• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

‘বসন্ত এসে গেছে’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩, ১১:৪৫ এএম
‘বসন্ত এসে গেছে’

আজ বসন্ত। চার বছর ধরে ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে জুটি বেঁধে চলেছে পয়লা ফাল্গুন। শীতের রিক্ততা ভুলে আজ সবখানে বইছে ফাল্গুনী হাওয়া। দেহমনে দোলা জাগিয়ে ঋতু পরিক্রমায় প্রকৃতিতে এসেছে সজীবতা। গানে গানে বলতে হয়, “রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও, যাও গো এবার যাবার আগে“ অথবা “ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান।” এসব কথা যেন ঝিমিয়ে পড়া মনকে উসকে দিয়ে ভালোবাসার জোয়ারে ভেসে যাওয়ার তাগিদ দেয়।

ফাল্গুন বাংলা পঞ্জিকার একাদশ মাস। ফাল্গুনের প্রথম দিন ও বসন্তের প্রথম দিন। গ্রেগরিয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস পালিত হয়। অন্যদিকে ইতিহাসবিদদের মতে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত। এক খ্রিস্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ভ্যালেনটাইনস ডে করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেনটাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেনটাইনস ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবা করার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন কারার রীতি ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের সবখানে।
সারা বিশ্বের মতো এই ভালোবাসার দিনে তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীদের মাঝেও ভালোবাসা দিবস পালিত হয়ে আসছে। সেই সঙ্গে বাড়তি ভালোবাসা বাংলার পয়লা ফাল্গুন উদযাপন।

আজ উৎসবে মুখর হবে রাজধানী। এ উৎসবের ছোঁয়া লাগবে গ্রাম-বাংলার জনজীবনেও। মোবাইল ফোনে মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার পল্লবিত হয়ে উঠবে কিশোর বয়স। অনেকের মতে, ফেব্রুয়ারির এ সময়ে পাখিরা তাদের জুটি খুঁজে নিয়ে বাসা বাঁধে। গাছে গাছে ছড়িয়ে রয়েছে আমের মুকুল। জেগে উঠেছে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গমসহ কতশত নবযৌবনা ফুলের বৃক্ষরাজি।

এ দিনে প্রিয়জনের মধ্যে নিজের মনের মতো করে ভালবাসার প্রীতি উপহার আদান-প্রদান চলে। অন্যদিকে, অসংখ্য রমণী বাসন্তী রঙে নিজেদের রাঙিয়ে রাজপথ, পার্ক, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরসহ দেশজুড়ে মুখর থাকবেন প্রিয় মানুষের সঙ্গে। কারও আজ হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা।

চলমান অমর একুশে গ্রন্থমেলায়ও এর দোলা লাগবে। আজ মেলায় থাকবে বাসন্তী রঙের উৎসব। তরুণীদের পাশাপাশি তরুণদের পরতে দেখা যাবে বাসন্তী রংয়ের পাঞ্জাবি-ফতুয়া। লেখক-প্রকাশকদের মনেও দোলা দিয়ে যাবে ফাল্গুনী হাওয়া। আজ অনেক লেখকের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে দেখা যাবে।

ফাগুন এলে চওড়া হাসি দেখা যায় ফুলচাষি ও বিক্রেতাদের মুখে। কারণ, জাতীয় দিবসগুলো ছাড়া এইদিনটিতে সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয় তাদের।

বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ এ উৎসব আয়োজন করে আসছে। আজ সকাল ৭ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বকুলতলায় পালিত হয় বসন্তবরণ উৎসব। অনুষ্ঠান চলবে দিনব্যাপী। উত্তরা আজিমপুরের বঙ্গবন্ধু মঞ্চে চৌদ্দদিনব্যাপী চলবে বসন্ত উৎসব।

এছাড়া উৎসব চলবে, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে। শুধু ঢাকা নয় দেশজুড়েই ফাল্গুনী হাওয়া মাতাল করে যায় আপামর বাঙালিকে। এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিভিন্ন সংগঠন।

পাতার আড়ালে লুকনো কোকিলের কুহু ডাক ব্যাকুল করবে অনেক বিরহী অন্তর। কবি তাই বলেছেন, “সে কি আমায় নেবে চিনে/ এই নব ফাল্গুনের দিনে...।”

Link copied!