• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

টাকা জমানোর চমৎকার উপায়


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৩, ০৩:৫৬ পিএম
টাকা জমানোর চমৎকার উপায়

কথায় আছে টাকা হলো দ্বিতীয় ঈশ্বর। কথাটা একেবারে মিথ্যাও নয়। দৈনন্দিন জীবনযাপন কঠিন হয়ে উঠছে শুধুমাত্র অর্থের অভাবে। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে টাকার গুরুত্ব যেন আরও অনেকগুণ বেড়ে গেছে। আসলে টাকার প্রয়োজন কেবল টাকা দিয়েই মেটানো যায়। অন্যকিছুর বিনিময়ে তা সম্ভব নয়। তাই বর্তমানে বিশ্বে টাকার গুরুত্ব বোঝাতে যাওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনি যদি সত্যিই টাকা জমাতে চান তাহলে একটি আয় থেকে টাকা জমিয়ে বেশিদূর যেতে পারবেন না। ধরে নিন আপনি চাকরি বা ব্যবসা থেকে প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। যার মধ্যে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। আর বাকি থাকে ৫-৬ হাজার টাকা মতো। ধরা যাক প্রতি মাসে আপনি ৬ হাজার টাকা করে জমাবেন। যদি সত্যিকার অর্থেই প্রতি মাসে আপনি ৬ হাজার টাকা করে জমান তাহলে এক বছরে জমবে ৭২ হাজার টাকা। এভাবে যদি আপনি টাকা জমাতে থাকেন তাহলে এক কোটি টাকার মালিক হতে আপনার সময় লাগবে ১৩৯ বছর। সুতরাং টাকা জমিয়ে যদি সত্যিকার অর্থেই ধনী হতে চান তাহলে একাধিক আয়ের পথের কোনো বিকল্প নেই। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক টাকা জমানোর কার্যকারী কিছু উপায়-

টাকা জমানোর মানসিকতা
টাকা খরচ করার মধ্যে আমরা বেশি আনন্দ খুঁজে পাই। সেখান থেকে নিজেকে সংযত করে টাকা জমানোর মানসিকতা গড়ে তোলার জন্য এমন কিছু স্বপ্ন দেখা উচিত যা মন থেকে টাকা জমানোর নেশা হয়ে যাবে। একদিক দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন এবং অন্য দিক দিয়ে টাকা জমাবেন এর সহজ মানে হচ্ছে ফুটো বালতিতে পানি ঢালা। আপনি যদি বর্তমানে ঋণগ্রস্ত থাকেন তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ঋণ পরিশোধ করুন এবং পরবর্তীতে টাকা জমানোতে মনোনিবেশ করুন।

খরচের খাত ও ঋণ না রাখা
প্রতিমাসে আপনি কত টাকা ব্যয় করেন তা জানতে হবে। আপনার থাকা খাওয়া ও অন্যান্য খরচ কত হয় তার হিসাব থাকতে হবে। এই খরচের খাতগুলো যদি আপনি সঠিকভাবে জানতে পারেন তাহলে পরবর্তীতে কিভাবে কমানো যায় তা আপনি বুঝতে পারবেন।

টাকা আলাদা রাখুন
কাজের টাকা সবসময় আলাদা রাখার চেষ্টা করুন। আপনার কাছে জরুরি কিছু দরকার এর জন্য সবসময় কিছু টাকা ক্যাশ রাখতে হবে। কেননা যেকোনো সময় জরুরি কাজের জন্য টাকা দরকার পড়তে পারে। হতে পারে কোনো দুর্ঘটনা অথবা কোন সুযোগ লুফে নেওয়া। এই টাকাগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় হাত দিবেন না। জরুরি প্রয়োজনের টাকা সব সময় আলাদা রাখতে পারলে টাকা জমানোর পদ্ধতি আপনার জন্য আরও সহজ হয়ে যাবে।

ভালো মানের জিনিস কিনুন
যে জিনিস আপনি অনেকদিন ধরে ব্যবহার করবেন তা কেনার আগে এর কোয়ালিটি যাচাই করে নিন। অনেকদিন টেকে এমন জিনিস কিনলে বারবার কিনতে হবে না,দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারবেন ও খরচ হলো না।

বাইরে খাওয়া ছাড়তে হবে
বর্তমানে আমাদের মধ্যে বাইরে খেতে যাওয়া একটি ট্রেডিশন হয়ে উঠছে। আপনি যদি টাকা জমাতে চান বা ভবিষ্যতে আর্থিক স্বাধীনতা লাভ করতে চান তাহলে বাইরে খাওয়া ত্যাগ করুন।

