• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হচ্ছেটা কী


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৭, ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হচ্ছেটা কী
গাজায় মানবিক বিপর্যয়। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে একদিকে চলছে আলোচনা আর অন্যদিকে রাফায় চলছে ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডব। রাফায় সোমবার (৬ মে) রাতভর হামলায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছে বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।

অন্যদিকে, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস রাজি হলেও ইসরায়েল বলছে তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। তবে দফায় দফায় এমন আলোচনার মধ্যেই রাফায় হামলা অব্যাহত রয়েছে।

হামাস বলেছে, তারা কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে যে ইসরায়েলের সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে তারা। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “গোটা বিষয়টিই এখন ইসরায়েলের হাতে।”

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের গৃহীত প্রস্তাবটি “ইসরায়েলের মৌলিক শর্তগুলো থেকে অনেক দূরে”। তবে আলোচনা অব্যাহত রাখার পক্ষে তাদের অবস্থান।

এর আগের দিন রাফাহ শহরের কিছু অংশ খালি করার জন্য ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে ইসরায়েল। তারপর তারা সেখানে বিমান হামলা চালায়। এতে ১২ জনের চেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে।

এদিকে, ইসরায়েলি বিমান হামলার পর রাফাহ শহরের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার আদেশকে একটি “বিপজ্জনক তীব্রতাবৃদ্ধি” বলে অভিহিত করেছেন একজন হামাস কর্মকর্তা।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভিত্তি হচ্ছে, যুদ্ধে এক সপ্তাহের বিরতি এবং কয়েক ডজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া, যারা হামাসের হাতে বন্দী। সোমবার সন্ধ্যায় হামাসের দেয়া একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহ কাতারের প্রধানমন্ত্রী এবং মিশরের গোয়েন্দা প্রধানকে “যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে তাদের প্রস্তাবের অনুমোদন” সম্পর্কে জানিয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের সঙ্গে ঘনিষ্ট একজন জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন যে, শর্ত পূরণ হলে হামাস “সারাজীবনের জন্য শত্রুতামূলক কার্যকলাপ” বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। এবারের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মূলত দুই ধাপের। প্রতিটি ধাপ ৪২ দিন স্থায়ী হবে।

প্রথম ধাপে জিম্মি করা নারী ইসরায়েলি যোদ্ধাদের মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে হবে, যাদের কেউ কেউ যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন। এই সময়ের মাঝে ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজায় থাকবে। 

কিন্তু যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ১১ দিনের মধ্যে ইসরায়েল গাজা ভূখণ্ডের কেন্দ্রে গড়ে তোলা তাদের সামরিক স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলা শুরু করবে। সালাহ-আল-দীন সড়ক থেকে সরে যাবে। এটি গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণের উপকূলীয় প্রধান সড়ক।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “যদিও হামাসের প্রস্তাবটি ইসরায়েলের মৌলিক শর্ত থেকে অনেক দূরে, তারপরও ইসরায়েলের জন্য যে যে শর্তে চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব, সেই মর্মে মধ্যস্থতাকারীদের একটি প্রতিনিধি দলকে পাঠাবে ইসরায়েল।” তবে একই সময়ে, রাফাহ অভিযান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, কাতার ও মিশরকে সঙ্গে নিয়ে চুক্তি করার চেষ্টা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মিলার আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে ইসরায়েলি জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ হচ্ছে জিম্মি চুক্তি। এটি ফিলিস্তিনি জনগণেরও সর্বোত্তম স্বার্থ। এটি অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতি আনবে। এটি গাজায় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির অনুমতি দেবে এবং তাই আমরা একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে যাচ্ছি।”

গেল বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণ অংশে হামলা চালিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা ও ২৫০ জনকে জিম্মি করার পর থেকে এই যুদ্ধ শুরু হয়। তবে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এ নিয়ে গাজায় ৩৪ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে।

গত নভেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি হয়েছিলো। এক সপ্তাহের সেই যুদ্ধবিরতিতে হামাস ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ২৪০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তির বিনিময়ে ১০৫ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। ইসরায়েল বলছে যে গাজায় ১২৮ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র: বিবিসি।

Link copied!