• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?


রুমি প্রভা
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩, ১১:২৮ এএম
হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?

বিশ্বে এখন অন্যতম আতঙ্ক ও মৃত্যুর একক কারণ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে হৃদ্‌রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ৩১ শতাংশই মারা যায় হৃদ্‌রোগজনিত কারণে। বাংলাদেশেও মৃত্যুর বড় কারণ হৃদ্‌রোগ। হৃৎপিণ্ড বা হার্ট আমাদের শরীরে রক্ত সরবরাহের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোজাহিদুল হক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, শারীরিক সমস্যা ছাড়াও আমরা নিজেদের কারণেও অনেক সময় হার্টের সমস্যার সম্মুখিন হই। যা চাইলেই আমরা অনায়াসে রোধ করতে পারি। চলুন জেনে নেওয়া যাক হার্ট অ্যাটার্ক সম্পর্কে কিছু তথ্য।

সংবাদ প্রকাশ : হার্ট  কী?

ডা. মোজাহিদুল হক : হার্ট হলো বুকের খাঁচায় সযত্নে রক্ষিত ছোট্ট পেশিবহুল অঙ্গ, যেটা পাম্পের মতো কাজ করে পুরো শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে চলেছে অবিরত। প্রচলিত ধারণা হলো, বুকের বাঁ দিকে হৃৎপিণ্ড অবস্থিত, যেটা আসলে সঠিক তথ্য নয়। হৃৎপিণ্ড থাকে বুকের মধ্যপ্রকোষ্ঠে দুটি ফুসফুসের মাঝখানে। তবে এটি বাঁ দিকে তুলনায় স্ফীত।

সংবাদ প্রকাশ : হার্ট অ্যাটাক কী?

ডা. মোজাহিদুল হক : করোনারি আার্টারি নামে হৃৎপিণ্ডের গায়ে দুটি ছোট ধমনি থাকে। এরাই হৃৎপিণ্ডে পুষ্টির জোগান দেয়। কোনো কারণে এই করোনারি আর্টারিতে যদি ব্লক সৃষ্টি হয়, তাহলে যে এলাকা ওই আর্টারি বা ধমনির রক্তের পুষ্টি নিয়ে চলে সে জায়গার হৃদপেশি কাজ করে না। তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়।

সংবাদ প্রকাশ :  হার্ট অ্যাটাকের কারণগুলো কী?
ডা. মোজাহিদুল হক : বিভিন্ন কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত জীবযাপন। মাত্রাতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ, ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (এলডিএল) মাত্রা বেড়ে যাওয়া, মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান কারণ।

সংবাদ প্রকাশ :  হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো কী?
ডা. মোজাহিদুল হক : হার্ট অ্যাটাক করলে রোগী বুকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হবে, ঘামতে থাকবে, বমিভাব অথবা বমি হবে, চোখে ঝাপসা দেখা যাবে, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হবে, বুক ধড়ফড় করবে ইত্যাদি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ।

সংবাদ প্রকাশ : আচমকা কারও হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেলে কী করতে হবে?
ডা. মোজাহিদুল হক : হার্ট অ্যাটাক হয়েছে ধরতে পারলে রোগীকে তাৎক্ষণিক এসপিরিন বা ওয়ারফেরিন-জাতীয় ওষুধ খাইয়ে দেওয়া ভালো, এতে রক্ত জমাট বাঁধা বন্ধ হবে। জিহ্বার নিচে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে দিতে পারলে খুবই ভালো। রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে।

সংবাদ প্রকাশ :  হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায় কী?
ডা. মোজাহিদুল হক : রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা, দুশ্চিন্তা না করা, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি, চর্বিজাতীয় খাবার কম খাওয়া, অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ, প্রতিদিন হাঁটা এবং ব্যয়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা ইত্যাদি অনুসরণ করে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব।

৩০-৪০ বছর বয়সের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বিশ্বব্যাপী দ্রুত বাড়ছে। তাই বয়স কম বলে নিশ্চিন্তে বসে থাকার সযোগ নেই। জন্মগত হৃদ্‌রোগ, রক্তনালির সংকোচন বা রক্তনালির রোগ, জিনগত ত্রুটি ইত্যাদি কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

ধূমপান ত্যাগ করা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুড পরিহার করা, যথাসম্ভব দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপমুক্ত থাকা ইত্যাদি অভ্যাসের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব। এসব ব্যাপারে সচেতন হলেই হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ সম্ভব। এ ব্যাপারে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে দেশের মানুষকে হার্ট অ্যাটাকের ব্যাপারে সচেতন করা যেতে পারে।

হার্টের রক্তনালির রক্ত চলাচল পুনঃপ্রতিস্থাপন করাই এর প্রধান চিকিৎসা। যত দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করা যায়, রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তত বেশি হয়। এ ছাড়া আধুনিক চিকিৎসা হলো অ্যানজিওগ্রামের মাধ্যমে হার্টের ব্লক শনাক্ত করে দ্রুত তা অপসারণ করা এবং রক্ত চলাচল পুনঃপ্রতিস্থাপন করা।

যেকোনো হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে হার্ট অ্যাটাকের প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিতে হবে। সেই সঙ্গে দ্রুত ইকোকার্ডিওগ্রাফি, ইসিজির মতো পরীক্ষাগুলো করাতে হবে।

এসব পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকরা হার্টের ধমনিতে রক্ত জমাট বেঁধেছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হন। যদি হার্টের ধমনিতে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকরা দ্রুত অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা থ্রম্বোলাইসিস করে রক্ত বের করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।

এ সময় থেকে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টাকে গোল্ডেন আওয়ার ধরে নেন চিকিৎসকরা। কারণ হিসেবে আমরা বলি হার্ট অ্যাটাকের সময় থেকে প্রথম এক ঘণ্টা রোগীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, হার্ট অ্যাটাকের পর হৃদ্‌যন্ত্রের পেশিগুলো এক ঘণ্টা সচল থাকে।

Link copied!