• ঢাকা
  • শনিবার, ০৫ জুলাই, ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২, ১০ মুহররম ১৪৪৬

ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট কমে গেলে কী করবেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৫, ০৫:৪২ পিএম
ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট কমে গেলে কী করবেন
ছবি: সংগৃহীত

ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট কমে গেলে করণীয়

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো হঠাৎ জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা, শরীরে র‍্যাশ, ও প্লাটিলেট কমে যাওয়া। প্লাটিলেট রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং রক্তপাত প্রতিরোধ করে। ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে গেলে রোগী গুরুতর জটিলতায় পড়তে পারে। যেমন অভ্যন্তরীণ রক্তপাত বা হেমোরেজিক ডেঙ্গু। এজন্য ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে প্লাটিলেট পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

কেন প্লাটিলেট কমে যায়?

ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে রক্তে থাকা প্লাটিলেট ধ্বংস করতে শুরু করে। পাশাপাশি, এটি হাড়ের মজ্জার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে নতুন প্লাটিলেট উৎপাদনও কমে যায়। এছাড়াও শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে প্লাটিলেটকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে।

স্বাভাবিক অবস্থায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্লাটিলেট সংখ্যা হয় প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে ১.৫ লক্ষ থেকে ৪.৫ লক্ষ। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এটি দ্রুত হ্রাস পেতে পারে। যদি প্লাটিলেট ১ লক্ষের নিচে নেমে যায়, তবে এটি পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ২০,০০০-এর নিচে গেলে তা বিপজ্জনক এবং রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে।

প্লাটিলেট কমে গেলে করণীয়

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: প্লাটিলেট কমে গেলে নিজে থেকে কোনো ওষুধ না নিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। প্রতিদিন প্লাটিলেট কাউন্ট পরীক্ষা করা দরকার হতে পারে।

হাইড্রেশন বজায় রাখুন: ডেঙ্গু রোগীর জন্য পর্যাপ্ত পানি, ওআরএস, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদি তরল জাতীয় খাবার অত্যন্ত উপকারী। এটি শরীরে পানিশূন্যতা রোধ করে ও রক্ত সঞ্চালন সচল রাখে।

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন: প্লাটিলেট বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন-সি, বি১২, ফলিক অ্যাসিড ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার সহায়ক হতে পারে। যেমন: পেঁপে পাতা রস (সতর্কতার সাথে), বেদানা, লেবু, কমলা, গাজর, বিট, ডিম, মাছ ইত্যাদি।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে বলে বেশি করে বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। পরিশ্রম বা মানসিক চাপ প্লাটিলেট আরও কমিয়ে দিতে পারে।

রক্তপাতের লক্ষণ: দাঁত থেকে রক্ত পড়া, প্রস্রাবে রক্ত, চামড়ার নিচে লাল দাগ, মাড়ির রক্তক্ষরণ, বমিতে রক্ত – এসব হলে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন: যদি প্লাটিলেট ২০,০০০-এর নিচে নেমে যায় এবং রক্তপাত শুরু হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্লাটিলেট সঞ্চালনের (transfusion) প্রয়োজন হতে পারে। তবে অযথা ট্রান্সফিউশন না করাই ভালো।

নির্দিষ্ট ওষুধ এড়িয়ে চলুন: পেইনকিলার হিসেবে আইবুপ্রোফেন, অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ ডেঙ্গু রোগীর জন্য ক্ষতিকর, কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। প্যারাসিটামল চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।

অনেকেই মনে করেন, শুধু পেঁপে পাতার রস খেলেই রক্তে  প্লাটিলেট বেড়ে যাবে। কিন্তু এটি এখনো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। তাই একে চিকিৎসার বিকল্প মনে করা উচিত নয়।

ডেঙ্গু মানেই প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন দরকার,।এ ধারণাও ভুল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুধু পর্যবেক্ষণ ও সঠিক পরিচর্যায় রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।

Link copied!