অন্যের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম হলো কথা। কিন্তু সবকিছুতেই যেমন পরিমিতিবোধ জরুরি, তেমনি কথা বলার ক্ষেত্রেও প্রয়োজন সংযম। অতিরিক্ত কথা বলা বিরক্তির কারণ হতে পারে। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যাও ডেকে আনতে পারে। অন্যদিকে, প্রয়োজনের বেশি কথা না বলার অভ্যাস জীবনের বিভিন্ন দিকেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। জানেন কি, কথা কম বললে কী হয়?
মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি পায়
কথা কম বললে মনের মধ্যে একধরনের প্রশান্তি তৈরি হয়। বেশি কথা বললে অনেক সময় অহেতুক বিতর্ক, ভুল ব্যাখ্যা বা কষ্টদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হয়। যা মনের শান্তি নষ্ট করে। সংযতভাবে কথা বলার ফলে মন ধীরে ধীরে শান্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ হয়।
শ্রোতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে
যে ব্যক্তি কম কথা বলেন, তিনি সাধারণত ভালো শ্রোতা। এই গুণটি মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা তৈরি করে। যারা অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন, তাদের প্রতি সবাই স্বচ্ছন্দ বোধ করে। এতে সম্পর্ক দৃঢ় হয় এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ে।
অপ্রয়োজনীয় ভুল থেকে রক্ষা পাওয়া যায়
অনেক সময় না ভেবে কোনো কথা বললে তা অপমানজনক বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আবার বেশি কথা বলার সময় গোপন তথ্যও অনিচ্ছায় ফাঁস হতে পারে। কথা কম বললে এসব ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। ব্যক্তি নিজের সম্মান ও গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারে।
চিন্তার গভীরতা বাড়ে
কথা কম বললে নিজের চিন্তা ও উপলব্ধির দিকে মনোযোগ দেওয়ার সময় পাওয়া যায়। চিন্তাকে সংহত করা ও আত্মবিশ্লেষণ করার অভ্যাস গড়ে ওঠে। যা মানসিক পরিপক্বতা বাড়ায়। আত্মউন্নয়নের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বুদ্ধিদীপ্ত ও কার্যকর কথা বলা শেখা যায়
যখন কেউ প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেন না, তখন তিনি প্রতিটি বাক্যকে গুরুত্ব দেন। এতে তার কথা সুসংহত, যুক্তিপূর্ণ ও প্রভাবশালী হয়। এ ধরনের ব্যক্তির প্রতি অন্যরাও গুরুত্ব দেন।
শক্তি ও সময় সাশ্রয় হয়
বেশি কথা বলা শুধু সময়ই নষ্ট করে না, বরং মানসিক শক্তিও খরচ করে। কেউ যখন অল্প কথায় মূল বক্তব্য প্রকাশ করতে পারেন, তখন সময় ও শক্তি দুটো-ই বাঁচে। যা কাজের দক্ষতা বাড়ায় এবং জীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ দেয়।
সমস্যা এড়ানো যায়
অনেক সময় সামাজিক বা পারিবারিক পরিবেশে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য বা মজা ভুলভাবে গ্রহণ করা হয়। যা সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে। কথা কম বললে এমন ঝুঁকি কমে যায় এবং মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সহজ হয়।
আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ তৈরি হয়
প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ধর্ম ও আধ্যাত্মিক চর্চায় ‘মৌনতা’কে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন হিসেবে দেখা হয়েছে। ধ্যান, প্রার্থনা ও আত্মশুদ্ধির জন্য মৌনতা এক কার্যকর উপায়। কম কথা বলার অভ্যাস আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মজিজ্ঞাসার সুযোগ দেয়।
তাই নিজেকে গড়তে চাইলে এখন থেকেই অপ্রয়োজনীয় কথা কম বলার চর্চা করুন।