চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় বিয়ের জন্য টাকা নিয়েও পাত্রী না দেখানোর কারণে হাবিব উল্লাহ (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বর কামাল মিরাকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুর রকিব এসব তথ্য জানিয়েছেন।
নিহত হাবিব উল্লাহর বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। তিনি মতলব উত্তর উপজেলার পুটিয়ারপাড় এলাকার মনোয়ারা বেগম মনুর স্বামী। হত্যাকাণ্ডে জড়িত কামাল মিরা (৫৫) বরিশালের চরমোনাই উপজেলার রাজারচর এলাকার মৃত খালেক মিরার ছেলে।
পুলিশ সুপার জানান, ১১ জুলাই চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় ৩নং সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নে একটি পুকুর থেকে হাবিব উল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও মূল আসামি মোহাম্মদ কামাল মিরাকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি স্বীকার করে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য মেয়ে দেখানোর কথা বলে হাবিব উল্লাহ তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু পরবর্তীতে মেয়ে না দেখানোর কারণে দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ও ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে আসামি কামাল মিরা ভুক্তভোগী হাবিব উল্লাহকে তল পেটে ও অণ্ডকোষে লাথি মেরে পুকুরে ফেলে দেন। পরে সে সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জে পালিয়ে যান।
পুলিশ সুপার বলেন, আসামি কামাল মিরার ১ম স্ত্রী তার সংসার ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ায় সে ২য় বিবাহ করার জন্য মনস্থির করে। তখন হাবিব উল্লাহর সঙ্গে পরিচয় হলে তাকে ২য় বিবাহ করানোর মতো মেয়ে তার কাছে আছে বলে প্রস্তাব করেন। সেই সুবাদে আনুমানিক ১ মাসে আগে হাবিব উল্লাহ তার কাছ থেকে নগদ ৬০০০ টাকা নেন এবং গত ১০ জুলাই হাবিব উল্লাহ মতলব উত্তর থানাধীন তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় কামাল মিরাকে মেয়ে দেখানোর কথা বলে পুনরায় নগদ ৪০০০ টাকা নেয় এবং তারা উভয়ই বিকেলের দিকে মুরাদপুর এলাকা থেকে মতলব উত্তর থানা এলাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে সন্ধ্যার সময় প্রথমে শাহ্ সোলেমান লেংটার মাজারে আসে।
মাজারে অনেকটা সময় ঘুরাঘুরি করার পর কামাল মিরা হাবিব উল্লাহকে কখন মেয়ে দেখতে যাবে এ কথা বলে তাগিদ দিলে রাত ১১টার দিকে গোপালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে আসে। সেখানে বসে তারা উভয়ে গল্প করার সময় হাবিব উল্লাহ তাদের সাথে থাকা মোবাইল বন্ধ করে দেয়। উভয়ের মধ্যে পুকুরের পাকা সিঁড়ির ওপর ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এই ধস্তাধস্তির ফলে তারা উভয়ই পাকা সিঁড়ির মধ্যে পড়ে গিয়ে মুখমণ্ডলসহ শরীরে জখমপ্রাপ্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, একপর্যায়ে তারা উভয়ই পানিতে পড়ে যায়। এ সময় কামাল মিরা হাবিব উল্লাহর তলপেটে ও অণ্ডকোষে লাথি মারলে সে একটু দূর্বল হয়ে যায়। তখন তাকে পানিতে চুবিয়ে ধরে কামাল মীরা। এই সময় হাবিব উল্লাহ কামালের ডান হাতের দুটি আঙ্গুলে কামড় দিয়ে জখম করে। পরবর্তীতে হাবিব উল্লাহ নিস্তেজ হয়ে পড়লে কামাল সাতরে পুকুরের অপর প্রান্ত দিয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার কদমতলী নামক এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়। বিভিন্ন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।