ফ্যাশনে খরচ কমান
আপনি অবশ্যই পোশাক এবং ফ্যাশনের টাকা খরচ করবেন, তবে তা যেন খুব অতিরিক্ত না হয়ে যায়। মনে রাখবেন যদি আপনি জীবনে সফল হতে পারেন তবে আপনার ছেঁড়া লুঙ্গি ও জাদুঘরে ঠাঁই পাবে। আর ব্যর্থ হলে আজকের আপনার এই নামিদামি স্যুট প্যান্ট এরো কোনো মূল্য থাকবে না। আমাদের খরচের একটি অন্যতম বিশাল অংশ এম পরিবহন খাতে চলে যায়। আপনাকে যদি প্রতিদিন বাইরে যেতে হয় তাহলে পাবলিক বাস ব্যবহার করতে পারেন। হেটে যাওয়া রাস্তা হলে হেঁটেই চলে যান। এতে স্বাস্থ্য এবং পথ দুটি ভালো থাকবে।

কেনাকাটার খরচ কমান
কাঁচা বাজার ছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র একবারে কেনার চেষ্টা করুন। দোকানে যাওয়ার আগে একটা লিস্ট করে নিন এবং আপনার কি কি লাগবে তা লিখে নিন। এবং লিস্টের বাইরে একটি পণ্য কেনা থেকেও বিরত থাকুন।

অব্যবহৃত জিনিস 
যে সকল জিনিস আপনি এখন ব্যবহার করছেন না কিংবা দরকার হবে না সেগুলো বিক্রি করে দিন। এতে আপনার হাতে কিছু নগদ টাকা চলে আসবে। সেটি জমিয়ে রাখুন।

লাঞ্চ কেনা বন্ধ করুন 
অধিকাংশ লোক তাদের দুপুরের খাবার কিনে খেতে পছন্দ করেন। যাতে তাদের সময় খরচ কম হয়। কিন্তু, আপনি যদি নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করে খেতে পারেন তাহলে আপনি অনেক টাকা জমা রাখতে পারবেন। দোকানের খাবার ঘরের তৈরি খাবারের তুলনায় ব্যয়বহুল। তাই প্রতিদিন ঘরের তৈরি খাবার নেয়ার চেষ্টা করুন।

অতিরিক্ত খরচ  বন্ধ করুন 
এটা কঠিন বলে মনে হলেও অধিকাংশ মানুষ প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২৫০ থেকে ২৪০০ টাকা পর্যন্ত সেভ করতে পারে। আপনি এখন থেকে জমানো শুরু করলে বছর শেষে যেকোনো বিল ও ঋণ পরিশোধ করতে আপনার সুবিধা হবে।

ভ্রমন খরচ কমাতে হবে
বাইরে ঘোরাফেরা করাতে আপনার খরচ বাড়তে পারে। যাতায়াত খরচ, খাবার, পানীয় ইত্যাদিতে অনেক খরচ হয়ে যায়। তাই, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঘরে বিশ্রাম নিন এবং বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে যান। এতে টাকা জমানো সহজ হবে।

খরচের হিসাব রাখতে হবে
প্রত্যেক সপ্তাহের শেষে কতটুকু খরচ করেছেন হিসাব রাখুন। এতে আপনি আপনার সাপ্তাহিক খরচের হিসাবটি জানতে পারবেন। প্রতিদিন বাস এ যাতায়াত করুন। সপ্তাহ শেষে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, এই সপ্তাহে অপ্রয়োজনীয় কি খরচ করেছেন?

সঞ্চয়ের জন্য আলাদা
অনেকেই সকল খরচের পর যা অবশিষ্ট থাকে সেটা সঞ্চয় করার পরিকল্পনা করেন,যেটি ভুল পদ্ধতি। মানুষের প্রয়োজন কখনই ফুরায় না। ফলে সব খরচ শেষ করার আগেই অর্থ শেষ হয়ে যায়। তাই আগে ঠিক করতে হবে মাসে কতটুকু সঞ্চয় করবেন। আর হাতে টাকা আসার পর সেই পরিমাণ অর্থ আলাদা করে রেখে দিতে হবে। এরপর যতটুকু দিয়ে মাসের খরচ চালানো চেষ্টা করতে হবে।

প্রয়োজনীয়তার মাত্রা বোঝা
ভবিষ্যত পরিকল্পনা অনুযায়ী সঞ্চয় করা উচিত। সেই সঙ্গে কোন খরচটা বেশি জরুরি সেটা চিহ্নিত করা জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি সঞ্চয় করতে পারেন।

বড় অংকের টাকা জমানোর জন্য নিজের ওপর বাড়তি চাপ নেওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং এতে মাঝপথে সঞ্চয়ই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যতটুকু আপনার পক্ষে সঞ্চয় করা সম্ভব সে অনুযায়ী লক্ষ্য স্থির করতে হবে। আর একবার অভ্যাস হয়ে গেলে পরে আর অসুবিধা হয় না।

Link copied!