• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

‘পেটে ভাত না থাকলে চুরি করে নদীতে নামতে হবে’


রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২২, ০৭:২০ পিএম
‘পেটে ভাত না থাকলে চুরি করে নদীতে নামতে হবে’

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার অধিকাংশ জেলে পরিবার চলে পদ্মা নদীতে মাছ ধরে। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে গত ৮ অক্টোবর থেকে পদ্মা নদীতেও মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ সময় সরকারি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন রাজশাহীর চারঘাটের জেলেরা।

মঙ্গলবার (১১অক্টোবর) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলেদের মুখে হাসি নেই, সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ। অনেকেই নদীর পাড়ে বসে রয়েছেন। কেউ কেউ তাদের ছেঁড়া জাল মেরামত করছেন। কেউ নদী থেকে নৌকা ডাঙায় তুলেছেন মেরামতের জন্য।

জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের কষ্টের সীমা থাকে না। ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা অন্য মাছ ধরতেও নদীতে নামতে পারেন না। অনেক জেলে পরিবার না খেয়ে দিন পার করছেন। এ সময় সরকার থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা এখনো পাননি তারা। নগদ অর্থসহ দ্রুত সময়ের মধ্যে খাদ্য সহায়তার দাবি জানান জেলেরা।

চারঘাট উপজেলা মৎস্য অফিস জানায়, এ উপজেলায় নিবন্ধিত মোট জেলে রয়েছেন এক হাজার ১৪৯ জন। এরমধ্যে ইলিশ শিকারি জেলে রয়েছেন ৬৬৩ জন। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা যেন নদী থেকে ইলিশ শিকারে না যান এ জন্য গত বছর পৌরসভায় ১৯৮ জন, ইউসুফপুর ইউনিয়নের ১২৪ জন, সরদহ ইউনিয়নের ৮০ জন ও সদর ইউনিয়নে ১৬৮ জনসহ মোট ৫৭০ জন নিবন্ধিত জেলেকে ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে, এ বছর জেলেদের সহায়তার পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চারঘাট উপজেলা সদরের জেলে তাজমুল হক বলেন, “২২ দিনের মাছ ধরা বন্ধ দিয়েছে ভালো কথা। আমরা নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরতে নদীতে যাব না। তাহলে খাব কী? সরকার প্রতি বছর জেলেদের ২০ কেজি করে চাল দেয়। যারা জেলে না, তারা চাল পায়। আমি ১৫ বছর ধরে মাছ ধরি নদী থেকে, আজ পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাইনি। পেটে ভাত না থাকলে নদীতে তো চুরি করে হলেও নামতে হবে। সরকার ২২ দিনের খাবারের ব্যবস্থা করে দিলে মাছ ধরতে যাব না।”

রাওথা এলাকার রফিকুল ইসলাম নামের জেলে বলেন, “৩০ বছরের বেশি সময় ধরে নদী থেকে মাছ শিকার করছি। সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাই। মাছ ধরা বন্ধের সময় সরকার থেকে ২০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও আমরা পাই ১০-১৫ কেজি। তা দিয়ে ৭ দিনের বেশি চলে না। আরও বেশি চাল দেওয়ার পাশাপাশি কাঁচাবাজার কেনার জন্য নগদ টাকা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি বলেন, “প্রতিটি জেলে পরিবারেই সদস্য সংখ্যা বেশি। চালের বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ানো উচিত। ২০ কেজি চালে তাদের নিষেধাজ্ঞার অর্ধেক সময়ও চলবে না। এছাড়া ইলিশ শিকারি সব জেলে যেন চাল বরাদ্দ পায় সেটাও মৎস্য বিভাগকে নিশ্চিত করতে হবে।”

চারঘাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়ালিউল্লাহ মোল্লাহ বলেন, “নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা যেন নদীতে না নামেন তার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মৎস্য বিভাগের মোবাইল টিম নদীতে অভিযানে থাকবে।”

খাদ্য সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, “এরই মধ্যে ইলিশ শিকারি সব জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই জেলেদের জন্য বরাদ্দ খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। বরাদ্দের পরিমাণ ২০ কেজি থেকে বাড়িয়ে ২৫ কেজি করার প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তালিকা দিয়েছি আমরা।”

Link copied!