ভুলে যাওয়া বা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলার রোগকে মূলত ডিমেনশিয়া বলা হয়। ডিমেনশিয়ার অনেকগুলো ধরন রয়েছে, যার মধ্যে আলঝেইমারস সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। চিকিৎসক অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ৬০-৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই এটি দেখা যায়। সাধারণত ষাটোর্ধ বয়সী মানুষের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। তবে বিভিন্ন কারণে এর চেয়ে অল্প বয়সের মানুষেরও এ ধরনের স্মৃতিক্ষয় রোগ দেখা দিতে পারে। চলুন আজ জেনে নেব আলঝেইমারস রোগ প্রতিরোধ করার কিছু উপায়।
রোগের লক্ষণ
আলঝেইমারস রোগের লক্ষণগুলোকে ৩টি স্তরে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রাথমিক লক্ষণ, মাধ্যমিক লক্ষণ ও গুরুতর লক্ষণ।
প্রাথমিক লক্ষণ
- তারিখ ও সময় ট্র্যাক হারিয়ে ফেলা
- সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হওয়া
- প্রতিদিনের কাজ সময়মতো করতে না পারা
- সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলা
- কথা বলতে অসুবিধা
মাধ্যমিক লক্ষণ
- কোনো কারণ ছাড়াই রেগে যাওয়া
- কাছের মানুষদের চিনতে না পারা
- পড়তে ও লিখতে অসুবিধা
- নতুন কাজ শিখতে ও বুঝতে না পারা
গুরুতর লক্ষণ
- ওজন কমে যাওয়া
- খিঁচুনি হওয়া
- ত্বকের সংক্রমণ
- খাবার গিলতে সমস্যা
- প্রস্রাব কমে যাওয়া
আলঝেইমারস প্রতিরোধে করণীয়
রক্তে কোলেস্টেরল ও হোমোসিস্টিনের পরিমাণ বাড়লে অ্যামাইলয়েড বিটা প্রোটিনের উৎপাদন বেশি হয় তখন আলঝেইমারসের লক্ষণ প্রকট হয়। আলঝেইমারসের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য কিছু হাইপার-থাইরয়েডিজম, ওবেসিটি ও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এ্যাপনিয়া এগুলোকে চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এ ছাড়া ধূমপান, মদ্যপান না করা, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা কার্যকরী। লাল চাল, লাল আটা, সামুদ্রিক মাছ, শিমের দানা ও শিম, বাদাম, সবুজ শাকসবজি খাওয়া ভীষণ প্রয়োজন। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বাদাম কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
এ ছাড়া রেড মিট, মিষ্টিজাতীয় খাবার যত কম খাওয়া যায়, ততই ভালো। নিয়মিত শরীরচর্চা, মেডিটেশন, ব্রেইন স্টর্মিং হয় এমন কাজ, খেলা এগুলোর চর্চা থাকা প্রয়োজন। অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণেও কগনিটিভ ডিসফাংশন হতে পারে। মানসিক উদ্বেগের সঙ্গে ভুলে যাওয়া ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পরিমিত মদ্যপান করা জরুরি।
ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে আলঝেইমারসের ঝুঁকি কমাতে হলে। ওজন বশে রাখলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। ডিমেনশিয়া আসলে বার্ধক্যের অসুখ। ডিমেনশিয়া যদি আটকে অন্তত ৮০ বছর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়, তা হলেও সুস্থ থাকা যায়। এ ছাড়া ‘কগনিটিভ ফাংশন’ আরও সক্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে কয়েকটি দিকে নজর দেওয়া জরুরি। মানসিকভাবে ভালো থাকতে হবে। মনের যত্ন নিতে হবে। পছন্দের কাজ করতে হবে। মস্তিষ্ককে নিস্তরঙ্গভাবে বয়ে যেতে দিলে চলবে না। মাথা খাটাতে হবে।
সূত্র: আনন্দবাজার