• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দেশে দেশে ছড়াল ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৪, ০২:০১ পিএম
দেশে দেশে ছড়াল ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: সিএনএন

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শুরু করা বিক্ষোভ ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনে লন্ডন, প্যারিস ও রোম থেকে সিডনি, টোকিও, বৈরুতসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণীপেশার মানুষও এসব বিক্ষোভে অংশ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলের হামলা অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। একইসঙ্গে ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করে, এমন সব কোম্পানির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিও তোলা হচ্ছে। সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেল বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন অবধি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সাড়ে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করে মার্কিন সরকার। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ছাড়িয়ে ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন। বিশ্বেজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এসব বিক্ষোভকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্বনেতারা।

বলা হচ্ছে, এসব বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশগুলোর তরুণদের মধ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা প্রকাশিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীদের হটাতে যে দমন–পীড়ন চালানো হচ্ছে, প্রতিবাদে শামিল হতে সে বিষয়টিও শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করছে বলে জানাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।

কানাডা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। মন্ট্রিলের উপকণ্ঠে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাঁবু টাঙিয়ে বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভ্যাঙ্কুভারের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণাও দেয়া হচ্ছে।

যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকেই। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সেই বিক্ষোভ ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। ক্যাম্পাসে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। নিউক্যাসল, লিডস, ব্রিস্টল ও ওয়ারউইক শহরের শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ করছেন।

ফ্রান্স
প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রান্সের সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এটা ছাড়াও এপ্রিলের শেষ দিকে প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। ফ্রান্সের আরও অনেক ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে, দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থান নেওয়া ২৩টি স্থান থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।


অস্ট্রেলিয়া
ব্রিসবেনে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকিউ) বিক্ষোভের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে ফিলিস্তিনপন্থীদের ১০০ মিটার দূরত্বে ইসরায়েল–সমর্থক বিক্ষোভকারীরাও অবস্থান নিয়েছেন। দেশটিতে অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীরা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় ৫০টি তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। শুক্রবার সেখানে পাল্টা বিক্ষোভের আয়োজন করে ইহুদি গোষ্ঠীগুলো। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে।

ভারত
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের খ্যাতনামা নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়েও (জেএনইউ)। ২৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটির। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

এসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও মেক্সিকোর ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি এবং লেবাননের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত,  লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটি, জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, ইতালির রোমের স্যাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

Link copied!