অটোফ্যাজি হলো মানবদেহের কোষে ঘটে চলা একটি স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে কোষ নিজের পুরনো, অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিগ্রস্ত উপাদানগুলোকে ভেঙে ফেলে এবং সেগুলোকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য উপাদানে রূপান্তর করে।
শব্দটির অর্থই হলো "self-eating" বা "নিজেকে খাওয়া"—এটি গ্রিক ভাষা থেকে এসেছে: "auto" (নিজে) এবং "phagy" (খাওয়া)।
অটোফ্যাজি কীভাবে কাজ করে?
অটোফ্যাজি মূলত তিনটি ধাপে কাজ করে_
সনাক্তকরণ
কোষের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গাণু (যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া), প্রোটিন বা ভাইরাস-বাকটেরিয়ার মতো অবাঞ্ছিত উপাদান শনাক্ত করা হয়।
আবরণ তৈরি
এই অবাঞ্ছিত উপাদানগুলোকে ঘিরে একটি বিশেষ ঝিল্লি তৈরি হয়, যাকে বলে অটোফ্যাগোসোম।
বিলীন ও পুনঃব্যবহার
অটোফ্যাগোসোমটি লাইসোসোম নামক কোষের এক অঙ্গাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তার এনজাইম দিয়ে উপাদানগুলো ভেঙে ফেলে। ভেঙে যাওয়া উপাদানগুলো পরে কোষ নতুন করে ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদনের কাজে লাগায়।
অটোফ্যাজির উপকারিতা
কোষ পরিষ্কার রাখে। পুরনো বা ক্ষতিগ্রস্ত উপাদান সরিয়ে কোষকে সুস্থ রাখে।
শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। অনাহারে বা উপবাসে দেহ নিজেই নিজের ভেতর থেকে শক্তির উৎস খুঁজে নেয় — এটি অটোফ্যাজির মাধ্যমে সম্ভব হয়।
বার্ধক্য বিলম্বিত করে। কোষের ময়লা সরিয়ে বয়সজনিত ক্ষয় কমায়।
রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। কিছু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সহায়তা করে।
অটোফ্যাজি কখন বেশি সক্রিয় হয়
উপবাস বা দীর্ঘক্ষণ না খেলে, ব্যায়াম করলে, নিয়ন্ত্রিত ক্যালোরি গ্রহণে, অল্প মাত্রায় স্ট্রেস থাকলে (যেমন ঠান্ডা বা গরম পরিবেশে থাকা) অটোফ্যাজি বেশি সক্রিয় হয়।
অটোফ্যাজি না করলে যা হয়
অটোফ্যাজি না করলে কোষের ভেতরে বিষাক্ত উপাদান জমতে থাকে, বার্ধক্য দ্রুত ঘটে, আলঝেইমার, পারকিনসনসের মতো স্নায়ুরোগ হয়, ডায়াবেটিস বা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, অটোফ্যাজি হলো দেহের নিজস্ব পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও রিসাইক্লিং ব্যবস্থা। এটি কোষকে পরিষ্কার, কর্মক্ষম ও দীর্ঘস্থায়ী রাখে। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস, উপবাস ও শরীরচর্চার মাধ্যমে অটোফ্যাজি করলে দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।