• ঢাকা
  • বুধবার, ০৯ জুলাই, ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মুহররম ১৪৪৬

মা-মেয়ের বন্ধুত্বের শিকড় যেভাবে গড়ে ওঠে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৫, ১০:০৭ পিএম
মা-মেয়ের বন্ধুত্বের শিকড় যেভাবে গড়ে ওঠে
ছবি: সংগৃহীত

মা-মেয়ের সম্পর্ক পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও আবেগঘন সম্পর্কগুলোর একটি। এই সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে জন্মসূত্রে জড়ানো ভালোবাসা, নির্ভরতা, যত্ন আর দায়িত্ববোধ। তবে ভাবুন তো, সম্পর্কটি শুধুমাত্র 'মা' ও 'মেয়ে' হয়েই সীমাবদ্ধ না থেকে যদি বন্ধুত্বের গভীরতায় পৌঁছে যায়। সেই সম্পর্ক হয়ে উঠবে আরও বেশি সৌন্দর্যময় এবং সহনশীল। মা যখন মেয়ের বন্ধু হয়ে ওঠেন, তখন সেই মেয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাহস আর ভরসা খুঁজে পান। মা-মেয়ের ভালোবাসাও সময়ের সঙ্গে আরও দৃঢ় হয়ে উঠে।

জানেন কি, কীভাবে মা-মেয়ের মধ্যকার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কোন কোন অভ্যাস, অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এটি পরিপূর্ণতা পায়।  এই বন্ধুত্ব তাদের জীবনকে কীভাবে বদলে দেয়।

বিশ্বাসের বীজবপন থেকেই শুরু

মা-মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে বিশ্বাস দিয়ে। ছোটবেলায় মা যখন সন্তানের প্রতিটি প্রয়োজনে পাশে থাকেন, তার কান্না-হাসিতে সাড়া দেন, তখন শিশুর মনে মায়ের জন্য নির্ভরতার ভিত্তি তৈরি হয়। এই ভিত্তিই পরবর্তী সময়ে বন্ধুত্বের শিকড় হিসেবে কাজ করে। বিশ্বাস গড়ে ওঠে প্রতিদিনের ছোট ছোট কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে। মা যখন মেয়ের অনুভূতিকে সম্মান করেন, তার সমস্যাকে গুরুত্ব দেন, তখন মেয়ে বুঝে যায়—‘আমার পাশে মা আছে, যে আমাকে বিচার নয়, বোঝার চেষ্টা করবে।’ এই বিশ্বাস বন্ধুত্বের প্রথম শর্ত।

মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বড়

মেয়েরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভেতরে নানা জিজ্ঞাসা, ভয়, আবেগ ও কৌতূহল তৈরি হয়। এই সময় মা যদি শুধু নির্দেশক না হয়ে, একজন মনোযোগী শ্রোতা হন, তাহলে মেয়ে নিজের মনের কথা খুলে বলার সাহস পায়। মা যদি কখনো মেয়ের অনুভূতি, সমস্যাকে তুচ্ছ মনে না করেন। বরং ধৈর্য নিয়ে শোনেন, তাহলে মেয়ে মায়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্ক গড়ে তোলে। তার অনুভূতিগুলো চাপা পড়ে না। বরং সেগুলো একটি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায় মায়ের হৃদয়ে।

একসঙ্গে সময় কাটানো—বন্ধুত্বের রসদ

একটি সম্পর্ক গভীর হয় তখনই, যখন একে অপরের সঙ্গে সময় কাটানো যায়। মা ও মেয়ের বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে হলে, তাদের একে অপরের সঙ্গে খোলামেলা সময় কাটানো দরকার। যেমন, একসঙ্গে রান্না করা, সিনেমা দেখা, হাঁটতে যাওয়া, গল্প বলা-শোনা, মেয়ে যখন স্কুল থেকে ফেরে তার দিনটি কেমন কেটেছে তা জানা। এই সময়গুলো ছোট মনে হলেও এগুলোই সম্পর্কের বন্ধনকে দৃঢ় করে এবং বন্ধুত্বের পটভূমি তৈরি করে।

