• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মুহররম ১৪৪৬

‘জুলাই আন্দোলনের প্রতিশোধ নিতে পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয়’


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৫, ০৭:৩৯ পিএম
‘জুলাই আন্দোলনের প্রতিশোধ নিতে পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয়’

২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখার কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয় ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় আওয়ামীপন্থী শিক্ষক রন্টু দাসকে দায়ী করছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে বিভাগের সভাপতির মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অভিযোগপত্র সমর্থন করে ৯৭ জন শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেন।

অভিযোগে বলা হয়, ১ জুলাই প্রকাশিত দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফলে ২০১ নং কোর্সে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল হয়েছে। উল্লেখিত কোর্সটি জুলাই বিপ্লবের পূর্বে জনাব রন্টু দাস পাঠদান করলেও বিপ্লবের পর থেকে তিনি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি এবং নিয়মিত পাঠদানও সম্পন্ন করেননি।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি কোর্সে ১০ নম্বর ক্লাস উপস্থিতি এবং ৯০ নম্বর লিখিত পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ থাকে। তারা যথারীতি ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন এবং পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু তাদের ধারণা, উপস্থিতির নম্বরসহ লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও অনিয়ম করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেন, জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীতে বিভাগের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে মুখ খোলার কারণেই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আন্দোলনের সময় তাদের ব্যাচের ছাত্র ফরহাদ হোসেন শহীদ হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, “জুলাই আন্দোলনে আমাদের অংশগ্রহণ মেনে নিতে পারেননি রন্টু দাস স্যার। তিনি খাতার মাধ্যমে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছেন। শুধু তিনি নন, সেকেন্ড এক্সামিনারও একজন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হওয়ায় ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। আমাদের দ্বিতীয় বর্ষের রেজাল্টে প্রায় সবাই 'বি' গ্রেড বা তার নিচে পেয়েছে। এমনটা আমাদের সঙ্গে ইচ্ছাকৃতই করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদী দোসর রন্টু দাস ইচ্ছা করেই এমন করেছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক শাস্তির দাবি জানাই।”

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুকাইয়া বলেন, “এই অভিযোগের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। আমরা চাই, আমাদের উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়ন করা হোক এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জামালুল আকবর চৌধুরী একাধিকবার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি।

তবে কমিটির সদস্য সহকারী অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা বলেন, “আমরা পরীক্ষার নম্বর সংক্রান্ত বিষয়ে এক্সামিনারদের দেওয়া নম্বরই সংযোজন করি। তবে উপস্থিতির নম্বর শিক্ষার্থীদের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে।”

অভিযোগে উল্লিখিত ২০১ নং কোর্সের শিক্ষক রন্টু দাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা চারটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- 

১. ২০১ নং কোর্সের পরীক্ষক প্যানেল তালিকা প্রকাশ এবং উপস্থিতির নম্বর জানানো।

২. নিরপেক্ষ শিক্ষকদের মাধ্যমে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ।

৩. ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা।

৪. শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

Link copied!