এ বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কলেজ ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে। তবে এবারের ভর্তিতে বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন আসছে। শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নতুন নীতিমালায় কোটাব্যবস্থা পুনর্গঠন, ভর্তিপ্রক্রিয়ায় সময়সীমা ও কারিগরি সমন্বয় এবং ভালো কলেজে প্রবেশের শর্তাবলিতে পরিবর্তন আসতে পারে।
চলতি বছর এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। যার মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। কিন্তু শিক্ষা বোর্ড ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশে প্রায় ২৪০-২৫০টি মানসম্মত কলেজে আসন রয়েছে মাত্র ১ লাখের মতো। ফলে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ইচ্ছেমতো কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।
নীতিমালায় যে পরিবর্তন আসছে
আন্তশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, এবার ভর্তি নীতিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। সব বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকরা খসড়া প্রস্তুত করেছেন, এখন তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়।
খন্দোকার এহসানুল কবির আরও বলেন, বোর্ডের পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের ভর্তিকে সামনে রেখে কোটাব্যবস্থা, মেধাক্রম অনুযায়ী অগ্রাধিকার, মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া এবং বেসরকারি কলেজগুলোর পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে খসড়া প্রস্তাব তৈরি হয়েছে।
জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই স্বপ্ন দেখে ঢাকার অভিজাত কলেজগুলোতে পড়ার। কিন্তু সেসব কলেজ যেমন নটর ডেম, হলি ক্রস, সেন্ট যোসেফ, ভিকারুননিসা, রেসিডেনসিয়াল, রাজউক, ধানমন্ডি আইডিয়াল ইত্যাদির আসন সংখ্যা খুবই সীমিত।
গত বছর দেখা গেছে, প্রায় সাড়ে আট হাজার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী প্রথম ধাপে কোনো কলেজ পায়নি। পরে তারা দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাপে অপেক্ষাকৃত কম মানের কলেজে ভর্তি হয়।
ঢাকা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক রেজাউল হক বলেন, ভালো কলেজগুলোর নিজস্ব স্কুল শাখার শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ আরও কমে যায়। সেই সঙ্গে কেউ কেউ সঠিকভাবে কলেজ পছন্দ নির্ধারণ না করায় তারা প্রথম ধাপে বাদ পড়ে।
ব্যানবেইস ও শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে, সারা দেশে প্রায় ৯ হাজার ১৮১টি কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে মোট আসন রয়েছে ২২ লাখ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পর্যায়ে রয়েছে প্রায় ৯ লাখ আসন এবং সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকে রয়েছে আরও ২ লাখ ৪১ হাজার আসন।
সামগ্রিকভাবে একাদশে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ৩৩ দশমিক ২৫ লাখ, অথচ উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ শিক্ষার্থী। এতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় সাড়ে ২০ লাখ আসন শূন্য থাকছে, যা শিক্ষার্থীর ঘাটতিতে ভুগতে থাকা বেসরকারি কলেজগুলোর জন্য কঠিন বার্তা।
ঢাকা বোর্ডের এক পরিদর্শক জানান, গত বছর অন্তত ২২০টি কলেজে কোনো শিক্ষার্থীই ভর্তি হয়নি। এই সংকট শিক্ষার মান এবং অবকাঠামোগত পরিকল্পনার অভাবকে সামনে নিয়ে এসেছে।
বর্তমানে ৭ শতাংশ কোটার মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অধিদপ্তরের জন্য সংরক্ষিত। তবে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে’ শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্য একটি বিশেষ কোটা চালুর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা কোটার যৌক্তিকতা নিয়েও আলোচনা চলছে।