• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বিশ্বকাপের পর টিকে থাকাই দায় অভিবাসী শ্রমিকদের!


পার্থ প্রতীম রায়
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২২, ১১:২০ পিএম
বিশ্বকাপের পর টিকে থাকাই দায় অভিবাসী শ্রমিকদের!

২০১০ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পেয়েছিল কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি আগে কখনও এতো বড় আয়োজন না করায় চলেছে নির্মাণযজ্ঞ। নির্ধারিত সময়ে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকেই অভিবাসী শ্রমিকদের কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কিত শ্রমিকরা। বিশ্বকাপ শেষ হলে অনেক অভিবাসী শ্রমিকদের চাকরি হারিয়ে হয়তো খালি হাতেই ফিরতে হবে। তাই বিশ্বকাপ ফুটবলের চেয়ে নিজেদের ভবিষ্যত নিয়েই বেশি চিন্তিত দেশটিতে কাজ করা শ্রমিকরা।

কাতারজুড়ে এখন চলছে উৎসবের আমেজ। নানা দেশ-মহাদেশের মানুষজন এখন অবস্থান করছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে। অবশ্য এর আগে থেকেই দেশটিতে ছিল বিদেশি নাগরিকদের আধিক্য। তাদের বেশিরভাগই অবশ্য অভিবাসী শ্রমিক। বিশ্বকাপ চলাকালীন তারাও আছেন দেশটিতে। কাজ করছেন নানা ক্ষেত্রে। বিশ্বকাপ শেষে তাদের ভাগ্যে কি আছে, সেটা এখনও অজানা।

কাতারের বিভিন্ন ফ্যানজোনে এই বিষয়গুলো সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন নানা দেশের শ্রমিকরা। তাদের বেশিরভাগই নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত। এমনকি দেশটিতে কাজ করে বড় অঙ্কের অর্থ জমিয়ে নিজ দেশে নিয়ে যাওয়ার অবস্থাতেও নেই তারা।

বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচেই অভিবাসী শ্রমিকদের জায়গা হয়নি স্টেডিয়ামে। যাদের রক্ত-ঘাম জল করা পরিশ্রমে কাতার আয়োজন করছে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ তারা সবাই খেলা উপভোগ করেন ফ্যান জোনে। শুধু তাই নয়, সবগুলো ম্যাচ উপভোগের কোনো সুযোগও তারা পাচ্ছেন না। কাজ শেষে তবেই সুযোগ মিলছে তাদের। যেখানে পুরো কাতারজুড়ে সর্বক্ষেত্রেই চলছে একরকম ছুটির আমেজ। সেখানে অভিবাসী শ্রমিকদের করতে হচ্ছে কাজ।

রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন অভিবাসী শ্রমিক ওয়াম্বাকা আইজ্যাক। উগান্ডার নাগরিক আইজ্যাক বলেন, “যারা বিশ্বকাপ দেখতে আসছেন, তারা সবাই ফেরত যাবেন। আমাদের এখানে থাকতে হবে। কাজ করতে হবে, আবারও নিজেদের কাজে ফিরব। তবে জানি না বিশ্বকাপের পর কী হবে।”

কেনিয়া থেকে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিবাসী শ্রমিক নির্মাণ কাজের সঙ্গে ছিলেন। লুসাইল স্টেডিয়াম ও আল থুমামা স্টেডিয়ামে করেছেন কাজ। এখন বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে।

কাতারে কী ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা নিয়ে পুরোপুরি কথা না বললেও বিষয়টি যে কঠিন ছিল, তা তিনি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “এটা জটিল বিষয়। এখানে আমরা অতিরিক্ত গরমে কাজ করেছি। সব সময় অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে।”

বিশ্বকাপের পর তিনিও শঙ্কিত নিজের ভবিষ্যত নিয়ে। বলেন, “জানি না বিশ্বকাপের পর কী হবে।” নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় এই শ্রমিকরা বিশ্বকাপ ফাইনাল দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই হয়ে পড়ছেন শঙ্কিত। কারণ, এরপরেই কাতারজুড়ে শুরু হতে পারে অভিবাসী শ্রমিক কমানোর নীতি।

এদিকে কাতারের রাজধানী দোহায় গাড়ি চালক হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশি শ্রমিক রহিম। প্রায় সাড়ে তিন বছর থেকে সেখানে অবস্থান করছেন। এর মাঝে একটি বারের জন্যও আসতে পারেননি দেশে।

কাতার ছাড়তেও পারছেন না নিজের পরিবারের জন্য। কারণ, এখনো জমাতে কোনো অর্থ। যা দিয়ে দেশে ফিরে কিছু করতে পারবেন। অথচ, প্রবাস জীবনে বছরের প্রতিটা দিনই কাজ করে যাচ্ছেন।

রহিম বলেন, “ আমি সপ্তাহের সাতদিনই কাজ করি। প্রথমে গাড়ির জন্য আমাকে টাকা দিতে হয়। কারণ, গাড়ি আমার নিজের না। এছাড়াও আমাকে থাকা-খাওয়ার খরচও দিতে হয়। এরপর যা বাকি থাকে, সেটা পরিবারকে দেশে পাঠাতে হয়।”

করোনার সময় জমা থাকা সব অর্থ শেষ হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানান রহিম। তিনি বলেন, “করোনা মহামারির সময় কোনো কাজ ছিল না। হাতে জমানো সব অর্থই খরচ করতে হয়েছে। সাড়ে তিন বছর ধরে পরিবারকে দেখতে পারছি না। আমি যদি দেশে ফিরি তাহলে আর কোনো কাজই করতে পারব না।”

দেশে ফিরতে না পারায় নিজের স্ত্রী ও মেয়েকে কাতারে নিয়ে আসতে চান রহিম। কিন্তু নিজের পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় সেটাও করতে পারছেন না তিনি। ফলে পরিবারকে এখনও দেশে রাখতে হচ্ছে তার।

পরিবারকে কাতারে নিয়ে যেতে চাইলেও রহিম কাতারে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে মোটেও নির্ভার নন। অন্য সবার মতো বিশ্বকাপের পর কাতার সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা জানার অপেক্ষায় আছেন রহিমও। কঠোর নিয়ম হলে সম্বল হারিয়ে কাতারে পাড়ি জমানো এই শ্রমিকরা হয়তো দেশে ফেরার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

Link copied!