কিডনি হলো মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শিমের মতো দেখতে এবং দেহের রেচনতন্ত্রের অংশ। এর প্রধান কাজ হলো রক্ত ছেঁকে বর্জ্য পদার্থ (যেমন ইউরিয়া) বের করা এবং প্রস্রাব তৈরি করা। কিডনি শরীরের তরল ও খনিজ পদার্থের ভারসাম্যও রক্ষা করে।
কিডনি কখন অশনি সংকেত দেয়, জেনে নিন
প্রস্রাব কম হওয়া
প্রস্রাবের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়া বা দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখার অভ্যাস কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অপর্যাপ্ত পানি পানের ফলে প্রস্রাব ঘনীভূত হয়, যা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। এই সংক্রমণ মূত্রথলি থেকে কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে, যাকে ‘পায়োলোনেফ্রাইটিস’ বলা হয়। সময়মতো চিকিৎসা না করালে এই সংক্রমণ কিডনির স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে বা বাড়ির বাইরে- টয়লেটের অপ্রতুলতার কারণে প্রস্রাব চেপে রাখার যে প্রবণতা, তা সংক্রমণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি কিডনির ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে এবং এর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
ঘনঘন প্রস্রাব: যখন এটি রোগের লক্ষণ
অন্যদিকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিবার প্রস্রাব হওয়াও উদ্বেগের কারণ হতে পারে। যদিও বেশি পানি পান করলে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু এর সঙ্গে যদি জ্বালাপোড়া, তলপেটে ব্যথা বা প্রস্রাবের রঙে পরিবর্তন (যেমন লালচে বা ঘোলাটে) ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়, তবে এটি ইউরিনে ইনফেকশনের স্পষ্ট ইঙ্গিত। ডায়াবেটিসের মারাত্মক রোগ নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও ঘনঘন প্রস্রাব হতে পারে। রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ কিডনিকে বাড়তি পানি, মূত্র হিসাবে ফিল্টার করে বের করতে বাধ্য করে, যা দীর্ঘ মেয়াদে কিডনির ফিল্টারগুলোকে নষ্ট করে দেয়। বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেলেও প্রস্রাবের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয় এবং বারবার প্রস্রাবের বেগ আসে, যা কিডনির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রস্রাবের পরিমাণ বা সংখ্যায় সামান্য পরিবর্তন স্বাভাবিক হলেও, অস্বাভাবিকতা একটি বড় রোগের পূর্বাভাস হতে পারে। কিডনিকে সুস্থ রাখতে দৈনিক অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করুন, প্রস্রাবের বেগ এলে আটকে রাখবেন না এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। আপনার শরীরের সংকেতগুলো বুঝুন এবং যেকোনো বড় ধরনের পরিবর্তনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সামান্য সচেতনতাই পারে আপনাকে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ এবং অন্যান্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে।