‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম, বন্ধু ভাইগ্য হইল না’ অথবা ‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, মইশখাল্যা পানর খিলি তারে বানাই খাবাইতাম’—বাংলার বিভিন্ন গানে পানের কথা আমরা শুনেছি। পান আমাদের দেশের একটি অতি জনপ্রিয় খাবার। নানী-দাদীদের প্রজন্ম থেকে বেরিয়ে এখন যুবাদেরও পান খেতে দেখা যায়। তবে মশলা, সুপারি, জর্দা ব্যবহার না করে পান খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আসুন জেনে নেই স্বাস্থ্য সমস্যায় পান পাতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, পান খেলে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগকেও প্রতিহত করা যায়
পানের ঔষধি গুণ
পান পাতা খাওয়ার ফলে যে রস উৎপাদন হয়, তা আমাদের দাঁত আর মাড়ি সুস্থ রাখে। এছাড়াও পান পাতার রস আমাদের মুখের ভেতরটা পরিষ্কার রাখে। এমনকি মুখের মধ্যে রক্তপাতও বন্ধ করে। পান বেটে তার রস এক কাপ হাল্কা গরম পানিতে মিশিয়ে রোজ সকালে তা দিয়ে গার্গল করুন। কয়েকদিনের মধ্যেই তফাত দেখতে পাবেন।
নাক থেকে রক্ত পড়া থামায়
অনেক সময় সান স্ট্রোক হওয়ার ফলে নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। এটা বন্ধ করতে একটা পান পাতা পাকিয়ে তা নাকের মধ্যে গুঁজে দিন। মাথা পেছনের দিকে হেলিয়ে রাখেতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। পান পাতা খুব তাড়াতাড়ি রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দিতে পারে।
কানের ব্যথা
পান পাতার আরও একটা বড় সুবিধা হল, এটা কানের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। কয়েক ফোঁটা পানের রস আর কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে কানের মধ্যে দিলে ব্যথা কমে যাবে। তবে এই ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন
ছোটখাটো কাটাছেড়ায় পান পাতা বেটে লাগিয়ে দিতে পারেন। এছাড়াও যাদের আর্থারাইটিস আছে, তাদের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে পান পাতা।
ডিওডোরেন্টের কাজ করে
গোসল করার পানিতে কিছুটা পান পাতার রস মিশিয়ে নিন। এই পানি দিয়ে গোসল করলে সারাদিন ফ্রেশ লাগবে। এছাড়াও ঘাম কম হবে। পান পাতা দিয়ে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে সেই পানি পান করলে ঘামের গন্ধ কমবে। এমনকি মহিলাদের মেনস্ট্রুয়েশন স্মেল ও কমবে।
প্রস্রাবে সাহায্য করে
যাদের কিডনির রোগ আছে, যাদের তাদের প্রস্রাব করতে কষ্ট হয়। এই কষ্ট কমাতে সাহায্য করে পান পাতা। শরীর থেকে দ্রুত পানি বের করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে পান পাতার।
ভ্যাজাইনাল হাইজিন ঠিক রাখে
ভ্যাজাইনাল বার্থের পর তাজা পান পাতা ভ্যাজাইনাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে। এছাড়া ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ বা ভ্যাজাইনাল ইচিংও সারিয়ে দেয়।
ত্বকের জন্য ভালো
খুব কম লোকেই জানেন, পানে যে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল প্রপার্টি আছে তা পিম্পল‚ অ্যাকনে সহজেই সারিয়ে তোলে। এছাড়াও বিভিন্ন স্কিন অ্যালার্জি‚ ফুসকুড়ি‚ কালো ছোপ‚ সান বার্ন সারিয়ে দেয়।
মাথা ব্যথা কমায়
গরমের কারণে মাথা ব্যথা করলে কপালে কয়েকটা পান পাতা রাখুন। পান পাতার রস লাগালে তাড়াতাড়ি মাথা ব্যথা কমে যায় |
অ্যান্টি ফাংগাল
শরীরের যে সব অংশে ফাংগাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা আছে‚ যেমন পায়ের আঙুল। সেই সব জায়গায় পান পাতার রস লাগান। কয়েকদিনের মধ্যে ইনফেকশন সেরে যাবে।
সর্দি কমায়
বুকে সর্দি জমে গেলে সরিষার তেল আর পান পাতা ভালো করে গরম করে বুকে লাগাতে হবে। ঠান্ডা লেগে সর্দি হলে পান পাতা‚ এলাচ‚ লবঙ্গ একসঙ্গে ফুটিয়ে গাঢ় করে খেতে হবে।
হজমশক্তি বাড়ায়
সাধারণত খাওয়ার পর পান খাওয়া হয়। এটা করা হয় কারণ পান হজম করতে সাহায্য করে। যাদের কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে তাদের জন্যেও উপকারী। পেট খারাপ হলে পেটে যে ব্যথা করে অনেকসময় তাও কমাতে সাহায্য করে |
মেটাবলিজম বাড়ায়
নিয়মিত পান খেলে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে। এর ফলে ব্লাড সার্কুলেশন বেড়ে যায়। যা বিভিন্ন প্রোটিন‚ ভিটামিন‚ মিনারেল অ্যাবজর্ব করতে সাহায্য করতে।
খিদে বাড়ায়
পেটের পিএইচ লেভেল ঠিক করতে সাহায্য করে পানের রস। এর ফলে পেটে বায়ু হয় না, এছাড়া পেট ফাঁপা কমায়। পান পাতা শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
ক্ষত নিরাময়ে
পান পাতায় আছে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল রাসায়নিক। তাই পান পাতা বেটে ক্ষতস্থানে দিলে দ্রুত ক্ষত নিরাময় হয়। পান পাতা ব্যবহার করলে সংক্রমণের ভয়ও থাকে না। পানের বেদনানাশক গুণ থাকায় ব্যথা হতে মুক্তি মেলে।