সাগু বা সাবুদানা একটি স্টার্চ জাতীয় খাবার যা একটি স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। আমাদের দেশে সাধারণত জ্বর হলে বা রোগীদের এই খাবারটি খাওয়ানো হয়।
সাবুদানা
অনেকেরই ধারণা যে সাবুদানা এক ধরনের ফল যা গাছে ধরে। আসলে এটি কোনো ফলই নয় । পাম জাতীয় গাছের মূল (ট্যাপিওকা) থেকে সাদা দুধের মতো এক প্রকারের রস নিষ্কাশন করে সেটা প্রথমে শুকিয়ে নেওয়া হয় ও ময়দার মতো পাউডার এ পরিণত করা হয় । তারপর সেটাকে যান্ত্রিক পদ্ধতি দ্বারা ছোট ছোট দানায় পরিণত করা হয়, যেটাকে সাবুদানা বা সাগু বলা হয়।
সাবুদানার পুষ্টিগুণ
যদিও অন্য় শস্যদানার তুলনায় সাবুদানায় পুষ্টিগুণের পরিমাণ কম, কিন্তু অন্য সবজির সঙ্গে মিশলে এটি অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। ১০০ গ্রাম সাবুদানায় থাকে ৩৩২ ক্যালোরি, ১ গ্রাম প্রোটিন, ১ গ্রাম ফ্যাট, ৮৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম ফাইবার এবং ১১ শতাংশ জিংক।
সাবুদানার উপকারিতা
- সাবুদানায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে। এতে করে হৃদরোগজনিত সমস্যা কম হয়।
- সাবুদানাতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও অস্টিওপোরোসিসের মতো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
- প্রচুর পরিমাণে ট্যানিন ও ফ্লেভানয়েড নামে দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে ফ্রি রেডিক্যালগুলো নষ্ট করে আমাদের ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধি থেকে রক্ষা করে ।
- সাবুদানা সাধারণত সরল শর্করা জাতীয় খাদ্য । এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, এ ছাড়াও প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ লবণও সামান্য পরিমাণে থাকে । যার কারণে এটি খাওয়ার পরে শরীরে তৎক্ষণাৎ শক্তি পাওয়া যায়। এই কারণে অনেকে ব্যায়াম করার আগে বা পরে সাবুদানা খেতে পছন্দ করেন।
- সাবুদানাতে আছে জলে দ্রবণীয় তন্তু বা আঁশ। যা পৌষ্টিক নালীকে পরিষ্কার রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের মতো সমস্যা দূরে রাখে । এ ছাড়াও হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
- সাবুদানা একটি ক্যালোরি-ঘন খাবার এবং যাদের ওজন বাড়াতে হবে তাদের জন্য উপকারী। এটি ক্রীড়াবিদ এবং উচ্চ শক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এমন লোকদের জন্যও এটি একটি ভালো খাবারের বিকল্প। এ ছাড়া অনেক শিশুদের ওজন বাড়াতে সাবুদানা খাওয়ানো হয়।
- সাবুদানা গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য একটি উত্তম খাবার। এটি গর্ভবতী নারীদের ক্লান্তি দূর করে। এ ছাড়া সাবুদানায় থাকা ভিটামিন বি৬ এবং ফোলেট ভ্রূণের বিকাশ ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তবে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে সাবুদানা না খাওয়াই ভালো।
- সাবুদানা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে সহায়তা করে । সাবুতে থাকা বিশেষ প্রোটিন অকালে চুল ঝরে পড়া রোধ করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, খুশকির হাত থেকে রক্ষা করে, এমনকি চুলের বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণ করে ।
- সাবুদানা খাওয়ার ফলে তেমন কোনো অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। কিন্তু প্রক্রিয়াকরণের আগে সাবু খেলে বমি, লিভারের ক্ষতি হতে পারে। তাই সরাসরি সাগু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
যেভাবে খাবেন
সাবুদানা সাধারণত পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেতে হয়। এটি যে কোন সবজির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এটি দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় বা সাবুদানার খিচুড়ি বানিয়েও খাওয়া যায়। অনেকে আবার সাবুদানার বড়া বা ক্ষীর বানিয়েও খায়। এ ছাড়া যে কোন ডেজার্ট বা জুসেও মিশিয়ে খাওয়া যায়।
কীভাবে চিনবেন
সাবুদানা নকল তৈরি হয় আটা বা ময়দা দিয়ে। তাই এটি আসল না নকল সহজেই পরীক্ষা করে বের করা যায়।
- আসল সাবুদানা পানিতে দিলে গলে যায় না, কিন্তু নকল সাবুদানা পানিতে দিলে দ্রুত গলে পানির সঙ্গে মিশে যায়।
- আসল সাবুদানা পানিতে দেয়ার পর নাড়াচাড়া দিলেও পানি স্বচ্ছ ও পরিস্কার থাকে, ঘোলাটে হয়না। কিন্তু নকল সাবুদানা পানিতে মেশালে পানি ঘোলাটে হয়ে যায়।
আপনার মতামত লিখুন :