• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সঙ্গীর নাক ডাকার শব্দে ঘুমাতে পারছেন না? জেনে নিন উপায়


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২৩, ০৫:২৩ পিএম
সঙ্গীর নাক ডাকার শব্দে ঘুমাতে পারছেন না? জেনে নিন উপায়
নাক ডাকা থেকে রেহাই পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে । ছবি : সংগৃহীত

নাক ডাকা পরিচিত একটি বিষয়। অনেকেই ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন। আর তার সঙ্গে যিনি থাকেন তাকে পড়তে হয় সমস্যায়। কারণ যিনি নাক ডাকছেন তিনি তো টের পাচ্ছেন না, কিন্তু সঙ্গে যিনি আছেন তার ঘুমের  অনেক সময় সমস্যাও তৈরি হয়।  

যুক্তরাষ্ট্রে বিবাহবিচ্ছেদের প্রধান তিনটি কারণের একটি হলো নাক ডাকা। এছাড়া দম্পতিদের আলাদা বিছানায় ঘুমানোর পেছনে অন্যতম কারণও এটি। সত্যিই তো, হঠাৎ বিকট শব্দে গভীর ঘুম ভেঙে যাওয়া এবং প্রতিদিনই এরকম হতে থাকা কী মানা যায়? বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপ বলছে, সঙ্গীর নাক ডাকার কারণে গড়ে ১ ঘণ্টা করে ঘুম কমে যেতে পারে। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বলা হয়। বিষয়টাকে অবহেলা করা তো একদমই কাজের কথা নয়। নাক ডাকার নেপথ্যে থাকতে পারে নাকের মধ্যে কোনো সমস্যা, অতিরিক্ত ওজন, সর্দির সমস্যা, বা অন্য কিছু। 

একেকজনের শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে এই নাক ডাকা পাশেরজন নাক ডাকলেও নিজের ঘুম ঠিক রাখার উপায় জেনে রাখা দরকার। তাই দেখে নিন নাক ডাকা থেকে মুক্তি পেতে কোন উপায় অবলম্বন করবেন, জেনে নেওয়া যাক। 


হোয়াইট নয়েজ মেশিন
হোয়াইট নয়েজ মেশিন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই নাক ডাকার সমস্যাতেই কাজে লাগে। এ যন্ত্র মূলত মৃদু শব্দ উৎপাদন করে। ফলে সঙ্গীর তীব্র নাক ডাকার শব্দের বদলে এ যন্ত্রের শব্দই কানে পৌঁছায়। 

তবে মনে রাখতে হবে, নাক ডাকার শব্দে অভ্যস্ত হলেও তা নিরাপদ নয়। এটি আপনার শ্রবণশক্তিতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে। তাই তুলনামূলকভাবে এই পদ্ধতি নিরাপদ। এটি ব্যবহারেও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। এই যন্ত্রের মৃদু শব্দও আপনার শ্রবণশক্তি কমিয়ে দিতে পারে। যন্ত্রের অবিরত শব্দ উৎপাদন শ্রবণতন্ত্রকে বিশ্রাম নিতে দেয় না। 

ফলে শ্রবণতন্ত্র অন্যান্য প্রয়োজনীয় ক্রিয়াকলাপ সম্পন্ন করতে পারে না। যন্ত্রের শব্দ যদি বেশি তীব্র হয়ে পড়ে, তাহলে তা আরও ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। তাই চেষ্টা করবেন শব্দ কমিয়ে ও বিরতি দিয়ে এটি ব্যবহার করার।

ইয়ার প্লাগ
হোয়াইট নয়েজ মেশিনের ঠিক উল্টো কাজটা করে ইয়ার প্লাগ। অর্থাৎ বাইরের যাবতীয় শব্দ শোষণ করে নেয় এটি। ফলে শ্রোতার কানে বাইরের কোনও শব্দ যায় না বললে চলে। ইয়ার প্লাগ ফোম, সিলিকনসহ নানারকম উপাদানে তৈরি হতে পারে। 

আপনার জন্য কোনটি আরামদায়ক, তা বুঝে নিতে হবে। আপনার কর্ণকুহরের প্রশস্ততা কতটুকু বা আপনি অ্যালার্জিতে কতটা সংবেদনশীল—এসব বিষয় ইয়ার প্লাগ ব্যবহারের আগে সেদিকে খেয়াল রাখুন। 

তবে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করে ঘুমাতে গেলে পরিবারে যদি শিশু থাকে তাহলে তার কান্না বা ডাক থেকে শুরু করে জরুরি অন্যান্য শব্দ শোনা নাও যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

বিশেষ তরঙ্গের নেপথ্য শব্দ
এ ক্ষেত্রে ঘরে ছোট আকারের সাউন্ড বক্স বা স্পিকার রাখতে হয়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে সাউন্ড বক্সে চালাতে হয় নির্দিষ্ট তরঙ্গের শব্দ। এতে ঘুম দ্রুত আসে ও গভীর হয়। শব্দের বিভিন্ন রকম তীব্রতাকে সহজে চেনার জন্য কয়েকটি আলাদা আলাদা রঙের নাম দিয়ে তা সংজ্ঞায়িত করা হয়। 

যেমন গোলাপি রঙের শব্দ, বাদামি ও নীল রঙের শব্দ। গোলাপি রঙের শব্দ ঘুম আনতে বেশ উপকারী। অন্যদিকে নীল রঙের শব্দ খুবই বিরক্তিকর। তাই নিজের সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্য বুঝে নির্দিষ্ট রঙের শব্দ সাউন্ড বক্সে চালিয়ে ঘুমাতে পারেন। এ ছাড়া প্রাকৃতিক বিভিন্ন শব্দ, যেমন সমুদ্রের ঢেউ, ঝরনা কিংবা শাস্ত্রীয় সংগীত ইত্যাদি চালিয়ে দেখতে পারেন।

ক্যাম্পিং আউট করা
শিশুরা সাধারণত বাবা-মায়ের সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতে অভ্যস্ত। বড় হলে ধীরে ধীরে তাদের বিছানা আলাদা করে দিতে হয়। এ সময় ঘুম না আসা পর্যন্ত মা কিংবা বাবাকে শিশুর পাশে দিতে হয়। এরপর শিশু ঘুমিয়ে গেলে তাকে একা রেখে মা–বাবা নিজেদের মতো ঘুমিয়ে পড়েন। 

এই পদ্ধতিকে বলে ‘ক্যাম্পিং আউট’। আপনার নাক ডাকা সঙ্গীর বেলায়ও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। তিনি যদি রাতে একা ঘুমাতে ভয় পান বা একাকীত্ব অনুভব করেন, তাহলে এভাবে তার পাশে থাকুন এবং একসময় নিজের মতো করে ঘুমাতে যান।

তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, শুধুমাত্র নিজের কথা চিন্তা করে সঙ্গী নাক ডাকার কারণে দূরত্ব তৈরি করা কোনোভাবেই উচিত নয়। কারণ একেকজনের আচরণ ও অভ্যাস আলাদা আলাদা হওয়াটাই স্বাভাবিক। 

তাই, আপনার ঘুমের সমস্যা হলেও তা সহজে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। বিরক্ত হয়ে সঙ্গীর বিছানা আলাদা করে দেওয়া খুব অমানবিক। এটি সম্পর্কের জন্যও খারাপ বয়ে আনে। এর জন্য প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে যান। সঙ্গী হিসেবে এটি আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

Link copied!