• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আপনার রেস্তোরাঁর জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে যা করবেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩, ১১:২৬ এএম
আপনার রেস্তোরাঁর জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে যা করবেন
রেস্তোরাঁর খাবার স্বাস্থ্যকর হলে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা সম্ভব । ছবি : সংগৃহীত

আমাদের দেশে আগের তুলনায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ছোট শহর বা বড় শহর সবখানেই চোখে পড়ার মতো বেড়ে গেছে রেস্তোরাঁ। কারণ আজকাল চাকরি বা পড়াশোনার পাশাপাশি অনেকেই এই ব্যবসাতে মন দিচ্ছেন। 

অনেক তরুণ উদ্যোক্তারাও এখন ঝুঁকছেন এই পেশায়। এটি বেশ লাভজনক ব্যবসা হলেও অনেকে আবার তাল মেলাতে না পেরে ঝরেও যাচ্ছে। সব ধরনের ব্যবসাতেই কিছু না কিছু পলিসি থাকে। এখানেও তাই। 

রেস্তোরাঁ ব্যবসায় একটি সাধারণ সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। আর সেটি হলো প্রথম প্রথম রেস্তোরাঁটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করলেও আস্তে আস্তে এই জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। ব্যবসায় লোকসান হতে থাকে। 

এ কারণে রেস্তোরাঁ চালুর কয়েক বছরের মধ্যেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন এমন উদ্যোক্তার সংখ্যাও কম নয়। এই সমস্যার কিছু সমাধান রয়েছে। কী কী কৌশলে একটি রেস্তোরাঁ তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারে চলুন জেনে নিই

আমাদের দেশে দুই ধরনের রেস্তোরাঁ দেখতে পাই। একধরনের রেস্তোরাঁ হলো, আমাদের দেশের প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো পরিবেশন করে। আর দ্বিতীয়টি হলো ভিন্ন ভিন্ন দেশের, ভিন্ন ভিন্ন পদের খাবার পরিবেশন করে। দুটো রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রেই কিন্তু জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য খাবারে নতুনত্ব বা ফিউশন আনার প্রয়োজন রয়েছে। যেমন-

স্পেশাল মেন্যু
রেস্তোরাঁর নতুনত্ব ধরে রাখার চমৎকার উপায় হলো স্পেশাল মেন্যু। একটি নির্দিষ্ট সময় পর ভিন্ন ধরনের বিশেষ খাবার পরিবেশন করুন রেস্তোরাঁয়। হতে পারে সেটি সপ্তাহের নির্দিষ্ট কোনও একটি দিনে অথবা বিশেষ কোনও উৎসব উপলক্ষে। 

প্রতি সপ্তাহে যদি সম্ভব না হয়, তবে মাসে অন্তত কয়েকবার ভিন্ন ধাঁচের খাবার পরিবেশন করার চেষ্টা করুন। এর ফলে আপনার রেস্তোরাঁয় যারা নিয়মিত খেতে আসেন, তারা ভিন্ন স্বাদের কিছু খেতে পারবেন। আবার সেই সঙ্গে একই খাবার রান্না ও পরিবেশন করতে থাকা রেস্তোরাঁর কর্মচারীদেরও একঘেয়েমি দূর হবে।

অতিথির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক
আপনার রেস্তোরাঁয় যারা খেতে আসেন, তাদের সঙ্গে সবসময় ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করুন। তাদের যদি নিদিষ্ট কোনও অনুরোধ কিংবা মতামত থাকে সেটি মন দিয়ে শুনুন ও রাখার চেষ্টা করুন। রেস্তোরাঁয় নতুনত্ব ধরে রাখতে হলে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায়। 

এছাড়াও আপনার গ্রাহকের মাধ্যমেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার এলাকার গ্রাহকরা ঠিক কী ধরনের খাবার আশা করেন। রেস্তোরাঁয় নতুন কোনও মেন্যু চালু করলে তাদের ডাকুন। এবং নতুন খাবারটি একবার চেখে দেখতে বলুন। খাওয়া শেষ হলে তাদের কাছে খাবার কেমন ছিল, জানতে চাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে মেন্যু ঠিক করুন
আগের তুলনায় মানুষ এখন অনেক স্বাস্থ্য সচেতন। খাবারের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকেন। যে খাবারটি খাচ্ছেন, সেটি তাজা উপাদান দিয়ে তৈরি কি না, খাবারে ভেজাল আছে কি না, এসব ব্যাপারে এখন প্রায় সবাই সচেতন থাকেন। এছাড়াও অনেক গ্রাহক আছেন, যারা প্রচলিত মশলাদার ও তৈলাক্ত খাবার বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চান। 

রেস্তোরাঁর জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হলে এসব ব্যাপারে গুরুত্বের সঙ্গে নজর দিন। কিছুটা সময় ও ধৈর্য ধরে এটি মেইনটেইন করতে পারলে আপনি হয়তো এমন কিছু গ্রাহক পাবেন, যারা আপনার নিয়মিত গ্রাহকে পরিণত হয়ে যাবেন। এমনও হতে পারে নির্দিষ্ট গ্রাহকের জন্য করা সেই বিশেষ মেন্যুটি আপনার রেস্তোরাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হয়ে গেল।

