• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

কানের যত্নে যা করবেন, যা করবেন না


ঝুমকি বসু
প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৩, ০৭:৩৩ পিএম
কানের যত্নে যা করবেন, যা করবেন না

শ্রবণশক্তি ভালো যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে। আমাদের পঞ্চইন্দ্রীয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে শ্রবণশক্তি। কান দিয়ে আমরা শুনি অথচ গুরুত্ব দেই কম। আমরা মনে করি বর্তমানে ভালো শুনতে পাচ্ছি বলে কোনো সমস্যাই হচ্ছে না বা হবে না। কিন্তু শব্দদূষণজনিত বেশ কিছু কাজ আমরা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি সেগুলোর কিছু দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং এর ফলে আমাদের অন্তঃকর্ণের বিশেষ এক ধরনের কোষ ধ্বংস হয়ে শ্রবণের স্থায়ীভাবে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন ডা. মো. আব্দুল হাফিজ জানাচ্ছেন বিস্তারিত।

কানে কম শোনার কারণ
বহিঃকর্ণের প্রদাহ যেমন কানে ময়লা জমে যাওয়া, কানে খৈল বা ওয়াক্সের সঙ্গে ধুলাবালি জমা হয়ে ইয়ার ক্যানেল বন্ধ হয়ে যাওয়া, ভাইরাল ইনফেকশন ইত্যাদি। মধ্যকর্ণের সমস্যাগুলো হচ্ছে– কান পাকা রোগ, পর্দায় ছিদ্র, মধ্যকর্ণ পানি, পুঁজ বা রক্ত জমে যাওয়া, হাড়ের জোড়ায় সমস্যা, ফুট প্লেইট শক্ত হয়ে যাওয়া (অটোস্ক্লেরোসিস)।

অন্তঃকর্ণের মধ্যে জন্মগত বধিরতা, কানে যে কোনো টিউমার বৃদ্ধি পেতে থাকলে, কানের অভ্যন্তরে হিয়ারিং সেল নষ্ট হয়ে গেলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। এ ছাড়া কিছু কিছু ওষুধ যেগুলো অটোটক্সিক ড্রাগ হিসেবে চিহ্নিত যেমন– এমাইনোগ্লাইকোসাইড, জেন্টামাইসিন ফ্রুসেমাইড (ল্যাসিক্স), অ্যান্টিক্যান্সার, অ্যান্টিটিউবারকুলার ড্রাগ অথবা অ্যাসপিরিন বেশি মাত্রায় দীর্ঘদিন গ্রহণ করা হলে।
শ্রবণশক্তি হ্রাস ঠেকাতে বা কানে কম শোনা রোধ করতে  যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এ জন্য যা করতে পারি:—
গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের যত্ন নেওয়া এবং সময়মতো রুবেলা, বসন্ত, হাম ইত্যাদির টিকাগুলো দেওয়া। এ সময় অটোটক্সিক বা শ্রবণে ক্ষতিকারক ওষুধ গ্রহণে বিরত থাকা। সব টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা।

শিশুর বেড়ে ওঠার অন্যতম প্রধান উপাদান শুনতে পাওয়া। শিশুর কথা বলা, সামাজিক যোগাযোগ এবং শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। শিশুর দাঁত ওঠা, হাঁটাচলার পাশাপাশি শব্দের প্রতি সাড়া দিচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখা উচিত। সাধারণত জন্মের পর তিন মাস বয়সে আপনার শিশু ঘাড় ঘোরাতে পারবে এবং আপনার কথার উত্তরে হাসতে পারবে। ৬—১২ মাসের মধ্যে আপনার শিশু ভাঙা ভাঙাভাবে কথা বলতে শুরু করবে। ১৫—১৮ মাসের মধ্যে আপনার শিশু সহজ কয়েকটি কথা বলতে পারবে। এগুলো যদি না হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে পিতামাতা একটু চিন্তিত হয়ে পড়তেই পারেন। এ ছাড়া কানে কম শুনলে শিশুও হতাশ, মনমরা হয়ে থাকবে। যদি স্বাভাবিক নিয়মে এগুলো বাচ্চার বেড়ে ওঠার মধ্যে দেখা না যায়, তখন অবশ্যই দ্রুত নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় উচ্চ ভলিউমে গান শোনা শ্রবণশক্তি কমিয়ে দেয়; তরুণ প্রজন্মের জন্য যা অশনিসংকেত। তাই অবশ্যই হেডফোনে গান শোনার সময় বিরতি দিয়ে এবং ভলিউম কমিয়ে অর্থাৎ ডিভাইস ভলিউম ৬০% পর্যন্ত রেখে গান শোনা উচিত।

একনাগাড়ে জোরালো শব্দের কারণে অন্তঃকর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। তাই  উচ্চ শব্দের কলকারখানার শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কাজের সময় ইয়ার প্লাগ ব্যবহার এবং নিয়মিত স্ক্রিনিংসহ  বিশেষ নজর দেওয়া সময়ের দাবি। গাড়িচালকদের অযথা হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকা উচিত। অপ্রয়োজনীয় শব্দদূষণরোধে প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা উচিত।

কানে কম শোনার যন্ত্র বা হিয়ারিং এইড সহজলভ্য করা এবং এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কানের শ্রবণশক্তি পরীক্ষা বা অডিওলজি টেস্টের ব্যবস্থা সহজলভ্য করার মাধ্যমে শ্রবণশক্তি রোধ সম্ভব। কারও ইতোমধ্যে শুনতে পাওয়ার কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা জানতে অডিওগ্রাম নামে পরিচিত হেয়ারিং টেস্ট সম্পর্কে জনমনে ধারণা দিতে হবে। কারণ যারা শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন, তারা প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারেন।

যদি হঠাৎ করেই কেউ কানে কম শোনার সমস্যায় আক্রান্ত হন তাহলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। যত দ্রুত Sudden Hearing loss এর রোগী তাঁর চিকিৎসকের কাছে যাবেন, তত দ্রুত আরোগ্য লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

কানে কম শোনার সঠিক কারণ নির্ণয় এবং সমস্যা প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা বাড়ানোর কোনে বিকল্প নেই। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে শ্রবণত্রুটি ও বধিরতা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

Link copied!