• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২, ০৯ মুহররম ১৪৪৬

আশুরার দিন যা করা যাবে না


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৫, ১০:৫৮ এএম
আশুরার দিন যা করা যাবে না
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। এই মাসের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা পালিত হয়। যা মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। এ দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ঘটনা ঘটেছে। তাই এই দিনটি বিশেষ আমলের সঙ্গে পালন করতে হয়। রাসুল (সা.) এই দিনে রোজা রেখেছেন এবং মুসলমানদের তা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে কোরআন পাঠ, আল্লাহর জিকির, গরিবদের দানসহ বেশ কিছু আমলের কথা হাদিসে বলা রয়েছে।

তবে আশুরা নিয়ে অনেক বিকৃত বিশ্বাস, কুসংস্কার এবং বিদআতমূলক কাজ বিভিন্ন সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। যা ইসলামিক শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আশুরার দিন মুসলমানদের কী করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে কিংবা কী করা যাবে না, তা জানা অত্যন্ত জরুরি।

মাতম বা শোক পালন করা
আশুরার দিনে ইমাম হোসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতের স্মরণে অনেক জায়গায় লোকজন বুক চাপড়ানো, মাথা ফাটানো, দা বা শিকল দিয়ে শরীর রক্তাক্ত করা, কান্নাকাটি ও শোক মিছিল করে থাকেন। ইসলামে এ ধরনের মাতম করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। রাসুল (সা.) বলেছেন:“আমরা তোমাদের মধ্যকার সেইসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত নই যারা গাল কাটে, কাপড় ছেঁড়ে এবং জাহেলিয়াতের চিৎকার তোলে।”(সহিহ বুখারি ও মুসলিম) মুসলিম হিসেবে  শহীদের জন্য দোয়া করা, তাদের আদর্শ অনুসরণ করা উচিত। কোনো শোক প্রদর্শনের নামে শরীর ক্ষত-বিক্ষত করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আশুরাকে শুধুই শোকের দিন হিসেবে দেখা
আশুরা কেবল একটি ‘শোক দিবস’ নয়। বরং এ দিনে নূহ (আ.)-এর নৌকার অবতরণ, মূসা (আ.) ও বনি ইসরাইলের ফেরআউন থেকে মুক্তি, ইব্রাহিম (আ.)-এর আগুন থেকে নিরাপদে থাকা—ইত্যাদি আনন্দঘন ঘটনাও ঘটেছে। তাই শুধুমাত্র শোক ও বিষণ্নতায় ডুবে না থেকে, এ দিনটি আত্মশুদ্ধি, ইবাদত ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে পালন করা উচিত।

নিজ শরীরকে আঘাত করা, রক্তপাত ঘটানো
কেউ কেউ আশুরার দিনে নিজেদের কষ্ট দেওয়াকে ‘শহীদদের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ’ মনে করেন। তারা দা, লাঠি, শিকল দিয়ে শরীরে আঘাত করেন, রক্তপাত ঘটান—যা একদিকে শরীরের ক্ষতি করে, অন্যদিকে ইসলামবিরোধী। শরীয়ত অনুযায়ী নিজের শরীরকে ইচ্ছাকৃত ক্ষতিগ্রস্ত করা হারাম।

আশুরায় বিশেষ খাবারের আয়োজন
কিছু মানুষ আশুরার দিন বিশেষভাবে খিচুড়ি, হালুয়া বা পায়েস রান্না করেন এবং তা ‘সাওয়াবের কাজ’ মনে করেন। যদিও পরিবারের সদস্যদের খাবার দেওয়া ভালো কাজ, তবে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি, বিশেষ রান্না, কিংবা ‘বিশেষ বরকতের খাবার’ ভাবা বিদআত। রাসুল (সা.) বা সাহাবিরা আশুরায় এ ধরনের খাবার আয়োজন করেননি।

অমূলক কুসংস্কার বিশ্বাস করা
আশুরা উপলক্ষে সমাজে কিছু ভুল বিশ্বাস চালু রয়েছে, যেমন: এ দিন যে যা খায়, সারা বছর তা পায়, আশুরার দিনে গোসল করলে রোগ দূর হয়, আশুরার দিনে নতুন জামা পরা বা চুল কাটলে বরকত আসে। এইসব ধারণার পক্ষে কোরআন-হাদিসে কোনো প্রমাণ নেই। ইসলাম কুসংস্কার নয়, যুক্তি ও হেদায়াতনির্ভর ধর্ম।

আশুরার রোজা শুধু একদিন রাখা
রাসুল (সা.) ইহুদিদের অনুসরণ না করার জন্য আশুরার আগে বা পরে একদিন বাড়িয়ে মোট দুই দিন রোজা রাখতে বলেছেন। তাই কেবল ১০ মহররম রোজা না রেখে ৯-১০ বা ১০-১১ মহররম রোজা রাখা উত্তম। রাসুল (সা.) বলেন:“আশুরার রোজা রাখো এবং তার সঙ্গে আরেক দিন যোগ করো—ইহুদিদের বিরোধিতা করো।”(মুসনাদ আহমদ)

ইসলামবিরোধী অনুষ্ঠান
কিছু দেশে আশুরা উপলক্ষে নাটক, গান, তাজিয়া মিছিল, ঢোল-নাগাড়ার আয়োজন করা হয়, যেগুলো ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংযমবোধের পরিপন্থী। তাজিয়া বানিয়ে গায়েবি শোক পালন করা ইসলাম অনুমোদন করে না।

Link copied!