• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

‘কিন্ডারগার্টেনে খরচ বেশি, তাই পড়াতে পারি না’


বিজন কুমার
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৪, ১০:০৫ পিএম
‘কিন্ডারগার্টেনে খরচ বেশি, তাই পড়াতে পারি না’
অভিভাবকের সঙ্গে শিক্ষার্থী। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

বছিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়েকে ভর্তি করাতে এসেছেন সম্পা নামের এক অভিভাবক। সাংসারিক খরচের পাশাপাশি সন্তানের শিক্ষাখাতে ব্যয় নিয়ে কথা হয় এই নারীর সঙ্গে। আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “সরকারি স্কুলে পড়ালেখার খরচ অনেক কম। তাই আমার বাচ্চাকে এখানে ভর্তি করাতে এসেছি। তবে খাতা-কলম অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বেশি।”

কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন, “ওসব স্কুলে ইচ্ছা থাকলেও পড়াতে পারছি না। কারণ খরচ অনেক বেশি। এখানেও (বছিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) পড়ালেখার মান ভালো। আমার ছেলেও পড়েছে এই স্কুলে।”

অপরদিকে কথা হয় কিন্ডারগার্টেন স্কুলের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক মিতুর সঙ্গে। খরচের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, “বর্তমানে ঊর্ধ্বগতির বাজারে কলমের দাম আর স্কুলের বেতন বেড়েছে। তাই তাল মিলিয়ে চলতে হচ্ছে। আগে বেতন দিতাম ১৮০০ টাকা। এখন দেই ২ হাজার টাকা। আমি মনে করি, এতে মধ্য বা নিম্নবিত্ত পরিবারের পড়ার খরচ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।”

শুধু এই দুইজন অভিভাবক নয়। তাদের মতো দুই শ্রেণির বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবকের কথা একই রকম। শিক্ষার মান নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও। চলমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে সন্তানের শিক্ষা ব্যয় নিয়ে নাভিশ্বাস ওঠার চিত্র একদম স্পষ্ট তাদের কথায়।

দেশে সবকিছুর দাম বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাখাতের ব্যয়ের পরিমাণ। আর মরার ওপর খড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর বাড়তি ফি আদায়।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের ভাষ্য, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর বেতন নির্ধারণ একটি নিয়মের গণ্ডিতে নিয়ে আসা হলে, তা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের দাবি, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর ক্ষেত্রে তৈরি করা হয়েছে বেতন নীতিমালা। এতে দ্রুতই সমাধান আসবে বলে প্রত্যাশা তাদের।

আমেনা নামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, “আমি আমার বাচ্চাকে ওয়াশপুর থেকে স্কুলে নিয়ে আসি। শিক্ষার মান যদি ভালো না হতো, তাহলে তো নিয়ে আসতাম না। এই স্কুলে পড়ালেখার খরচ তুলনামূলক কম। কিন্তু খাতা-কলমের দাম বাড়ায় একটু সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।”

শফিকুল ইসলাম নামের এক কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, “কিন্ডারগার্ডেনের পড়ালেখা ভালো। বড় বড় স্কুলগুলোতে খরচ একটু বেশি নেয়। আমার মেয়ের ভর্তির সময় ২২ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়েছে। রি-এডমিশনের সময় নেবে ১০ হাজার টাকা। আর ছোট ছোট স্কুলে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় ভর্তি করানো যায়। বেতন বেশি হওয়ার কারণ আমার জানা নেই। তবে স্বল্প আয়ের মানুষদের এসব স্কুলে পড়াতে গেলে একটু সমস্যার মুখে পড়তে হয়।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বলেন, “কিন্ডারগার্টেন যেসব স্কুলের একজন শিক্ষকের বেতন ও প্রতিষ্ঠানের ভাড়া ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের বেতন থেকেই আসে। এতে তাদের বেতনের হার বেশি। আর সরকারি স্কুলের বেতন সম্পূর্ণ সরকার দেয়। প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা ভাড়া নেই। এতে করে বেতন কম। সরকারি স্কুলগুলোর তৃতীয় শ্রেণির বেতন মাত্র ৬ টাকা। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বেতন হাজার টাকার ওপরে। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর বেতন হার একটি নিয়মতান্ত্রিক গণ্ডিতে রাখা হলে বিষয়টি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য ভালো হতো।”

অক্সফোর্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের এডমিন ফারহানা আহম্মেদ বলেন, “সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেতন হয়ত সরকার থেকে আসে। আর কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বেতন ওইভাবে আসে না। বাড়ি ভাড়া এবং শিক্ষকদের বেতন দিতে গিয়ে হয়ত কিন্ডারগার্টেন স্কুল বেশি নেয়।”

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “একটি নিবন্ধন নীতিমালা করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে গেজেট পাশ হয়েছে। অভিযান শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে। এরপর থেকে অতিরিক্ত কোনো বেতন আদায় তারা করতে পারবে না।” 

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর

Link copied!