্পিরিট, অ্যালকোহল মিশ্রিত ককটেল বা পানীয় সম্পূর্ণভাবে পরিহার করুন।
হাই ক্যালোরি ও উচ্চ তেলের খাবার
অতিরিক্ত তেল বা ঘি দিয়ে রান্না করা খাবার ফ্যাটি লিভার রোগীদের জন্য ক্ষতিকর, কারণ এতে অতিরিক্ত ক্যালোরি লিভারে ফ্যাট জমার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ভাজাভুজি খাবার, অতিরিক্ত ঘি দিয়ে রান্না, মাখন বা ক্রীমযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ফ্যাটি লিভার থেকে বাঁচতে দিনভর পর্যাপ্ত পানি পান করুন – এটি লিভার ডিটক্সে সহায়ক। খাদ্য তালিকায় শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, মাছ, ওটস, ব্রাউন রাইস, অলিভ অয়েল ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।
ফ্যাটি লিভার রোগ নিরাময়ে ও নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, খাদ্যই হতে পারে ওষুধ। যা সঠিকভাবে বেছে নিলে জীবন বাঁচতে পারে।