বর্তমান সময়ে লাইভ ওয়েটে কোরবানির পশু কেনার পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জীবিত অবস্থায় পশু যেটুকু ওজন বহন করছে, সেটি হিসাব করে তার মূল্য নির্ধারণ করার পদ্ধতির নামই হচ্ছে লাইভ ওয়েট। প্রতি কেজি ওজনের জন্য একটি নির্দিষ্ট টাকা ধরা হয়। গরুর ওজন যদি ৩০০ কেজি হয় এবং প্রতি কেজির দাম ধরা হয় ৪০০ টাকা, তাহলে গরুর দাম হবে ৩০০ × ৪০০ = ১,২০,০০০ টাকা। এভাবেই যেকোনো পশুর দাম নির্ধারণ করা হয়। ক্রেতাদের কাছে এই পদ্ধতি খুব অল্প সময়ে নির্ভরযোগ্যতাও পেয়েছে।
যারা নতুন তাদের এই বিষয়ে ধারণা কম থাকতে পারে। তাই লাইভ ওয়েটে পশু কেনার আগে কিছু বিষয় জেনে নিন।
ওজন পরিমাপের সঠিকতা যাচাই করুন
পশুর ওজন মাপা হবে ডিজিটাল স্কেলে বা মেকানিক্যাল ওয়েট মেশিনে। পশু কেনার আগে নিশ্চিত হোন, যন্ত্রটি ক্যালিব্রেটেড ও সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ওজনে কারচুপি করতে পারে। তাই নিজে উপস্থিত থেকে ওজন মেপে নিন।
প্রতি কেজি মূল্যের যৌক্তিকতা যাচাই করুন
স্থানীয় হাট বা বাজারে প্রতি কেজির গড় মূল্য যাচাই করে তুলনা করুন। খুব কম দাম হলে তা ভালোভাবে দেখে নিন। পশু অসুস্থ কিনা কিংবা ওজনের গড়মিল হচ্ছি কিনা তা যাচাই করুন।
পশুর স্বাস্থ্যের অবস্থা খেয়াল করুন
ওজন দেখেই কিনে নিবেন না। চর্বিযুক্ত, দুর্বল বা পানি খাইয়ে পশুর ওজন বাড়ানো হতে পারে। তাই যাচাই করে কিনুন। পশুর চোখ, মুখ ও দাঁত ঠিক আছে কিনা দেখুন। চলাফেরা স্বাভাবিক কিনা দেখে নিন। অতিরিক্ত গা চকচকে বা ফোলাভাব থাকলে তা কিনবেন না। পশুর লেজ নাড়া, খাওয়া ও পানির প্রতি আগ্রহ রয়েছে কিনা খেয়াল করুন।
বয়স যাচাই করুন
কোরবানির জন্য গরুর ন্যূনতম বয়স ২ বছর এবং ছাগলের ১ বছর হওয়া আবশ্যক। দাঁতের গঠন দেখে বয়সের ধারণা নিন। না দেখেই পশু কিনবেন না।
পানি খাওয়ানোর কারচুপি
বাজারে অনেক সময় গরুকে কৃত্রিমভাবে পানি খাইয়ে বা লবণ খাইয়ে ওজন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে গরু সাময়িক ভারি দেখালেও কোরবানির সময় দেখা যায়, মাংসের পরিমাণ কম। বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
চুক্তিপত্র ও রসিদ সংরক্ষণ করুন
বিশেষ করে প্রতিষ্ঠান বা খামার থেকে পশু কিনলে অবশ্যই লিখিত চুক্তি রাখুন। পশুর ওজন, প্রতি কেজির দাম, পশুর বয়স ও জাত, রসিদ ও টাকা দেওয়ার প্রমাণ এবং যদি পশু অসুস্থ প্রমাণিত হয়, ফেরতের বা ক্ষতিপূরণের শর্তাবলী লিখিত চুক্তির মাধ্যমে উল্লেখ করুন।
কেনার সময় সময়সীমা ও ডেলিভারি বুঝে নিন
অনেকে খামার থেকে গরু বুকিং দিয়ে ঈদের ১–২ দিন আগে ডেলিভারি নেন। তাই কবে গরু ডেলিভারি দেবে তা জেনে নিন। গরুর পরিচর্যা কীভাবে হবে তাও বোঝার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে চুক্তিতে এই শর্ত লিখে নিন।
মনে রাখবেন, লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে পশু কেনা আধুনিক এবং স্বচ্ছ একটি ব্যবস্থা হলেও সচেতনতা ও সতর্কতা না থাকলে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।