কাঠমান্ডুর আদালত

উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ইউএস-বাংলাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৫, ১১:৫৯ এএম
উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ইউএস-বাংলাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ
ছবি : সংগৃহীত

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, বিমা কোম্পানি থেকে প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার ডলার করে যেসব ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাইরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসকে মোট ২৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার (নেপালি মুদ্রায় যা প্রায় ৩৭ কোটি ৮৬ লাখ রুপি) পরিশোধ করতে হবে। এই অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৭টি পরিবারকে।


২০১৮ সালের ১২ মার্চ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। ৭৬ আসনের বোয়িং বিমানে আগুন ধরে যায় এবং এতে করে ৫১ জন যাত্রী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ২২ জন নেপালি, ২৮ জন বাংলাদেশি ও একজন চীনা নাগরিক।

এক ঐতিহাসিক রায়ে কাঠমান্ডু জেলা আদালত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসকে নির্দেশ দিয়েছে, ২০১৮ সালের মার্চে নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীদের পরিবারকে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ওই দুর্ঘটনায় ইউএস-বাংলা ফ্লাইট ২১১-এ থাকা ৭১ আরোহীর মধ্যে ৫১ জন নিহত হন।

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, বিমা কোম্পানি থেকে প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার ডলার করে যেসব ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাইরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসকে মোট ২৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার (নেপালি মুদ্রায় যা প্রায় ৩৭ কোটি ৮৬ লাখ রুপি) পরিশোধ করতে হবে। এই অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৭টি পরিবারকে।

নেপালের সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেপালের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার এভাবে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে সক্ষম হলো। দেশটিতে গত সাত দশকে ৭০টি বিমান দুর্ঘটনায় মোট ৯৬৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যার বেশির ভাগের পেছনে ছিল গুরুতর অবহেলা।

তবুও এর আগে কোনো বিমান সংস্থাকে এইভাবে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নজির ছিল না—কাঠমান্ডু জেলা আদালতের এই রায় সেই প্রেক্ষাপট পাল্টে দিয়েছে।

তবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস চাইলে এখনো উচ্চ আদালত ও সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবে। তারপরও রোববার দেওয়া এই রায়কে এক গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসেবে দেখা হচ্ছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে কোনো বিমান সংস্থা যদি ইচ্ছাকৃত অবহেলা বা মারাত্মক গাফিলতির মাধ্যমে দুর্ঘটনার কারণ হয়, তাহলে যাত্রী বা তাদের পরিবার আদালতের শরণাপন্ন হয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন। এমনকি সীমাহীন অঙ্কের ক্ষতিপূরণ চাওয়ারও সুযোগ থাকবে।

ইউএস-বাংলার মুখপাত্র মো. কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমাদের ল ফার্ম নিয়ম অনুযায়ী উচ্চ আদালতে আপিল করবে।’

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, কাঠমান্ডু জেলা আদালতের তথ্য কর্মকর্তা দীপক কুমার শ্রেষ্ঠ জানান, রায়ের পূর্ণাঙ্গ লিখিত অনুলিপি পেতে কিছুটা সময় লাগবে।

এই মামলার বিচারক ছিলেন দিবাকর ভট্ট। নিহত ১৬ যাত্রীর পরিবার ও একজন জীবিত যাত্রীর পক্ষে এই মামলা করা হয়েছিল।

২০১৮ সালের ১২ মার্চ ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের নির্ধারিত ফ্লাইটটি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ভুল পথে চলে যায়। অবতরণের সময় ৭৬ আসনের বোম্বার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৫১ জন প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে ২২ জন ছিলেন নেপালের নাগরিক, ২৮ জন বাংলাদেশি এবং একজন চীনা নাগরিক।

এটি এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি এয়ারলাইনসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। একই সঙ্গে বোম্বার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ মডেলের উড়োজাহাজের ইতিহাসেও এটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।

সাত বছর ধরে চলা মামলার রায়ে আদালত জানিয়েছে, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স একটি উড্ডয়নের উপযুক্ত বিমান পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে 'গুরুতর গাফিলতি' করেছে।

আদালতের নথি অনুযায়ী, এমবিবিএসের সাত শিক্ষার্থী—আশনা শাক্য, আঞ্জিলা শ্রেষ্ঠ, মিলি মহার্জন, নিগা মহার্জন, প্রিন্সি ধামি, সঞ্জয় মহার্জন ও শ্রেয়া ঝাঁ—তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৮২ ডলার (প্রায় ২ কোটি ৩৪ লাখ রুপি) করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২০১৯ সালের ৩১ জুলাই এসব পরিবার 'অবহেলার কারণে মৃত্যু'র অভিযোগে মামলা করেন এবং সীমাহীন ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এই ক্ষতিপূরণের বাইরে প্রত্যেক পরিবার ২০ হাজার ডলার করে বিমা অর্থও পাওয়ার কথা রয়েছে।

একই রায়ে এমবিবিএসের আরও ছয় শিক্ষার্থী—শ্বেতা থাপা, সঞ্জয় পোড়েল, পূর্ণিমা লোহানি, আঞ্জিলা বরাল, চারু বরাল ও সরুনা শ্রেষ্ঠা—তাদের পরিবারও বিমার অর্থ বাদে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪১৮ ডলার (প্রায় ২ কোটি ৪৭ লাখ রুপি) করে ক্ষতিপূরণ পাবেন।

এ ছাড়া, হিমালয় এয়ারলাইনসের কর্মী প্রসন্ন পাণ্ডের পরিবারকে ১ লাখ ৭ হাজার ১৭০ ডলার (প্রায় ১ কোটি ৪৭ লাখ রুপি), নিউরোসার্জন ডা. বল কৃষ্ণ থাপার পরিবারকে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৪৮ ডলার (প্রায় ৩ কোটি ৬৭ লাখ রুপি) এবং ৬৭ বছর বয়সী নার্স জিয়ানি কুমারী গুরুঙ্গের পরিবারকে ৪৫ হাজার ৩০১ ডলার (প্রায় ৬২ লাখ রুপি) ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

গুরুতর আহত হয়েও বেঁচে যাওয়া যাত্রী ডা. সামিরা ব্যঞ্জনকরের জন্য ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ২৯০ ডলার (প্রায় ৬১ লাখ রুপি)।

প্রসঙ্গত, এসব ক্ষতিপূরণের সঙ্গে ২০ হাজার ডলারের সাধারণ বিমা অর্থ অন্তর্ভুক্ত নয়।

দুর্ঘটনার সময় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমা কভারেজ ছিল মোট ১০ কোটি ৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে বিমানটির বিমা ছিল ৭০ লাখ ডলার এবং যাত্রীদের জন্য কভারেজ ছিল ১০ কোটি ডলার, যা বহন করেছিল সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও সাধারণ বীমা করপোরেশন। সূত্র: টিবিএস

Link copied!