লিভার বা যকৃত শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্ত পরিষ্কার করা, পুষ্টি সংরক্ষণ, হরমোন উৎপাদন ও শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। কখনো কখনো এই লিভারে টিউমার বা গাঁট দেখা দিতে পারে। যা অনেক সময় ক্যানসারের রূপ নিতে পারে। যথাসময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে জীবনহানিও ঘটতে পারে।
লিভার টিউমার কী?
টিউমার অর্থ হচ্ছে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। বিশেষজ্ঞরা জানান, লিভারে টিউমার দুই রকমের হতে পারে_
সৌম্য টিউমার
এই ধরনের টিউমার সাধারণত ক্যানসারে রূপ নেয় না। সৌম্য লিভার টিউমার সাধারণত নিরীহ প্রকৃতির এবং ধীরে বাড়ে। যেমন_
হেমাঙ্গিওমা: সবচেয়ে সাধারণ লিভার টিউমার। এটি রক্তনালির কোষ থেকে তৈরি হয়।
হেপাটোচেলুলার অ্যাডেনোমা: এটি হরমোনের কারণে বাড়ে, বিশেষ করে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণকারী নারীদের মাঝে দেখা যায়। মাঝে মাঝে এই ধরণের টিউমার ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।
ফোকাল নোডুলার হাইপারপ্লাসিয়া: সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না এবং খুব কমই চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
ক্যানসারজাত লিভার টিউমার বা ম্যালিগন্যান্ট টিউমার-
এই ধরনের টিউমার লিভার ক্যানসারের লক্ষণ বহন করে এবং চিকিৎসা না করলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
প্রাথমিক লিভার ক্যানসার হলো হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা। এটি লিভারের সবচেয়ে সাধারণ ক্যানসার। সাধারণত যাদের হেপাটাইটিস বি/সি, লিভার সিরোসিস, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, বা ফ্যাটি লিভার ডিজিজ রয়েছে, তাদের ঝুঁকি বেশি।
মেটাস্টেটিক লিভার ক্যানসার অনেক সময় কোলন, ফুসফুস, স্তন বা অন্য অঙ্গের ক্যানসার ছড়িয়ে গিয়ে লিভারে টিউমার তৈরি করে। এটি মূলত অন্য অঙ্গের ক্যানসারের "মেটাস্টেসিস" বা ছড়িয়ে পড়া রূপ।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, সব টিউমার ক্যানসার হয় না। তবে কিছু নির্দিষ্ট টিউমার ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। যেমন_
হেপাটোচেলুলার অ্যাডেনোমা বড় হলে বা হরমোনজনিত কারণে HCC-তে পরিণত হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী লিভার সিরোসিস বা হেপাটাইটিস থাকলে, কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থেকে ধীরে ধীরে ক্যানসার তৈরি হতে পারে।
এ কারণে লিভারে কোনো টিউমার ধরা পড়লে তা বায়োপসি, সিটি স্ক্যান, এমআরআই বা ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা জরুরি।
লিভার টিউমারের কিছু লক্ষণ ক্যানসারের ইঙ্গিত দিতে পারে। পেটের ডান পাশে চাপ বা ব্যথা থাকা, ওজন হ্রাস ও ক্ষুধামান্দ্য, পেটে পানি জমা (অ্যাসাইটিস), ত্বক ও চোখে হলুদ ভাব (জন্ডিস) এবং দুর্বলতা ও সহজে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া। এই লক্ষণগুলো থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।