বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চরিত্রহননের দুঃসাহস প্রদর্শন করছে।”
সোমবার (১৪ জুলাই) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা বা উপস্থিতির প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে যাদের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলার আলোকে আজীবন বহিষ্কারের মতো সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দৃঢ় দলীয় অবস্থান থাকা সত্ত্বেও একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে আমাদের দল এবং শীর্ষ নেতৃত্বের শালীনতা ও চরিত্রহননের দুঃসাহস প্রদর্শন করছে। সার্বিক বিবেচনায় আমাদের বেশ-কয়েকটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করা প্রয়োজনীয় বলে মনে করছি। কারণ বিষয়গুলো জনমনে বেশ কিছু প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কোনো রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার হচ্ছে কিনা এবং এর মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করার জন্য বিশেষ কোনো মহলের প্ররোচনায় এই ধরনের ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “পূর্বপরিকল্পিতভাবে ৯ জুলাইয়ের ঘটনা ১১ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর, সবচেয়ে প্রাইম টাইমে ইন্টারনেটে ছড়ানো শুরু হয়। পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আইডি ও পেজ থেকে আগে থেকেই তৈরি করে রাখা ফটোকার্ডগুলো অনলাইনে ছড়ানো শুরু হয়। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অনলাইনে ভুয়া তথ্য প্রচারের ক্যাম্পেইন শুরুর আগে থেকেই অপপ্রচার সামগ্রী তৈরি করে রাখা হয়েছিল।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অপরাধীর জন্য কোনো অনুকম্পার সুযোগ যেমন নেই, তেমনি পক্ষ অবলম্বনের প্রশ্নই উঠে না। শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় পদ থেকে অপসারণের এমন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপকে স্বাগত না জানিয়ে পরিকল্পিতভাবে চরিত্রহনন; দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের আইনি সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার থেকে আমাদের বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ নেই। নিহত সোহাগের রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তিনি দেশের একজন নাগরিক, যিনি সন্ত্রাসের নির্মম শিকার। ফলে তার পরিবারের সঙ্গে আমরাও এই অপকর্মের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুত কার্যকর করার বিষয়ে আমাদের দলীয় অবস্থান সুদৃঢ় এবং অপরিবর্তিত। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধানের জন্য আমরা উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবেন এবং তা জনসম্মুক্ষে প্রকাশ করবেন।”
এ বিষয় নিয়ে যারা রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট এবং জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ ও অনিশ্চিত করতে চান এবং প্রকারান্ত ফ্যাসিবাদ উত্থানের পথ কারা সৃষ্টি করতে চান, তাদের চিহ্নিত করা ও প্রতিহত করার প্রত্যয়ের কথাও জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “বিএনপির অবস্থান বরাবরের মতই স্পষ্ট, অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। ব্যক্তির অপরাধের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “শতবাধা অতিক্রম করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের মালিকানা মানুষের কাছে ফেরত দেওয়াই আমাদের একমাত্র অগ্রাধিকার। বিগত ১৭ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামে আমাদের কষ্টার্জিত সফলতা ব্যর্থ করার সুযোগ নেই।”
117661
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “সুপরিকল্পিতভাবে দেশের বৃহত্তম ও জনপ্রিয় দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দলের শীর্ষ নেতা যিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, যিনি দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে পরিচালিত স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের প্রধান নেতা ও সাফল্যের কারিগর এবং গণঅভ্যুত্থানের প্রাণ পুরুষ। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ এমন বক্তব্য প্রদানের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করি। দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ আজ উন্মোচিত। ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো অপচেষ্টাই আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা হতে পারবে না। সকল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে সঙ্গে নিয়ে এদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংকল্পে আমরা বরাবরের মতই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”