রাঁধুনিকে প্রেরণা যোগান
রেস্তোরাঁর গ্রাহকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের পাশাপাশি রাঁধুনিদের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। মালিক হিসেবে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করার দায়িত্ব আপনার। নির্দিষ্ট একটি বাজেট ও নির্দেশনা ঠিক করে সেই অনুযায়ী আপনার রেস্তোরাঁর রাঁধুনিদেরকে তাদের সৃজনশীলতা কাজে লাগাতে বলুন। 

শুধু পছন্দের কিংবা প্রচলিত মেন্যুগুলো নয়, বরং তাদের নিজের ইচ্ছামতো নতুন কিছু তৈরি করতে বলুন। কাজের স্বাধীনতা দিন। এভাবে তাদের নিজস্ব আইডিয়া ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে দিলে তারাও হয়তো নতুন কোনও খাবার তৈরি করে চমকে দেবে আপনাকে।

মেন্যু হালনাগাদ করুন
গবেষকদের মতে, প্রতি ১৮-২৪ মাস পর পর রেস্তোরাঁর মেন্যু হালনাগাদ করা উচিত। এক্ষেত্রে পুরো মেন্যুটাকেই বদলে ফেলতে হবে এমন নয়। যে খাবারগুলো রেস্তোরাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয়, সেগুলোতে আনতে পারেন হালকা কিছু নতুনত্ব। 

অথবা যে খাবারগুলোর গত কয়েক বছরেও কোনও চাহিদা দেখা যায়নি, মেন্যু থেকে বাদ দিতে পারেন সেগুলো। এ ধরনের খাবারগুলো বদলে চালু করতে পারেন নতুন কোনও খাবার। মেন্যুর এই হালনাগাদের ফলে রেস্তোরাঁর নতুনত্বও বজায় থাকবে ।

খাবার ও ব্যবসার কৌশল 
রেস্তোরাঁ ব্যবসায় সফল হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো, এ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে তবেই কাজে নামা। ভালোভাবে প্রস্তুতি না নিয়ে যদি নেমে পড়েন, তাহলে সফলতা আসবে না। তাই রেস্তোরাঁ শুরুর প্রথম থেকেই রেস্তোরাঁর খাবার ও ব্যবসার কৌশল নিয়ে গবেষণা করা উচিত। পরিচিত কেউ এই ব্যবসায় জড়িত থাকলে, পরামর্শ নিতে পারেন তার কাছ থেকে।

খাবারের মান
সবকিছু সঠিকভাবে মেনে চলার পরও যদি খাবারের মান ধরে রাখতে না পারেন তাহলে রেস্তোরাঁর জনপ্রিয়তা হারাতে আপনার বেশিদিন লাগবে না। আমাদের দেশের বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ শুরুতে খাবারের মান ভালো রাখলেও শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারে না। ফলে ধীরে ধীরে কমতে থাকে জনপ্রিয়তা। 

আর খাবারের মান ধরে রাখতে হলে কিছুদিন পর পর খাবার নিজে চেখে দেখা উচিত। কিংবা আপনার পরিচিত কোনও বন্ধুবান্ধবকে চেখে দেখতে বলে তাদের কাছ থেকে সৎ মতামত নিন। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন খাবারের মধ্যে কোনও পরিবর্তন আসছে কি না, যা আপনারে খাবারের মান ধরে রাখতে সাহায্য করবে।

অফার চালু
সব ধরনের কৌশল আপনি মেনে চললেন। এর ফাঁকে মাঝে মাঝে খাবারের অফার চালু করুন। অন্যান্য জনপ্রিয় রেস্তোরাঁয় কীভাবে সে অফার বা প্যাকেজ চালু রেখেছে সেটি একবার গিয়ে ঘুরে দেখে আসুন। আপনার রেস্তোরাঁয়ও সেটি মেনে চলার চেষ্টা করুন। প্রতিযোগিতার যুগে এইটুকু  লড়াই আপনাকে করতেই হবে।

ধৈর্য ধরুন
রেস্তোরাঁ ব্যবসায় প্রতিনিয়তই একজন রেস্তোরাঁ মালিককে নানা চাপের মধ্যে থাকতে হয়। নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যে সমস্যাই আসুক না কেন হাল ছেড়ে না দিয়ে ধৈর্য ধরে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করুন। অনেক সময় এসব চাপ ও সমস্যার ফলে একঘেয়েমি চলে আসতে পারে। তাই সবসময় রেস্তোরাঁয় নিত্যনতুন আয়োজন ও নতুনত্ব আনার চেষ্টা করুন। তবেই আপনি ধরে রাখতে পারবেন আপনার রেস্তোরাঁর জনপ্রিয়তা এবং হতে পারবেন একজন সফল রেস্তোরাঁ মালিক।

Link copied!