শাস্তির ভয় নয়, বোঝাপড়া হবে বন্ধুত্বের ভিত্তি

মেয়ে কোনো ভুল করলে অনেক মা খুব কড়া হয়ে যান, ভয় দেখান। এর ফলে মেয়ে ভয় পেয়ে চেপে রাখে নিজের ভুল, নিজের অনুভূতি। এতে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ না হয়ে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। একজন মা যদি বন্ধুর মতো বলে, “ভুল করতেই পারো, আমি পাশে আছি” বা “চলো একসঙ্গে সমাধান খুঁজি”—তাহলে সেই সম্পর্ক সত্যিকারের বন্ধুত্বে পরিণত হয়।

আত্মমর্যাদার চর্চা

মা নিজেই যদি আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদার চর্চা করেন, তাহলে মেয়ে তার কাছ থেকেই শেখে কীভাবে নিজের কণ্ঠস্বর খুঁজে পেতে হয়, কীভাবে নিজের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হয়। একজন মায়ের জীবনদর্শন, সংগ্রাম ও সাহস যখন মেয়ে প্রত্যক্ষ করে, তখন সে মায়ের সঙ্গে একটি গভীর মানসিক বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে। তখন সেই সম্পর্কে  মানসিক শক্তির আদান-প্রদান হয়।

পারস্পরিক সম্মান

মা-মেয়ের বন্ধুত্ব তখনই সম্ভব হয়, যখন তারা একে অপরকে সম্মান করেন। মা যদি মেয়েকে ‘শুধু শিশু’ না ভেবে ‘একজন ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে মূল্যায়ন করেন, তার মতামতকে গুরুত্ব দেন, তখন মেয়েও মাকে বোঝার চেষ্টা করে। এই সম্মানবোধ পারিবারিক বন্ধনকে পরিণত করে আন্তরিক বন্ধুত্বে। তখন মেয়ে মাকে শুধু অভিভাবক হিসেবে নয়, একজন শ্রেষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দেখতে শুরু করে।

পরিণত বয়সে বন্ধুত্বের নতুন রূপ

যখন মেয়ে বড় হয়, নিজের জীবন গড়তে থাকে, তখন অনেক সময় দেখা যায় মা-মেয়ের সম্পর্ক নতুন করে গড়ে ওঠে। জীবনসঙ্গী নির্বাচন, ক্যারিয়ার, পরিবার, সন্তান সবকিছুতে মা হয়ে ওঠেন মেয়ের পরামর্শদাতা, শ্রোতা এবং ভালোবাসার আশ্রয়। এই সময় মেয়ে বুঝে ওঠে, মায়ের অভিজ্ঞতা কেবল উপদেশ নয়, বরং সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক বন্ধুর গল্প। তখন বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়।

শাসনে থাকবে বন্ধুত্ব

মেয়ের বন্ধু হওয়ার মানে এই নয়, শাসন থাকবে না
মা যখন মেয়ের বন্ধু হন, অনেকেই ভাবেন—তাহলে কি মা আর শাসন করবেন না? না, বরং বন্ধুত্বের সম্পর্কেই শাসনের একটি মানবিক রূপ থাকে। একজন বন্ধু যেমন ভালো চায়, তেমনি ভুলে সাবধান করে। মা-মেয়ের বন্ধুত্বেও এই ভারসাম্য থাকা জরুরি। শুধু নিয়ম চাপিয়ে না দিয়ে, নিয়মের পেছনের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিলে মেয়ে সেটিকে শ্রদ্ধা করে গ্রহণ করবে।

সময়ের সঙ্গে সম্পর্কের রূপান্তর

সন্তান জন্ম দিয়ে মা দিনরাত যত্ন নেন।। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন গাইড, তারপর বন্ধু। সময়ের সঙ্গে এই পরিবর্তন স্বাভাবিক। তবে অনেক মা সন্তান বড় হলেও ‘শুধু শাসন করাই দায়িত্ব’ ভাবেন, যা সম্পর্কের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। মা যখন বুঝতে পারেন—মেয়েকে বোঝার সময় হয়েছে, তখনই সম্পর্ক নতুন রূপ নেয়। শুরু হয় বন্ধুত্ব।

একজন মা তার মেয়ের জীবনের প্রথম ও সবচেয়ে নিরাপদ বন্ধু হতে পারেন। সেই বন্ধুত্বই একদিন পরিণত হয় এমন এক বন্ধনে, যা বয়স, দূরত্ব বা সময় কিছুই ভাঙতে পারে না।

Link copied!