আলু আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি সবজি। ভাজি, ভর্তা, ঝাল বা ঝোল সব রকম রান্নাতেই আলুর উপস্থিতি অনিবার্য। সহজলভ্যতা, স্বাদ ও নানা রেসিপিতে ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় আলু অনেকের নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নেয়। কিন্তু সব উপকারী খাবারেরই মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণে ক্ষতি হয়। আলুও তার ব্যতিক্রম নয়। নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া গেলে এটি অনেক ক্ষেত্রে উপকারী ল। আর অতিরিক্ত বা ভুল পদ্ধতিতে খেলে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।
কেন আলু খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে?
উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স: রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়
আলুতে রয়েছে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI), অর্থাৎ এটি খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকর। অতিরিক্ত খেলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকি বাড়ে। স্থূলতা ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতে পারে। বিশেষ করে ভাজা আলু বা আলুর চিপস জাতীয় খাবার GI আরও বাড়িয়ে দেয়।
ওজন বৃদ্ধির কারণ
আলুতে রয়েছে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি। এটি শরীরে সহজেই চর্বিতে রূপান্তরিত হয়। বিশেষ করে যখন তা ভাজি বা প্রসেসড করে খাওয়া হয়।নিয়মিত বেশি পরিমাণে আলু খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। পেটে চর্বি জমা হতে পারে। শরীরের মেটাবলিজম কমে যেতে পারে।
অতিরিক্ত আলু খেলে হজমে সমস্যা
আলুতে থাকা স্টার্চ কিছু মানুষের হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। যা থেকে গ্যাস, অম্বল বা পেট ফাঁপার সমস্যা হয়। অতিরিক্ত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। পাকস্থলীতে ভারীভাব বা অস্বস্তি তৈরি হয়। বিশেষ করে রাতে আলু খেলে এই সমস্যা বেশি হয়।
প্রসেসড আলু বেশি ক্ষতিকর
আজকাল অনেকেই আলুর চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পটেটো স্টিক ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। যা ট্রান্স ফ্যাট ও উচ্চমাত্রার লবণযুক্ত হয়। তাই এটি হার্টের জন্য ক্ষতিকর, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বাড়ায়।এইসব প্রক্রিয়াজাত খাবার নিয়মিত খেলে কিডনি ও লিভারেরও ক্ষতি হতে পারে।
গ্রিন আলু বা অঙ্কুরিত আলু বিষাক্ত
যদি আলুতে সবুজাভ রং দেখা যায় অথবা অঙ্কুর বের হয়ে আসে, তবে তা খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এতে সোলানিন নামক বিষাক্ত উপাদান থাকে, যা বমি, ডায়ারিয়া ও মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।শিশুদের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক। স্নায়ুতন্ত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে
ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা
আলুতে অক্সালেট নামক উপাদান থাকে, যা শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয়। ফলে হাড়ের গঠন দুর্বল হতে পারে। কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই কিডনি পাথরের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য অতিরিক্ত আলু খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
যেভাবে খেলে কম ক্ষতি হবে
আলু সিদ্ধ করে খেলে GI তুলনামূলক কম থাকে। ভাজা বা চিপস এড়িয়ে চলুন। সবজির সঙ্গে মিশিয়ে রান্না করুন। দৈনিক সীমিত পরিমাণ (১০০–১৫০ গ্রাম) আলু খাবেন।