ফুসফুসের রোগগুলোর মধ্যে মারাত্মক হলো অ্যাজমা বা হাঁপানি। যেকোনো বয়সের মানুষেরই এই রোগ হতে পারে। হাঁপানি বা অ্যাজমা শ্বাসনালীর দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত একটি রোগ। যার কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। যখন শ্বাসনালীতে প্রদাহ হয় বা ফুলে ওঠে তখন ফুসফুস খুব সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যার ফলে হাঁপানি নামক দীর্ঘমেয়াদী রোগটি হয়। চলুন জেনে নিই হাঁপানি হওয়ার কারণ, এর লক্ষণ ও ঘরোয়াভাবে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
হাঁপানির কারণ
- শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে হাঁপানি হয়ে থাকে।
- অ্যালার্জিজনিত কারণ, যেমন পশুর লোম, অতিরিক্ত ধুলো-বালির কারণে হয়।
- বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহারে অনেকের হাঁপানি দেখা দেয়।
- পরিবেশে রাসায়নিক পদার্থ, নির্দিষ্ট স্প্রে, সিগারেটের ধোঁয়া ইত্যাদির কারণেই অনেক ক্ষেত্রে হাঁপানি হয়ে থাকে।
- অতিরিক্ত শারীরিক কার্যকলাপ বা ব্যায়াম।
- খাবারে রাসায়নিক পদার্থের কারণেও হয়ে থাকে।
- বংশগত কারণেও হতে পারে। বংশে কারও এ রোগ থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের যে কারও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
হাঁপানির লক্ষণ
- দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট
- রাতে কাশি হলে বাড়তে থাকে।
- বুকে আঁটসাঁট ভাব বা চাপ অনুভূত হওয়া।
হাঁপানি কমানোর ঘরোয়া উপায়
হাঁপানি রোগ সম্পূর্ণভাবে নিরাময়ের উপায় এখনো চিকিৎসাবিজ্ঞানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়ে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ল্যাভেন্ডার তেল
ল্যাভেন্ডার তেল শ্বাসনালীর প্রদাহকে বাধা দেয় এবং শ্লেষ্মা উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। এটি শ্বাসনালী দিয়ে বাতাস চলাচল প্রশমিত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। একটি বাটিতে গরম পানি নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল দিয়ে ৫-১০ মিনিটের জন্য বাষ্পটি থেকে শ্বাস নিন।
টি ট্রি অয়েল
টি ট্রি অয়েলের এক্সপেকটোর্যান্ট এবং ডিকনজেস্ট্যান্ট বৈশিষ্ট্য শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং অতিরিক্ত শ্লেষ্মা দূর করতে কার্যকরি। এই তেলে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা শ্বাসনালীতে প্রদাহ কমায় এবং শ্বাসযন্ত্রের যেকোনো সংক্রমণ দূর করে। একটি ছোট কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে কাপড়টিতে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল দিন। এরপর কাপড়টি থেকে ঘ্রাণ নিন।
মধু
শ্বাসকষ্টের জন্য মধু হলো প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে প্রাকৃতিক প্রতিকার। এটিতে অ্যালকোহল এবং অন্যান্য তেল রয়েছে যা হাঁপানির লক্ষণ কমাতে সহায়তা করে। এটি গলা থেকে কফ অপসারণ করে। প্রতিদিন তিনবার এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এছাড়া ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক চা চামচ মধুর সঙ্গে অল্প দারচিনির গুঁড়া মিশিয়ে খেয়ে নিন।
হলুদ
হলুদের অন্যতম প্রধান উপাদান কারকিউমিন। এই ফাইটোকেমিক্যাল হাঁপানি কমাতে অ্যাড-অন থেরাপি হিসেবে খুবই উপকারী। এটি শরীরের প্রদাহ রোধ করে এবং শ্বাসনালীর প্রদাহকে উপশম করে। এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খান। এই মিশ্রণটি ১০-১৪ দিনের জন্য দিনে তিনবার করে পান করুন।
কফি
কফি পান হাঁপানির চিকিৎসার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো এটি দ্রুত শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে এবং শ্বাস নিতে সাহায্য করে। কফিতে থাকা ক্যাফেইন ব্রঙ্কোডাইলেটরি হিসেবে কাজ করে এবং সংকুচিত শ্বাসনালী খুলে দেয়। হাঁপানি থেকে মুক্তি পেতে তাৎক্ষণিক প্রতিকার হিসেবে গরম কফি পান করুন।
আদা
প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত একটি ভেষজ আদা। যা শ্বাসযন্ত্রের নালীকে সুস্থ রাখে। আদা শ্বাসনালীর পেশীকে শিথিল করে এবং ক্যালসিয়াম গ্রহণকে নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে সংকোচন উপশম হয়। আদা কুঁচি করে কেটে উষ্ণ গরম পানিতে দিন। তারপর পানি ছেঁকে নিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে গরম থাকা অবস্থায় এই ভেষজ পান করুন।
রসুন
রসুন ফুসফুসের ব্লক দূর করতে সাহায্য করে এবং এটি শ্বাসনালীর প্রদাহও হ্রাস করে। এক কাপ দুধের মধ্যে রসুন ও লবঙ্গ ফুটিয়ে পান করুন। এটি হাঁপানির লক্ষণ কমাতে সহায়ক।