যে মানুষটি সারাজীবন তার প্রিয়জনদের আগলে রাখার দায়িত্ব পালন করেছে। কোনোদিন কোনো অভাব বুঝতে দেননি আপনাকে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও যত্ন নেওয়া উচিত সঠিকভাবে। চলুন দেখে নিই কী করে পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের যত্ন নেওয়া যায়-
তাদের সময় দেওয়া
প্রবীণ বয়সে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটি হলো সঙ্গ বা সময়। নানা ব্যস্ততার কারণে অনেকেই তার পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যটির খোঁজ নিতে পারেন না। কিন্তু এই বিষয়টিও মাথা রাখতে হবে যে, বয়স্করা এই এটি খুব বেশি অনুভব করেন। একাকীত্ব তাদের বিষণ্নও করে তুলতে পারে। যা পরে তাদের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আসলে যতই বয়স বাড়তে থাকে তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি ততই ভারী হতে থাকে। আর এই সমস্ত অভিজ্ঞতার গল্প একটু একটু করে শোনাতে ইচ্ছা করে। তখনই প্রয়োজন হয় কোনো সঙ্গ। আর সেটি নাহলে মন খারাপ হতে থাকে। তাই যতটা সম্ভব পরিবারের প্রবীণ মানুষটিকে সময় দিন।
নমনীয় হতে হবে
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মেজাজেরও পরিবর্তন হতে থাকে। কেউ কেউ অতিরিক্ত খিটখিটে হয়ে যান, আবার কেউ কথাবার্তা কমিয়ে ফেলেন, কারো আবার আচরণে ছেলেমানুষী মনোভাব চলে আসে। যে পরিবর্তনই আসুক না কেন, পরিবারের গুরুজন হিসেবে তাকে ভালো রাখার, তার পাশে থাকার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। প্রবীণদের প্রতি নমনীয় হোন, তাদের প্রতি সহনশীল আচরণ করুন।
প্রতিক্রিয়া না দেখানো
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক পরিবর্তন আসে মানুষের । তাছাড়া জেনারেশন গ্যাপের কারণে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি মিলতে নাও পারে। এজন্য বৃদ্ধরা যেকোনো সময় যেকোনো মন্তব্য করে ফেললে সে বিষয়ে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ক্ষমাশীল হোন। তার অনেক আচরণ হয়তো আপনার পছন্দ হবে না, তবুও তার সঙ্গে রাগ না দেখিয়ে চুপ থাকুন। কারণ এক সময় প্রবীণরাও শিশুর মতোই হয়ে যান।
প্রাধান্য দিন
প্রবীণদের মন ভালো রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে তাদের গুরুত্ব দেওয়া, যেকোনো বিষয়ে তাদের মতামতের প্রাধান্য দেওয়া। বাড়ির বয়স্ক ব্যক্তিরা যদি বুঝতে পারেন তারা পরিবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এটি তাদের নিজেকে সুস্থ রাখার অন্যতম নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। একটি শিশুকে বড় করতে যতটা স্নেহ প্রয়োজন হয়, বৃদ্ধ বা বয়স্ক ব্যক্তিরাও ততটা স্নেহ আর মনযোগের দাবিদার।
খাবারের বিষয়ে সতর্কতা
আপনার পরিবারের প্রবীণ সদস্যটি কী খাচ্ছেন, প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছেন কি না কিংবা শরীরের ক্ষতি হয় এমন খাবার গ্রহণ করছেন কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে নানা ধরনের রোগবালাই বাসা বাঁধে। এসব রোগের সঙ্গে খাবার গ্রহণেও সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়ে যায়। তাই সীমাবদ্ধতা মেনে তার পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।
বিনোদনের ব্যবস্থা করুন
বয়স্ক ব্যক্তিদের মন প্রফুল্ল রাখতে বিনোদনের ব্যবস্থা করুন। কী তাদের মন ভালো রাখতে পারছে সে দিকে মনযোগী হোন। কেউ কেউ টেলিভিশন দেখতে পছন্দ করেন, কেউ কেউ আবার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন, কেউ কেউ রান্নাবান্না করতে ভালবাসেন। তাদের পছন্দের দিকে লক্ষ্য রেখে বিনোদনের ব্যবস্থা করুন।
নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে
তাকে নিয়মিত শরীর চেকআপ করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ খাওয়াতে হবে, কোনো ব্যায়াম করতে হলে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই সময় বয়স্ক বাবা-মা হয়তো কখন কোন ওষুধ খেতে হবে তা ভুলে যেতে পারেন। নিজেরাই মনে রেখে তাকে নিয়ম করে ওষুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।